বন্ধু চার প্রকার, আপনি কোন ধরনের?

বন্ধু ছাড়া কি আর জীবন চলে?
ছবি: পেক্সেলস

‘দোস্ত, কী অবস্থা?’

উঠতে, বসতে, লগইন করতে, হোয়্যাটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে অসংখ্যবার আপনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। এ রকম প্রশ্ন ছাড়া তো অনেকের দিনই কাটে না। বন্ধু ছাড়া কি আর জীবন চলে? বন্ধুত্ব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, শক্তি আর অনুপ্রেনণার রসদ।

মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী, ‘দ্য আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স অব কানেকশন’ বইয়ের লেখক ক্যাসলে কিলাম গবেষণা করে বন্ধুত্বের চারটি ধরন খুঁজে বের করেছেন।

বন্ধুত্ব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
ছবি: পেক্সেলস

জেনে নেওয়া যাক বন্ধুত্বের রকমফের।

১. প্রজাপতি বা বাটারফ্লাই

বাটারফ্লাইরা প্রায় সব ধরনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেন। যেকোনো অনুষ্ঠানসহ নানা রকম সামাজিক ক্রিয়াকলাপে স্বাচ্ছন্দ্যেই তাঁরা হয়ে যেতে পারেন আয়োজক কিংবা অতিথি। সামাজিক অনুষ্ঠানে সদলবল যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা মুখিয়ে থাকেন। তাঁরা সাধারণত ব্যস্ত। কেননা, একটার পর একটা অনুষ্ঠানে তাঁরা কী করবেন, কী পরবেন, কীভাবে কী হবে এসব নিয়েই থাকেন।

২. ওয়ালফ্লাওয়ার

সময়কে কীভাবে, কী কাজে ব্যয় করবেন, তা নিয়ে বেশ হিসাবি হন ওয়ালফ্লাওয়াররা। স্বভাবে তাঁরা লাজুক হন। অন্তর্মুখী হওয়ায় তাঁরা বেছে বেছে সামাজিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নেন। যেসব কাজকে অর্থবহ মনে হয়, শুধু সেগুলোতেই অংশ নেন তাঁরা। বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রেও তাঁরা বেশ ‘সিলেকটিভ’।

বেশির ভাগ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার ফলে তাঁরা খুব একটা ব্যস্তও থাকেন না। কেবল সময় কাটানোর বন্ধুত্বে তাঁরা বিশ্বাসী নন। হয় ঠিকঠাক একটা–দুটো বন্ধু, নয়তো নিজেই নিজের সঙ্গ উপভোগ করেন তাঁরা।

ওয়ালফ্লাওয়ারদের একটা ভালো দিক হলো, তাঁরা বেশ মনোযোগী হন। অন্যের কথা শোনার সময় তাঁরা অনেক ধৈর্যশীল হয়ে থাকেন।

বন্ধু হিসেবে আপনি কেমন?
ছবি: পেক্সেলস

৩. জোনাকি বা ফায়ারফ্লাই

এ ধরনের বন্ধুরা ‘পরিমাণের চেয়ে মান’কে প্রাধান্য দেন বেশি। অর্থাৎ ওয়ালফ্লাওয়ারদের মতোই তাঁরা সামাজিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে হন। তবে তাঁরা ওয়ালফ্লাওয়ারদের মতো লাজুক স্বভাবের নন।

ফায়ারফ্লাইরা বেশ প্রাণবন্ত ও প্রফুল্ল। তাঁরা যখন যেখানে থাকেন, সেখানে আশপাশে থাকা বাকি মানুষদের সঙ্গে বেশ নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকেন। ফলে তাঁদের সময়গুলো বেশ ভালো কাটে, স্মরণীয় হয়।

সামাজিক ক্রিয়াকলাপের বেলায় খুঁতখুঁতে হলেও তাঁরা যখন যেখানে যান, সেখানে নিজের পুরোটা উজাড় করে দেন। অনেক দিন পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলেও সময়ের দূরত্ব সম্পর্কে আঁচ ফেলতে দেন না।

৪. চিরসবুজ বা এভারগ্রিন

এভারগ্রিনরা শুধু কাছের বন্ধুদের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এই মিথস্ক্রিয়া তাঁদের মানসিকভাবে ফুরফুরে রাখার জন্য বেশ দরকারি। তাঁরা চিরহরিৎ বৃক্ষের মতো সজীব থাকতে পারেন সারা বছরই। ওয়ালফ্লাওয়ারদের মতোই তাঁরাও সৃজনশীল, অর্থবহ কাজকে গুরুত্ব দেন। ফলে তাঁরা সব সময় নির্ভার ও উজ্জীবিত থাকতে পারেন। তাঁদের বন্ধুত্ব সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর।

কয়েক দিন দেখা না হলে, মন খুলে আড্ডা না দিলে, বেড়াতে না গেলে তাঁদের ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই ঠিকমতো মন বসে না। তাঁদের আশপাশের অনেক কিছু বদলে যায়, তবে বন্ধুত্বের ধরন ও দাবি একই রকম থাকে। দেখা যায়, ছোটবেলা, শিক্ষাজীবন বা তারুণ্য থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের বন্ধুত্ব টিকে যায়।


তবে একজন ব্যক্তির আবার ওপরের কয়েক ধরনের বন্ধুত্ব থাকতে পারে। মনে করুন, একজনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব চিরসবুজ। আবার আরেকজনের সঙ্গে বাটারফ্লাই! তবে জীবনে অন্তত একটা চিরসবুজ বন্ধুত্ব আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী।


সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস