শাকিরা বললেন, সৃষ্টিকর্তা খুব অল্প কিছু মানুষের জন্য সুখ বানিয়েছেন
হৃদয়ে বিচ্ছেদের ক্ষত নিয়ে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে শাকিরা উড়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে। এখন থেকে মিয়ামির ‘শাকিরা হাউস’-ই লাতিন সংগীতের রানির নতুন ঠিকানা। সঙ্গে আছে তাঁর দুই ছেলে, ১০ বছরের মিলান ও ৮ বছর বয়সী সাশা। নতুন গান, ক্যারিয়ার, নতুন জীবনের নানা কিছু নিয়ে হৃদয় খুলে কলম্বিয়ান সংগীত তারকা শাকিরা কথা বলেছেন বিলবোর্ডের সঙ্গে...
শিল্পীরা যে নিজের প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ আর নতুন করে জীবনে ফিরে আসার মতো ব্যক্তিগত কথাগুলো গানের ভেতর দিয়ে জানিয়ে দেন, তা আর নতুন কী! শাকিরার নতুন গানের মূল বিষয় হলো ‘উইমেন ডোন্ট ক্রাই, দে মেক মানি’। গানের ভেতর দিয়ে তিনি বার্তা দিচ্ছেন, তিনি আর সাবেক প্রেমিক ও তাঁর দুই সন্তানের বাবা স্প্যানিশ ফুটবলার জেরার্ড পিকের জন্য কাঁদবেন না। তিনি এবার মন দেবেন ক্যারিয়ারে।
৪৬ বছর বয়সী এই তারকা সম্প্রতি এই আলোচিত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি একটা বিড়াল, যে ইতিমধ্যে অন্তত নয়বার মৃত্যুবরণ করে বারবার জন্মেছে। আর প্রতিবার আগের চেয়ে আরও সাহসী, আরও শক্তিশালী আর আত্মবিশ্বাসী হয়ে ফিরেছে। আমি বাস্তবতাকে বারবার প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছি, প্রচণ্ড কষ্টের সাগরে ডুবে গেছি, হতাশার অতল গহ্বরে পড়ে গেছি, রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে মনে হয়েছে সবকিছু তছনছ করে ফেলি, সঙ্গে নিজেকেও। কেবল সন্তানদের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছি।’
তবে শাকিরার দুই ছেলে মিয়ামিতে বেশ আছে। সেখানকার স্কুল তাঁদের পছন্দ হয়েছে। আর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার ক্লিকও শুরু হয়ে যায় না। কেউ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জিজ্ঞেসও করে না, ‘মা কেমন আছে? বাবাকে মিস করো?’
শাকিরা জানান, পিকের বিশ্বাসঘাতকতার পর থেকে বার্সেলোনায় তাঁদের বাড়িটাকে তাঁর মনে হতো বিরাট একটা খোলা জেলখানা। সেখানে তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। বাড়ির সামনে, রাস্তার মোড়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পাপারাজ্জিরা ক্যামেরা তাক করে ছিল। সন্তানদের নিয়ে যে কোথাও গিয়ে একটু আইসক্রিম খেয়ে আসবেন, সে উপায়ও ছিল না।
ওই বাড়ির স্মৃতিগুলোকেও বিদায় জানানো দরকার ছিল। সব মিলিয়ে মিয়ামিই ছিল তাঁর চূড়ান্ত গন্তব্য। সেখানে তিনি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে দুই ছেলেকে দিব্যি স্কুলে নামিয়ে দিচ্ছেন। ‘সোশ্যাল বাটারফ্লাই’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সন্তানদের নিয়ে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছেন। আর নতুন গানে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কে না জানে, শাকিরার বিলাসবহুল গাড়ি সংগ্রহের কথা। তবে মিয়ামিতে তিনি একটা টয়োটা সিয়েনা চালাচ্ছেন। ‘সেক্সি’ গাড়িগুলোর কথা জানতে চাইলে হেসে বললেন, ‘আমার বাড়িতে কোনো সেক্সি গাড়ি নেই। আমার বাড়ির একমাত্র সেক্সি ব্যাপার আমি নিজে।’
তিনি এখন সুখী কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শাকিরা বলেন, ‘উত্তরের তুলনায় প্রশ্নটা আসলে খুবই ছোট। সবাই সুখী হওয়ার কপাল নিয়ে জন্মায় না। সৃষ্টিকর্তা খুবই অল্প কিছু মানুষের জন্য সুখ বানিয়েছেন। আমার জন্য হয়তো গ্র্যামি, এমটিভি, জনপ্রিয়তা, টপচার্ট—এসবই। আমি বলব না, আমি সুখী মানুষদের ক্লাবের সদস্য।’
১২ বছরের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেদনা শাকিরা ভুলতে পারছেন না কিছুতেই। বলেন, ‘আসলে আমার এখন সুখী হওয়ার চেয়ে ছেলেদের ফুটবল ক্লাবে ভর্তি করাটা বেশি জরুরি। সুখ-দুঃখের চেয়ে সন্তানদের সুন্দরভাবে বড় করাটাই আসল কথা। আর সেটার জন্য যা কিছু দরকার, তা আমাকে করতেই হবে। আসলে ঘর ভাঙার কষ্টের কোনো সান্ত্বনা হয় না। আমার সন্তানেরা যে তাদের বাবার সঙ্গে বড় হতে পারল না, এর কোনো ক্ষতিপূরণ নেই, হয় না। আরও পাঁচটা গ্র্যামির চেয়ে আমি বরং আমার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে বুড়ো হতে চেয়েছিলাম।’