দাম্পত্যে মতের অমিল হলেও সেটা যেভাবে মিটিয়ে নিতে পারেন
দুজন মানুষ যখন একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন, নানা বিষয়েই তাঁদের মতের অমিল দেখা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের প্রতি অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যান। তবে ছোটখাটো মতবিরোধও অনেক সময় যন্ত্রণাদায়ক মনে হয়। সঙ্গীর ছোটখাটো বদঅভ্যাস যেমন: গাছের যত্ন নিতে ভুলে যাওয়া বা ঘর গুছিয়ে না রাখার মতো অনুযোগ একসময় বড় হয়ে ঝগড়ায় রূপ নেয়। তা–ই বলে কি কথা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকলে চলে! এসব মতবিরোধ যৌক্তিক উপায়ে সমাধানের মাধ্যমে আপনি সঙ্গীর আরও কাছে যেতে পারেন। দাম্পত্য হতে পারে মজবুত।
কিছু টিপস মেনে চললে সঙ্গীর সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়া সহজ হবে—
১. সঙ্গীকে সরাসরি দোষারোপ নয়
ধরুন কিছু বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে মতবিরোধ হলো। ব্যাপারটার জন্য আপনি কোনো ব্যাখ্যা না চেয়েই সরাসরি তাঁকে দোষারোপ করলেন। হয়তো বলে বসলেন, ‘তুমি একটা হিংসুক’ বা ‘তুমি তো কিছুই পারো না!’ এসব আপত্তিজনক কথা সরাসরি আপনার সঙ্গীকে বললে ঝামেলা তো মিটবেই না, উল্টো ঝগড়া বাড়বে। তাই সঙ্গীর কাছে বিষয়টির জন্য সাধারণভাবে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। অথবা একটু সময় নিয়ে পরমুহূর্তে জানতে চাইতে পারেন, ‘তুমি আমাকে কেন হিংসুক বললে, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। বিষয়টা আমার কাছে একটু অন্য রকম লেগেছে।’ অথবা বললেন, ‘সব বিষয় যেমন আমি জানি না, তুমিও হয়তো এমন কিছু আছে, যেটা যানো না। তার জন্য কিছুই জানি না বলাটি কি ঠিক হলো?’
২. তর্কের সময় ঢালাও মন্তব্য করবেন না
মতের হেরফের হলেই আমরা বলে ফেলি, ‘তুমি সব সময় এমন করো’ অথবা ‘কখনোই আমাকে সাহায্য করো না’। কিন্তু আসলেই হয়তো আপনার সঙ্গী সব সময় বিরোধিতা করেন না। তাই ঢালাও মন্তব্য করার আগে বিষয়টা মাথায় রাখুন। এমন মন্তব্যে অপরজন দ্রুত অপমানিত বোধ করে তর্ক জড়িয়ে পড়েন। আপনি যখনই আপনার বক্তব্যের মধ্য ‘সব সময়’ বা ‘কখনোই করো না’ ধরনের কথা ব্যবহার করবেন, তখন আপনার সঙ্গী অবচেতন মনেই ‘আত্মরক্ষামূলক’ মানসিকতায় চলে যান। তার মস্তিষ্ক তখন নিজেকে সুরক্ষা দিতে অন্যের বিরুদ্ধে আরও কঠোর সমালোচনায় উদ্বুদ্ধ হতে পছন্দ করে। আর এই পাল্টাপাল্টি তর্ক চলতে থাকলে পরিস্তিতি আরও জটিল হয়।
৩. একটি বিষয় নির্বাচন করা
কথায় আছে, একসঙ্গে থাকলে হাঁড়িপাতিলে একটু–আধটু ঠোকাঠুকি হবেই। দুজন মানুষ একে অপরকে ভালোবাসেন বলে যে তাঁদের সবকিছুতেই মিল থাকতে হবে, তার কোনো মানে নেই। তবে মতবিরোধ হলে সেটা যৌক্তিকভাবে আলোচনা করা উচিত। আর সেই আলোচনার সময় বিষয় বেছে নিয়েই কথা বলে উচিত। অনেক সময়ই দেখা যায়, দম্পতিরা একটি বিষয়ে কথা বলতে বলতে পূর্বের একাধিক ঘটনা টেনে এনে বর্তমানের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টা একটা ফলপ্রসূ আলোচনাকে দ্রুত নষ্ট করে ফেলে। তাই উত্তেজনার ওই মুহূর্তে শুধু বর্তমানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেই সেটার সমাধান করে নিন।
৪. অন্যজনের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনুন
একজন মানুষের সঙ্গে অনেক বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর তাঁর কাজকর্ম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়ে যায়। ফলে রোজকার রুটিনে জীবন চলতে থাকে। আপনি হয়তো সঙ্গীকে আর জিজ্ঞেস করেন না, দিনটা কেমন কাটল? কোথায় গিয়েছিলে? কখন আসবে? অথচ মতের অমিল হলে এ ধরনের ছোটখাটো কুশলাদির অভ্যাস সম্পর্ককে জোরদার করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাগ্বিতণ্ডার মুহূর্ত পেরিয়ে যখন পরিবেশ শান্ত হবে, তখন ফোনে এ ধরনের কথোপকথন দিয়ে স্বাভাবিক হতে পারেন। এরপর সময় নিয়ে মুখোমুখি বসে একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তারপর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
৫. নন–ভায়োলেন্ট কমিউনিকেশন
মতভেদ মেটাতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায়। আপনার সঙ্গী আপনার ভালোবাসার মানুষ। রাগ, ক্ষোভ, ঝগড়ার মধ্যেও এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে অন্যজনের শ্রদ্ধা–ভালোবাসা হারিয়ে যায়। রেগে কাউকে আঘাত করা যাবে না। ঝগড়া হলে আমরা আবেগীয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। মনে হয় আমাদের কেউ বোঝে না, সঙ্গী ভালোবাসেন না। এই নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘ হলে তা আমাদের অবিশ্বাসী ও স্বার্থপর করে তোলে। তাই সঙ্গীর প্রতি অভিযোগগুলো অনুরোধের সঙ্গে উপস্থাপন করুন। সঙ্গীর প্রতি অভিযোগ থাকলে আগে তাঁকে অনুপ্রেরণা দিন, তার আগের কাজগুলোয় আপনি কতটা উপকার পেয়েছেন, এসব বুঝিয়ে বলুন। তারপর আপনার খারাপ লাগার বিষয়টি উপস্থাপন করুন।
৬. সময় বিবেচনা করে আলোচনা
সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা খুব জরুরি। তবে সেটারও যথাযথ সময় আছে। আপনার সঙ্গী যখন মিটিং বা অফিসে ব্যস্ত, কোনো চাপে আছেন বা ক্ষুধার্ত, তখন এসব আলোচনা না করাই ভালো। আবার একজন রেগে থাকলেও এ ধরনের আলোচনা করবেন না। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে বড় বড় করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। ধ্যান করতে পারেন। দুজনই যখন কিছুটা শান্ত অনুভব করবেন, তখন আলোচনা করুন।
৭. তর্কে জিততে নয়, সম্পর্ক রক্ষায় মনোযোগ দিন
যখনই কেউ আমাদের নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা তা প্রতিরোধ করতে চাই। এই অভ্যাস অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেকোনো মূল্যে তর্কে জিততে চাওয়া খারাপ অভ্যাস। কেননা সঙ্গীর সঙ্গে মতবিরোধ হলেও, তাঁরাই আমাদের ভালোবাসার জায়গা। তাই তর্কের সময় উত্তেজনার মুহূর্তে নিজেকে নিয়ে না ভেবে সঙ্গীর দিকটাও ভাবুন। যদি আপনি ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার দিকে মনোযোগী থাকেন, তাহলে শুরু থেকেই সাবধানী হোন। কড়া ভাষায় কথা বলে সঙ্গীকে আরও খেপিয়ে তুললে পরিস্থিতি জটিল হবে। টুকটাক ঝামেলা মিটিয়ে নিলে সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়।
সূত্র: ফোর্বস, হিন্দুস্থান টাইমস ও মিডিয়াম