এই চার ব্যক্তিকে ক্ষমা করতেই হবে
কেন করবেন ক্ষমা? কারণ, ক্ষমা করলে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো বোধ করবেন। একটা ভালো জীবন যাপনের জন্য ক্ষমার বিকল্প নেই। জেনে নেওয়া যাক, ক্ষমার উপকারিতা।
১. ক্ষমা মানসিকভাবে সেরে ওঠার পূর্বশর্ত
জীবনে আমাদের অন্যতম চাওয়া হলো শান্তি। শান্তির পূর্বশর্ত হলো ক্ষমা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোর থেরাপিস্ট কিম ইগেল বলেন, ‘যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করছেন, তার মানে এই নয় যে ওই ব্যক্তি যা করেছেন, সেটাকে বৈধতা দিলেন। ক্ষমার অর্থ ওই ব্যক্তির কর্মকাণ্ড থেকে আপনার নিজের ভেতরে যে ভার ও ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেটা থেকে আপনি নিজেকে মুক্ত করে দিচ্ছেন। আর এর ফলে আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। জীবন আপনার জন্য আরেকটু সহজ হয়ে গেল।’
২. অন্য সম্পর্কগুলো মজবুত করতে
যিনি আপনাকে মানসিকভাবে আহত করেছেন, আপনি যখন তাঁকে ক্ষমা করে দিতে পারবেন, তখন যে মানুষগুলো আপনাকে ভালোবাসে বা আপনার কাছের মানুষ, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি যখন অন্য মানুষকে প্রচণ্ড অবিশ্বাস বা ঘৃণা করেন, তখন তা আপনার ভেতরের ‘ইতিবাচক এনার্জি’কে বাধাগ্রস্ত করে। তখন আপনি—
সহজেই রেগে যান। অযথা চিল্লাপাল্লা ও বকাবকি করেন।
আপনজন বা সঠিক মানুষকেও বিশ্বাস করতে বা ভালোবাসতে পারেন না।
নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর শক্তি পান না।
ক্ষমা করতে পারলে আপনি বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলোয় আরও গভীরভাবে নিজেকে যুক্ত করতে পারবেন।
৩. শুধু মানসিক স্বাস্থ্যই নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষমা গুরুত্বপূর্ণ
একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে, ক্ষমা আপনার শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। ক্ষমা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। দুশ্চিন্তা বা হতাশা কমায়। ঘুমের মান বাড়ায়। আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
৪. সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করতে
ক্ষমা করার মানে এই নয় যে ওই ব্যক্তির সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে আবার ফিরে যেতে হবে। তবে সম্পর্কটাকে যদি চালিয়ে যেতে চান, তাহলেও আপনাকে ক্ষমা করতে পারতে হবে।
ক্ষমার চারটি ধাপ
প্রথম ধাপে আপনি ওই ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন। প্রচন্ড রাগ হয় আপনার। এরপর মনের ভেতরে তৈরি হওয়া গভীর ক্ষত থেকে ব্যথা অনুভব করেন। তৃতীয় ধাপে আপনার মানসিক ব্যথা সেরে ওঠে। আর চতুর্থ ধাপে আপনি সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়ে নতুন করে এগিয়ে যান। ওই ব্যক্তির সঙ্গে হোক বা ওই ব্যক্তিকে ছাড়া সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমা করতেই হবে।
যে চার ধরনের মানুষকে আপনার ক্ষমা করতেই হবে:
১. আপনার মা–বাবা
মা–বাবার কোনো কৃতকর্মের ওপর রাগ ও ক্ষোভ রাখবেন না। তাঁদের জন্য কেবল একটা অনুভূতিই রাখুন, তা হলো কৃতজ্ঞতা। মা-বাবাকে ‘জাজমেন্টের’ বাইরে রাখুন।
২. প্রাক্তন ও তাঁর পরিবার
হতে পারে সে প্রাক্তন প্রেমিক, প্রেমিকা, স্বামী বা স্ত্রী। তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্ষমা করে সামনে এগিয়ে যান।
৩. যে আপনাকে দুঃখ দিয়েছে
জীবনে চলার পথে যে ব্যক্তিই আপনাকে দুঃখ দিক, সবাইকে ক্ষমা করে নিজে হালকা হয়ে তারপর ঘুমাতে যান। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বলুন, পৃথিবীর কারও প্রতি আপনার কোনো অভিযোগ বা রাগ ও ক্ষোভ নেই। আপনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
তবে হ্যাঁ, ক্ষতিকর বা মানসিক শান্তি বিনষ্টকারীদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে ভুলবেন না।
৪. নিজেকে ক্ষমা করুন
এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে নিজেকে ক্ষমা করুন। নিজের ছোট-বড় সব ভুলের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। এসব ভুল থেকে শিক্ষা নিন। মনে রাখবেন, এসব ভুল আর ভুল থেকে পাওয়া শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই আপনি প্রতিনিয়ত শুদ্ধ হয়েছেন।
সবাইকে ক্ষমা করে সামনে তাকান। সামনের দিনগুলো চলে যাওয়া দিন থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিনগুলোয় নিজের সেরাটা ঢেলে যথাসম্ভব ভালোভাবে বাঁচুন।
সূত্র: হেলথলাইন ও বিজনেস গ্রোথ মেন্টরের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট