২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সঙ্গীর সঙ্গে কতটুকু তথ্য শেয়ার করা যায়

অনেকের মত হলো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘ব্যক্তিগত’ বলে কিছু থাকা উচিত নয়। মডেল: অভি ও প্রমা
ছবি: কবির হোসেন

সুরভী আল্পনা লেখাপড়া করেছেন দেশের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষাজীবন শেষ না হতেই নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন। শুরুতে সব ঠিক ছিল, এক সন্তানের মা–ও হলেন সুরভী। সংকট শুরু হলো, যখন তিনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেলেন। কোনোভাবেই তার এই সামাজিক অবস্থান মেনে নিতে পারছিলেন না দীর্ঘদিনের প্রেমিক স্বামী ও তার পরিবার।

এই দ্বন্দ্বে সম্পর্ক যখন প্রায় শেষ, তখন সুরভী একদিন দেখলেন, তার সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কাজটি করেছিলেন তার স্বামী। কারণ, সুরভীর কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কবে কত টাকা তুলেছেন, কোনটির পাসওয়ার্ড কী; সবই তার স্বামীর জানা। সুরভীর ব্যস্ততার কারণে এসব দেখভাল তাকেই করতে হতো। ফলে টাকা তুলতে কোনো বেগ পেতে হয়নি।

আরেকটি গল্প শাহরিয়ার মাহমুদের। পারিবারিকভাবেই তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সায়মা সুলতানার। দুজনের মনের মিলও হয়েছিল, অন্তত শাহরিয়ার তা–ই ভেবেছিলেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন, বন্ধু, প্রথম প্রেম সবই স্ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন তিনি।

কিন্তু অজানা সন্দেহের বশে শাহরিয়ারের সব বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সায়মা। শাহরিয়ারের কয়টি প্রেম ছিল, প্রথম প্রেম ভাঙল কেন ইত্যাদি কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করেছিলেন। যোগাযোগ করেছিলেন সেই প্রেমিকার সঙ্গেও। কেন সম্পর্ক ভেঙেছিল, কতদূর সম্পর্ক গড়িয়েছিল, সব জানার চেষ্টা করেন তিনি।

স্বভাবতই এসব ঘটনায় ভীষণ বিব্রত হন শাহরিয়ার। গল্পের ছলে বলা কিছু অতীত যে কেউ এভাবে ঘাঁটতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করেননি। ফলে কথা–কাটাকাটি, ঝগড়া, পারিবারিক সালিস এখন তাদের জীবনের নিত্যদিনের ঘটনা।

এমন অনেক ঘটনাই আমরা দেখি, যেখানে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে সারা জীবনের জন্য বিপদে পড়তে হয়। কখনো সেই বিপদ মানসিক, তো কখনো আর্থিক বা সামাজিক।

বহু আগে বড় বোন প্রেমিকের সঙ্গে ঘর ছেড়েছিলেন, সেই তথ্য জানতে পেরে দিনরাত স্বামীর খোঁটা শুনছেন এমন নারী আমাদের চারপাশেই আছেন। কিংবা শ্বশুরের দ্বিতীয় বিয়ের খবর জেনে স্বামীকে সব সময় ছোট করে কথা বলছেন, এমন স্ত্রীও আছেন।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যে সম্পর্ক শুরুই হয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, সেখানে আসলে কতটুকু নিজের বা পরিবারের অস্বস্তিকর তথ্য প্রকাশ করা উচিত? এ বিষয়ে যাঁদের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁদের অনেকেই মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রীকে কতটুকু তথ্য বলা যাবে, তা নির্ভর করছে পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।

আবার অনেকের মত হলো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘ব্যক্তিগত’ বলে কিছু থাকা উচিত নয়। একে অন্যের পাসওয়ার্ড, সঞ্চয়, বেতন, গোপন তথ্য ইত্যাদি জানবেন এটাই স্বাভাবিক।

তবে পেশাজীবনের সঙ্গে যুক্ত অ্যাকাউন্ট বা ডিভাইসের তথ্য অনেকেই শেয়ার করার বিপক্ষে।

তবে পুরোনো প্রেম, পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা কিংবা কোনো বন্ধুর ব্যক্তিগত তথ্য সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয় বলেও মনে করেন অনেকে।

সব মিলিয়ে তথ্য শেয়ারের বিষয়ে সম্পর্কের বিশ্বস্ততার ওপরই জোর দিয়েছেন প্রত্যেকে।

কতটুকু প্রকাশ করতে হয় সঙ্গীর কাছে, সে বিষয়ে জানতে দ্বারস্থ হয়েছিলাম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকারের। তাঁর মতে, বিয়ের সম্পর্কটাই টিকে থাকে পারস্পরিক সমঝোতা আর বিশ্বাসের ভিত্তিতে। এই সম্পর্ক কমিটমেন্টের, বিশ্বাসের ও তথ্যের নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের সব তথ্য শেয়ার করতেই হবে এমন নয়, প্রত্যেকেরই কিছু ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে, যেটা হয়তো তিনি কারও সঙ্গেই শেয়ার করতে চান না।

তবে বর্তমান সময় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপকতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখন সময়টা অন্য রকম। সম্পর্কের মধ্যে অনেক কিছু ঢুকে যায়। গোপনীয়তা থাকার বিষয়টা অবশ্যই যৌক্তিক, তবে সেখানে যদি সন্দেহ ঢুকে যায় বা এমন কোনো ঘটনা ঘটে যে মুঠোফোন ধরতে দিচ্ছেন না, পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। সঙ্গীকে প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন কারও গোপনীয়তা ভঙ্গ না করেন।

তবে সঙ্গীর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকলেও অর্থসম্পর্কিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার ওপর মত দিলেন এই বিশেষজ্ঞ।