শিশুর যে ছয় আচরণ স্বাভাবিক নয়
শিশুর কোনো আচরণকে আমরা নিছক দুষ্টুমি ভেবে উড়িয়ে দিই, কোনো আচরণে আমরা বিরক্ত হই। কখনো কখনো শিশুর আচরণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয় আমাদের। আদর, যত্ন, স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসায় ভরা যার শৈশব, সে একদিন নিশ্চয়ই একজন মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে। তবে শৈশবে শিশুর আচরণে যদি কোনো নেতিবাচক বিষয় দেখা যায়, তাহলে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে তার প্রতি আরেকটু মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান জানান শিশুর আচরণের এমন কিছু দিক।
ক্রমাগত কান্না বা বিরক্তি
শিশু সামান্য বিষয় নিয়ে কাঁদতে পারে, জেদ করতে পারে। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। তবে আপনি যদি লক্ষ করেন যে অধিকাংশ সময়ই সে বিরক্তি প্রকাশ করে বা কাঁদতে থাকে, তাহলে অবশ্যই এর পেছনের মূল কারণটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। শিশুর কিন্তু শারীরিক বা মানসিক অসুবিধাও থাকতে পারে, যার অন্যান্য উপসর্গ হয়তো আপনার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এমনও হতে পারে, আপনি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন না বলে সে আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য সব সময় কাঁদছে বা জেদ করছে।
প্রায়ই মিথ্যা বলা
শিশু অল্পস্বল্প ‘নিষ্পাপ মিথ্যা’ বলতেই পারে। কিন্তু প্রায়ই মিথ্যা বলাটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। ভেবে দেখুন, শিশুকে অতিরিক্ত শাসন করা হচ্ছে কি না, যা থেকে বাঁচতে সে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। মিথ্যার অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে।
অন্যের জিনিস নেওয়ার অত্যধিক প্রবণতা
শিশুরা একে অন্যের খেলনা বা অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু সব সময়ই অন্যের জিনিস নিয়ে নিতে চাওয়া কিংবা কখনো গোপনে কারও জিনিস সরিয়ে ফেলা স্বাভাবিক আচরণ নয়। ভেবে দেখুন, আপনি শিশুকে যখন কিছু দিচ্ছেন, তখন তার নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের কোনো গুরুত্বই কি দিচ্ছেন না?
অতিরিক্ত ভয়
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শিশু ভীত বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে জানার চেষ্টা করুন যে এই ভয়ের উৎস কোথায়। আপনার অগোচরে শিশুর সঙ্গে কোনো অন্যায় আচরণ হয়েছে কি না, তা বোঝার চেষ্টা করুন। একমুহূর্তের জন্যও একা থাকতে ভয় পাওয়া কিংবা নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় যেতে ভয় পাওয়ার মতো উপসর্গ থেকে আপনি প্রাথমিকভাবে ধারণা পেতে পারেন, সে কী নিয়ে ভয়ে আছে।
অন্যের অনুভূতিকে অবহেলা
খেলার সঙ্গী, পরিবারের সদস্য, এমনকি পশু–পাখির প্রতি নির্মম আচরণ করাটাও কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এসব বিষয় খেয়াল রাখা আবশ্যক। সে কোনো প্রাণীকে আঘাত করলে কিংবা তার আশপাশের মানুষের অনুভূতির বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার আচরণ করলে তাকে অবশ্যই নতুন করে মানবিকতার শিক্ষা দিন। হয়তো সে সহপাঠীর সঙ্গে একধরনের প্রতিযোগিতায় মেতে আছে, সে যদি সহপাঠীর ক্ষতিতে আনন্দিত হয়, তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, এমন মানসিকতা রাখা ঠিক নয়।
আত্মবিশ্বাসের অভাব
শিশু নানা কারণেই হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে। এ রকম হলে শিশুকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে উৎসাহ দিন। তার ইতিবাচক দিকগুলোর কথাই তাকে বলুন। শিশুর কথা বলায় অতিরিক্ত জড়তা, অপরিচিত কারও সামনে আসতে না চাওয়া কিংবা বন্ধুরা খেপিয়ে দিলে নিজের পক্ষে ন্যূনতম কিছু বলতে না পারার মতো উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। এতে শিশুর বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।