প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার আগে নিজেকে এই তিনটি প্রশ্ন করুন
বলিউড তারকা আমির খানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে কিরণ রাওয়ের। তারপরও তাঁরা একসঙ্গে সিনেমা বানাচ্ছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন। অনেকে ভেবে অবাক হচ্ছেন, বিবাহবিচ্ছেদের পরও এভাবে বন্ধুত্ব রাখা যায়! সমাজে এমন ঘটনা বিরল হলেও আমির-কিরণ তা প্রমাণ করছেন। কিন্তু প্রসঙ্গটা যদি বিবাহবিচ্ছেদ না হয়ে দীর্ঘদিনের প্রেমের বিচ্ছেদ হয়, সে ক্ষেত্রে কেমন হবে? বন্ধুত্বটা কি সে ক্ষেত্রে ঠিকঠাক জমে? কিছুদিন আগে হয়তো আপনাদের বিচ্ছেদ হয়েছে, তারপরও উভয়েই যোগাযোগটা রাখতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে কী করবেন? এখানে একটা কথা বলে রাখি, যোগাযোগ রাখতে চাওয়া হয়তো ভালো, কিন্তু তার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেখতে পারেন, যোগাযোগটা রাখবেন কি না?
একটি সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে হয়তো আপনার মনে হবে, যাহ্, সব শেষ হয়ে গেল। যে আপনি একজনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, সেই আপনিই এখন সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন। এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টদায়ক। অনেকের ক্ষেত্রে কিন্তু একেবারেই অপরিচিত কিংবা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটে না। দেখা যাচ্ছে, দুজনের যোগাযোগ সেই আগের মতোই আছে। একসঙ্গে দুজন আগের মতোই বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিচ্ছেন। এই যে যোগাযোগ রাখার ব্যাপার, এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আপনাদের বোঝাপড়াটা ভালো হয় এবং সম্পর্ক ভালো শর্তে শেষ হয়, তাহলে দুজনের যোগাযোগ বজায় থাকতেই পারে। আপনারা বন্ধু হয়ে যেতে পারেন।
মানবযোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞদের একজন বলা হয় মারিসা জি ফ্রাঙ্কোকে। তিনি মনোবিজ্ঞানী এবং নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলিং বই ‘প্লেটোনিক: হাউ দ্য সায়েন্স অব অ্যাটাচমেন্ট ক্যান হেল্প ইউ মেক-অ্যান্ড কিপ-ফ্রেন্ডস’-এর লেখকও বটে। তিনি বলেছেন, ‘পূর্ণাঙ্গ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আবেগগত দিক যেমন হওয়া দরকার, তেমনটা না হলেও কিন্তু বন্ধুত্ব হতে পারে।’ অর্থাৎ বিচ্ছেদের পরও যোগাযোগ রাখা যেতে পারে।
এদিকে নিউইয়র্কভিত্তিক জি এস থেরাপি সেন্টার ডটকমের সাইকোথেরাপিস্ট জেভিয়ার প্যাচকি বলছেন, ‘বিচ্ছেদের পর আপনি আপনার সম্পর্ককে কেমন দেখতে চান, সে ব্যাপারে নিজেই নিজের মুখোমুখি হোন।’
বিচ্ছেদের পরও আপনি যদি প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা বন্ধুত্ব রাখতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য মারিসা ও জেভিয়ার তিনটি প্রশ্ন রেখেছেন। একবার মুখোমুখি হয়ে দেখতে পারেন।
প্রশ্ন ১: কেন যোগাযোগ রাখতে চান
প্রাক্তনদের মধ্যে যোগাযোগ থাকার একাধিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন মারিসা ও জেভিয়ার, যেখান থেকে অনেক সময় বের হওয়া সম্ভব হয় না। এর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপার থাকতে পারে। আবার এমন হতে পারে, দুজনের বন্ধু সার্কেল একই। দুজন একই সমাজ বা গোষ্ঠীতে বেড়ে উঠেছেন। অথবা দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে উভয়েই বন্ধু ছিলেন এবং সেটা এখনো চালিয়ে যেতে চান।
তবে কারণ যা-ই হোক না কেন, নিজের উদ্দেশ্যের প্রতি সৎ থাকতে হবে। এমনও হতে পারে, আপনি হয়তো অনুধাবন করতে পারছেন যে আপনি আর শুধু্ই বন্ধুত্বের সম্পর্কে থাকতে চান না।
প্রশ্ন ২: বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারবেন কি না
বিচ্ছেদের পর অনেক সময় এমনটাও দেখা যায় যে কেউ কেউ তাঁর প্রাক্তনকে আবার জীবনে ফিরে পেতে চান কিংবা প্রাক্তনের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। আবার কেউ কেউ প্রাক্তনকে ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ, তাঁর পক্ষে বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে।
বিচ্ছেদ-পরবর্তী বন্ধুত্ব নিয়ে সেজ জার্নালের একটি গবেষণা বলছে, ‘প্রাক্তনের তকমা পেরিয়ে বন্ধু হয়ে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।’ কারণ, এ ক্ষেত্রে দুজনেরই পুনরায় রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই বন্ধুত্ব যদি করতেই চান, বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে, পরবর্তী ধাপে পা রাখার জন্য আপনারা প্রস্তুত কি না।
প্রশ্ন ৩: কেমন বন্ধুত্ব চান
আপনি কি এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব চান, যেখানে ডেটিংয়ের জন্য আহ্বান জানানো যাবে? কিংবা মাঝেমধ্যে কোনো উপলক্ষে দুজন কোথাও দেখা করা যাবে? মারিসার মতে, এমন সব ঘটতে থাকলে দুজনের রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বহুলাংশে।
এ ক্ষেত্রে জেভিয়ারের পরামর্শ হচ্ছে, আপনি বন্ধুত্বের বিভিন্ন স্তর পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যেমন আপনি আপনার প্রাক্তনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘তোমার ভবিষ্যৎ ডেটিং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারি কি?’ অপর পক্ষ থেকে কী উত্তর আসে, তার ওপর ভিত্তি করে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আপনাদের বন্ধুত্বটা কেমন হবে।
মারিসার কথা, প্রাক্তন ছাড়াও যে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় আপনি খুব সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আপনি আসলে কেমন বন্ধুত্ব চান।
তথ্যসূত্র: লাইফ কিট