‘বউ চায়, আমি যেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিই’
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমার সমস্যাটা একটু আলাদা। আমি কিছুতেই আমার মায়ের সঙ্গে বউকে মিলমিশ করাতে পারি না। আমি ঢাকায় থাকি আর বউ থাকে বাড়িতে। বউ আর মায়ের বনিবনা হয় না। আমার সামর্থ্য নেই বউকে ঢাকায় এনে রাখার। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঋণ, নিজের খরচ, সব মিলিয়ে টিকে থাকাই অনেক কষ্টের। আমার আয় সেই তুলনায় কম। তাই বউ চায়, আমি যেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিই। আমার কাছ থেকে সে অনেক টাকা নেওয়ার জন্য এসব করছে। এখন করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার পারিবারিক সমস্যাটি দুই পরিবার বসেই সমাধান করতে পারে। তবে তালাক দেওয়ার প্রসঙ্গ এলে, সে বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে যে তালাক দিতে চাইলে তাকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছে, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল বুঝিয়ে দিতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে? আইনে বলা আছে, তখনই বা পরবর্তী সময়ে বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ (এডি) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।
যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধ্যমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। অনেকের ভুল ধারণা আছে, স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। আদতে স্ত্রী তালাক দিলেও তাঁর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, তাহলে এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালের (তালাকের নোটিশ দেওয়া থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করার বাধ্যবাধকতা আছে। এ-সংক্রান্ত কোনো দাবিদাওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতেও যেতে পারেন।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা,
প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’), ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA