বিয়ের পরও কেন প্রয়োজন ‘একলা সময়’ বা ‘মি টাইম’
জীবন যখন একই সুতায় বাঁধা পড়েছে, তখন একই সঙ্গে দুজন মানুষের পথ চলাটাই স্বাভাবিক। তবে সংসারের দায়দায়িত্ব ও দুই পরিবারের সবার প্রতি কর্তব্য পালন করতে করতে একসময় হাঁপিয়ে ওঠাটাও কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। দুজন মিলে যেমন জীবনের সব চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে, তেমনি একান্ত নিজস্ব কিছু সময়ও কিন্তু কাটাতে হবে। ব্যক্তিসত্তাকে একেবারে হারিয়ে যেতে দিলে কিন্তু মুশকিল। নিজস্বতা হারাতে থাকলে আপনাকে সহজেই গ্রাস করতে পারে হতাশা। সম্পর্কের ওপরেও পড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব। নিজের জন্য যদি কিছুই না রাখেন, জীবনসঙ্গী হিসেবে একে-অন্যের সব চাহিদা মেটানোটাও একসময় বড্ড চাপের হয়ে দাঁড়াবে।
পরিবার ও কর্মস্থলে আপনার সব দায়িত্ব-কর্তব্য সমাধান করে দম্পতি হিসেবে নিজেদের কিছুটা আলাদা সময় কাটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কমবেশি সব দম্পতিই। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে ভুলে গেলে চলবে না। নিজস্বতা বজায় রাখতে কিছু না কিছু অবশ্যই করুন। এ সময়টাই হলো আপনার একান্ত সময় বা ‘মি টাইম’, যা নিজের জন্য কিছু করার সময়। নিজের জন্য যদি ছোট্ট কিছুও করতে পারেন, তবেই তো জীবনভর আপনার সঙ্গীর পাশে থাকতে পারবেন, পালন করতে পারবেন পরিবারের প্রতি সব দায়িত্ব। বয়স বাড়ার পর এমনটাও মনে হবে না যে সবার জন্য এটা-ওটা করতে করতে জীবনটা নিঃশেষ হয়ে গেল।
কেমন হয় ‘মি টাইম’
আপনি কতটা সময় নিজের জন্য ব্যয় করতে পারছেন, তার ওপর নির্ভর করছে আপনি এ সময়ের মধ্যে কী করতে পারবেন। সময়টা আবার নির্ভর করে পরিবারের ওপর। এই যেমন সন্তানের বয়স খুব কম হলে একজন মা চাইলেই অনেকটা সময় নিজের মতো করে কাটিয়ে দিতে পারেন না। কিন্তু সন্তান একটু বড় হয়ে গেলে আবার দৃশ্যপট বদলে যায়। আবার বাড়িতে ভীষণ অসুস্থ কোনো বয়স্ক মানুষ থাকলেও তাঁর সেবায় আলাদা সময় দিতে হয়। একেক বাড়িতে তাই ‘মি টাইম’ হবে একেক রকম। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবার সহযোগিতাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
মি টাইমের আগে
একান্ত সময় কাটানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই মানসিকভাবে নিজেকে মুক্ত করতে হবে দায়িত্বের বেড়াজাল থেকে। ওই সময়ে আপনি বাড়িতে থাকলেও কিন্তু বাড়ির কাজে ‘অনুপস্থিত’। পরিবারের অন্যরা যদি সেই সময় নিজেদের মতো ব্যস্ত থাকেন, তাহলে ‘মি টাইম’ কাটাতে পারবেন অনায়াসেই। কিন্তু কোনো সদস্য আপনার দেখভালের ওপর নির্ভরশীল হলে সেই সময়টুকুতে তাঁদের দেখভাল করতে বিকল্প কারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই বিকল্প মানুষটা হতে পারেন আপনার জীবনসঙ্গীও। আপনি যখন একান্ত সময় কাটাবেন, তিনি আপনার দায়িত্বটুকু সামলে নেবেন। আবার তিনি যখন ‘মি টাইম’ কাটাবেন, তখন আপনিও তাঁর সেই সময়ের দায়িত্বটুকু সামলে নেবেন। তবেই না একে অন্যের পরিপূরক, সত্যিকারের জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠা যায়।
কীভাবে কাটাবেন মি টাইম
নিজের ভালো লাগার কাজে মনপ্রাণ উজাড় করে দিন এ সময়ে। বই পড়তে ভালোবাসেন? সব ভাবনা ভুলে বইয়ের পাতাতেই নাহয় ডুবে থাকুন। পছন্দের অডিও শুনতে পারেন। গাছপালার সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, বাড়ির কাছে কোনো পার্ক থাকলে সেখান থেকে হেঁটে আসতে পারেন একা একা। চুপটি করে বসেও থাকতে পারেন সেখানে গিয়ে। ধ্যান করতে পারেন। উষ্ণ পানিতে গোসল করতে পারেন তৃপ্তি নিয়ে। দুকলম লিখতেও পারেন মনের কথা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করে করে ‘মি টাইম’ কাটিয়ে না দেওয়াই ভালো। সময়টা বরং সৃজনশীল কাজে ব্যয় করুন। সব ক্লান্তি, একঘেয়েমি ঝেড়ে ফেলতে আপনি যা কিছু করতে চান, নিজের জন্য যা কিছু আপনার পছন্দ, একটু সুযোগ করে নিয়ে একান্ত এ সময়ে সেটাই করুন। ভালো থাকবেন। সম্পর্কগুলোও থাকবে সতেজ।
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট, দ্য হেলদি