কাছের বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুশোক কি আদৌ কাটিয়ে ওঠা যায়
বন্ধু ছাড়া কি আর জীবন চলে!
বন্ধুরাই তো কৈশোরে, তারুণ্যে এমনকি বৃদ্ধকালেও বেঁচে থাকার প্রেরণা। আনন্দের ঝরনাধারার মতো আমাদের উজ্জীবিত রাখে বন্ধুরাই। বয়স বাড়তে থাকলেও সব বন্ধুত্ব একেবারে ‘শেষ’ হয়ে যায় না। সময়ের প্রয়োজনে বাহ্যিক দূরত্ব সৃষ্টি হলেও আত্মিক যোগসূত্র থাকে সুদৃঢ়। কিন্তু বন্ধু যদি একেবারেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে? যদি এমন দেশে চলে যায়, যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না? কাছের বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুর শোক কি আদৌ কাটিয়ে ওঠা যায়?
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বহু প্রাণ ঝরে গেছে। নিহতদের মধ্যে অনেকেই তরুণ, কিশোর। এমনকি রেহাই পায়নি শিশুরাও। এ রকম নানান ঘটনা-দুর্ঘটনায় কিংবা রোগে আকস্মিকভাবে কম বয়সী কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কথা ভেবে আমরা কষ্ট পাই, কিন্তু তার বন্ধুদের কথা আমরা ভেবে দেখি কি?
বন্ধু হারানো এক বেদনাবিধুর অভিজ্ঞতা। ঘটনার আকস্মিকতা পেরিয়ে আসার পরও প্রতিটি পদে বন্ধুর স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কোনো কিছুর বিনিময়েই তো আর প্রাণপ্রিয় বন্ধু কখনো ফিরে আসে না। তারপরও জীবন থেমে থাকে না। তবু জীবন চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ফিরতে হয় জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে। চট করে চলুন একবার দেখে নিই, হঠাৎ বন্ধুবিয়োগের শোক সামলানোর উপায়।
১. কষ্টের কথা লিখে রাখুন
মনের কষ্টের কথা ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। মনের ভাবনা যতই এলোমেলো হোক না কেন, সব লিখুন একের পর এক। যে শব্দই মনে আসুক, লিখে রাখুন। আবেগের স্বাধীন প্রকাশ ডায়েরির পাতায় ঘটতে দিন। যেসব কথা অন্য কাউকে বলতে পারছেন না, তা-ও লিখুন। এতে আপনার মনের ভার কমবে। আপনি অনেকটাই হালকা বোধ করবেন। প্রয়োজনে ডায়েরিটা এমন কোথাও রাখুন, যাতে তা অন্য কারও হাতে না পড়ে।
২. সময় নিন
কেউ কেউ আপনাকে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কাছের বন্ধুর মৃত্যুশোক সামলে ওঠা আদতে খুব সহজ ব্যাপার নয়। তাই সময় নিন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হোন।
৩. বন্ধুর জন্য কিছু করুন
বন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছু একটা করুন। যেমন রংপুরের পার্কের মোড়টিকে ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এমন একটা নাম যুগযুগান্তর ধরে সাধারণ মানুষের কাছে অকুতোভয় আবু সাঈদের একটা স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। আপনার বন্ধু যে কারণে মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে কোনো কাজ করার সুযোগ থাকতে পারে। বন্ধু যদি ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান, ডেঙ্গুজ্বরবিষয়ক সচেতনতামূলক কাজে এগিয়ে যান। তাঁর মৃত্যু যদি দুর্ঘটনায় হয়ে থাকে, তাহলে সেই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলুন। বন্ধুর মৃত্যু যে কারণেই হয়ে থাকুক না কেন, সম্ভব হলে বন্ধুর নামে একটা ‘স্মৃতি ট্রাস্ট’ গড়তে পারেন। একটা পাঠাগার করতে পারেন।
আবার এমন বড় কিছু করার সুযোগ না মিললে এমন কাজে যোগ দিতে পারেন, যা আপনার বন্ধু ভালোবাসতেন। ধরা যাক, আপনার বন্ধু নিরাশ্রয় পথপ্রাণীদের সেবা করতে পছন্দ করতেন, এখন আপনি নিজেই সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পারেন। কিংবা এমন কোনো সংগঠনে যোগ দিতে পারেন, যাঁরা এই প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেন। তাঁদের আর্থিক সহায়তাও দিতে পারেন। বন্ধুর পরিবারের পাশে থাকুন। বন্ধুর অপূর্ণ স্বপ্নপূরণের দায়িত্বও নিতে পারেন। কিছু না হোক বন্ধুকে নিয়ে আপনার সুন্দর স্মৃতি বা ভালোবাসার অনুভূতির কথা ফেসবুকেও লিখতে পারেন। আপনার মনের ভাব ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। তাতেও খানিকটা ভারমুক্ত বোধ করবেন।
৪. বন্ধুর জন্য হলেও ভালো থাকার চেষ্টা করুন
শোকে কাতর আপনি হয়তো জীবনের প্রতি নিস্পৃহ হয়ে পড়ছেন। এমন হলে চিন্তা করুন, বন্ধু বেঁচে থাকলে তিনি আপনাকে কেমন অবস্থায় দেখলে খুশি হতেন। নিশ্চয়ই তিনি আপনার ভালোই চাইতেন। তাই নিজের যত্ন নিন। সময়মতো খাওয়াদাওয়া করুন, বিশ্রাম করুন।
৫. অন্যের সাহায্য নিন
সব চেষ্টার পরও যদি ভালো থাকতে না পারেন, নিজের কাছের মানুষদের সাহায্য নিন। নির্ভরযোগ্য কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। প্রয়োজন হলে মনোবিদের শরণাপন্ন হোন।
সূত্র: হেলথলাইন