উদ্বেগের সময় শিশুর মনের যত্ন কীভাবে নেবেন
মানসিক চাপ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেকোনো অনুভূতি বড়দের যেভাবে প্রভাবিত করে, ঠিক সেভাবে শিশুদেরও প্রভাবিত করে। তবে তা কিছুটা ভিন্নভাবে। কিছু চাপ বাচ্চারা নিজেই ম্যানেজ করে নিতে পারে, কিছু তার পরবর্তী জীবনে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এবং বিপদসংকুল পরিবেশে টিকে থাকার দক্ষতা অর্জনেও ভূমিকা রাখে; কিন্তু স্ট্রেস যদি দীর্ঘায়িত অথবা মাত্রাতিরিক্ত হয়, তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আমরা এখন এমন একটি উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যে বড়দের মতো বাচ্চারাও পরিস্থিতির শিকার হয়ে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে। যেসব বিষয় বাচ্চাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলো হলো বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশের অনিরাপদ পরিবেশ, সহিংসতা, নতুন কোনো পরিবেশ, স্কুলের পরিবেশ, পরীক্ষা, এমনকি স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মনোমালিন্য, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, পরিবারে আর্থিক সমস্যা বা প্রিয়জনের মৃত্যু, নির্যাতনের শিকার হওয়া ও আবহাওয়া পরিবর্তন।
শিশুদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মানসিক চাপের কারণ যেমন বাড়তে পারে, তেমনি ধরনও অপরিবর্তিত হয়। কারণ এই বয়সেই তারা নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মেশে, বন্ধুদের নতুন দল, স্কুলের কাজের চাপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিভিন্ন বই পড়া, সংবাদপত্র তাদের বৃহৎ পরিসরে পৃথিবীর নানা প্রান্তের সংবাদ জানার সুযোগ যেমন বাড়ায় তেমন জীবনের বড় বড় পরিবর্তনের সম্মুখীন করে।
শিশুরা কাদামাটির মতো। তারা তাদের চারপাশে যা ঘটছে, সেটিই গ্রহণ করে, যা দেখে সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলে। তারা আশপাশের অন্যদের বিভিন্ন চাপের সময় যেরকম প্রতিক্রিয়া দিতে দেখে, নিজেরাও চাপে পড়লে ঠিক সে রকমই প্রতিক্রিয়া দেয়।
শরীরের চিকিৎসায় আমরা যতটা মন দিই, মনের ব্যাপারে ততটাই উদাসীন। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও আলাদা করে বুঝে ওঠা কঠিন যে সমস্যাগুলো মানসিক চাপ থেকেই হচ্ছে। এ জন্য মানসিক চাপে শিশুদের যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো শনাক্ত করা জরুরি।
স্ট্রেসের মধে৵ থাকলে শরীরের অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল হরমোন তৈরি করে, যা থেকে বাচ্চারা নিচের সমস্যাগুলো ফেস করতে পারে—
দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘাম হওয়া ও হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া;
বমি বমি ভাব, বদহজম বা হজমের সমস্যা;
হঠাৎ খুব বেশি বা খুব কম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস;
বিরক্তিভাব, অস্থিরতা, অমনোযোগিতা, কোনো কারণ ছাড়া বাচ্চার প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়া;
ঘুমে অসুবিধা।
শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপজনিত এসব লক্ষণ দেখা দিলে, তখন তা উতরানোর উপায় খুঁজে পেতে মা–বাবাকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।
প্রথমেই অভিভাবককে মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করতে হবে, বাচ্চাদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তার প্রতি ভালোবাসা, সময় এবং তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। কারণ খুঁজে পেলে বাচ্চার সঙ্গে শেয়ার করতে হবে—আপনি হলে কীভাবে এই মানসিক চাপ সামাল দিতেন। বাচ্চাদের মধে৵ পজিটিভ থিঙ্কিং বা ইতিবাচক চিন্তার প্রসার ও অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা করতে হবে। বাচ্চার ঘুম ও খাওয়াদাওয়া যেন নিয়মিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানসিক চাপের সঙ্গে শিশুর খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও বিশ্রাম জড়িত। বাচ্চাকে ঘরের বাইরে যেতে, খেলাধুলা করতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহিত করতে হবে।
বাচ্চা যদি মানসিক চাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যায় পড়ে অথবা তা বাচ্চার স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।