সন্তানের বিয়ে দিতে যাচ্ছেন, তাহলে এসব বিষয় যাচাই করে নিন

দুই পরিবারের শিক্ষাগত অবস্থানে মিল আছে কি না, সেটা শুরুতেই দেখে নিতে হবে
ছবি: সুমন ইউসুফ

কথায় বলে, লাখ কথা না হলে বিয়ে হয় না। আগেকার দিনে গুরুজনেরা বলতেন, বিয়ের জন্য ঘর দেখে সম্বন্ধ করতে হয়। ঘর মানে পাত্র বা পাত্রীর বাড়ির সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। পাত্র–পাত্রী যদি নিজেরাই পছন্দ করে নিজেদের বিয়ের স্বিদ্ধান্ত নেয় সেখানে আপোষ হয়, তবে বিয়েটা যদি পারিবারিক স্বিদ্ধান্তে হয়, সেখানে নানা বিষয় মাথায় রেখে এগোতে হয়।

পুরোনো অনেক কিছুর মতো ঘর দেখে সম্বন্ধের এই তত্ত্বকেও আমরা অনেকে বাতিল করেছি। আমরা অনেকেই মনে করি, কেবল ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনের মিল হলেই বিয়ে হওয়া উচিত।

কিন্তু বিয়ের মতো সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাত্র বা পাত্রীর পাশাপাশি তাঁর পরিবারের কিছু বিষয়ও নজরে রাখা উচিত বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক অধ্যাপক মেখলা সরকার। তাঁর মতে, এসব বিষয় মিলিয়ে সম্বন্ধ করলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বোঝাপড়াটাও ঠিকঠাক হয়, আবার মেয়ের ক্ষেত্রে নতুন পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়।

সেই বিষয়গুলো কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

পারিবারিকভাবে বিয়ের স্বিদ্ধান্তে নানা বিষয় মাথায় রেখে এগোতে হয়
ছবি: নকশা

দুই পরিবারের মধ্যে শিক্ষাগত অবস্থানে মিল আছে কি না, সেটা শুরুতেই দেখে নিতে হবে। কারণ, শিক্ষার সঙ্গে মানুষের বেড়ে ওঠার পরিবেশ, পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহ সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষাগত যোগ্যতার অনেক বেশি পার্থক্য থাকলে সেই পরিবারে সম্পর্ক না করাই ভালো।

বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি জরুরি। কারণ, এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁকেই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে হয়। শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ-দেবরদের সঙ্গে মনমানসিকতায় পার্থক্য থাকলে, সেখানে বসবাস করা তাঁর জন্য কঠিন হতে পারে।

স্বাবলম্বী বলতে শুধু অর্থ উপার্জন নয়, ছেলে বা মেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন কি না সেটা দেখাও জরুরি
ছবি: প্রথম আলো

ছেলে বা মেয়েটি স্বাবলম্বী কিনা তা দেখে নেওয়া জরুরি। এখানে স্বাবলম্বী বলতে চাকরি করা বা অর্থ উপার্জনের কথা বোঝানো হচ্ছে না। স্বাবলম্বী অর্থ হলো, ছেলে বা মেয়ে নিজের কাজ নিজে কতটুকু করতে পারেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন কি না।

অনেক ভালো চাকরি করা, ভালো ছাত্রকেও দেখা যায় তাঁর সব কাজ মাকে করে দিতে হয়। নিজের শার্ট কেনার মতো সিদ্ধান্তও তিনি একা নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যখন তিনি বিয়ে করেন, তখন হয় স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন অথবা তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর একধরনের দ্বন্দ্বের মুখে দাঁড় করিয়ে দেন। সুস্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা অন্তরায়।

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের জীবন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে
ছবি: নকশা

হবু পাত্র বা পাত্রীর সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক কেমন, তা বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ডা. মেখলা সরকার বললেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ভালোবাসার-সম্মানের। কিন্তু সম্পর্কে অতিনির্ভরশীলতা দাম্পত্যে প্রভাব ফেলে।

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের জীবন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিতে হবে। বাবা-মাকেও নিজেদের জীবনে প্রায়োরিটি এমনভাবে সেট করতে হবে, যেন প্রত্যেকে নিজের মতো করে নিজের জীবন যাপন করতে পারেন।

এতে সবার মধ্যে সম্পর্ক যেমন ভালো থাকবে, পরিবারের নতুন মানুষ এলে তাঁর জন্যও মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।