শীত আর পিঠা একে অপরের সঙ্গে লতায়–পাতায় জড়িত। শীত আসবে আর আমরা পিঠা খাব না, ইতিহাসে এমন অঘটন কখনো ঘটেছে বলে জানা যায় না। নতুন ধান উঠবে অঘ্রান মাসে। সে ধান থেকে বানানো হবে চাল। সে সুগন্ধি চালে খাওয়া হবে পিঠা—এ হচ্ছে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জেবুন্নেসা বেগম পাঠকদের জন্য দিয়েছেন বেশ কিছু পিঠার রেসিপি।
লবঙ্গ লতিকা
উপকরণ:
ময়দা দেড় কাপ, তেল ১ টেবিল চামচ, লবঙ্গ ১০-১২টি, সুজি ১ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, চিনি বা গুড় আধা কাপ (স্বাদমতো), কোরানো নারকেল আধা কাপ, লবণ সামান্য ও দারুচিনি ১ টুকরা।
প্রণালি
ময়দায় সামান্য লবণ ও তেল মেখে ডো তৈরি করুন। সুজি অল্প টেলে ধুয়ে নিন। ঘিতে দারুচিনি ভেজে তুলে নিন। সুজি, চিনি বা গুড়, কোরানো নারকেল দিয়ে ভেজে নামিয়ে নিন। ছোট ছোট রুটি বানিয়ে এর ভেতর সুজির পুর ঢুকিয়ে ভাঁজ করে লবঙ্গ দিয়ে আটকে দিন। ডুবো তেলে ভেজে নিন। গরম অথবা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
নকশি পাকন পিঠা
উপকরণ:
আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, মুগ ডাল আধা কাপ, দুধ ২ কাপ, পানি ১ কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ কাপ ও পানি ১ কাপ। এ ছাড়া নকশা করার জন্য খেজুরের কাঁটা ও টুথপিক লাগবে।
প্রণালি
দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ফুটান। ফুটে উঠলে সামান্য লবণ চালের গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে চুলা বন্ধ করে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখুন। মুগ ডাল টেলে সেদ্ধ করে বেটে রাখুন। চালের গুঁড়ার ডো ভালোভাবে মথে এর সঙ্গে ডাল ও ঘি দিয়ে মাখুন। রুটি বেলে পিঠা কেটে নিন। খেজুর কাঁটা ও নকশা তৈরি করে ডুবো তেলে মাঝারি আঁচে ভাজুন। ভাজা পিঠা শিরায় দিয়ে তুলে নিন।
দুধ খেজুরের রসে ঝিনুক পিঠা
উপকরণ:
আতপ চালের গুঁড়া দেড় কাপ, পোলাওর চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, দুধ ১ লিটার, গুড় ১ কাপ (স্বাদমতো), লবণ সামান্য, কোরানো নারকেল ১ কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ ও পানি ২ কাপ। এ ছাড়া নতুন চিরুনি লাগবে ২টি।
প্রণালি
সামান্য লবণ দিয়ে পানি ফুটান। পানি ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে নেড়ে সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিন। ভালোভাবে মেখে ছোট ছোট বলের মতো করে নিন। দুটি চিরুনিতে ঘি মেখে ঝিনুকের আকারে পিঠা তৈরি করুন। পিঠা ভেজে রাখুন। অন্য পাত্রে দুধ জ্বাল দিয়ে কোরানো নারকেল, পিঠা ও গুড় দিয়ে কয়েক মিনিট রেখে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
হৃদয় হরণ পিঠা
উপকরণ:
ময়দা ১ কাপ, তরল দুধ দেড় কাপ, পোলাওর চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, লবণ সামান্য ও চিনি বা গুড়ের সিরা দেড় কাপ।
প্রণালি
দুধ ফুটে উঠলে সামান্য লবণ, চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন। ভালোভাবে মথে পাতলা রুটি বানান। কুচি করে ভাঁজ করুন। এবার ভাঁজের মাঝের অংশ ভেতরে ঢুকিয়ে অপর দুই পাশ ঘুরিয়ে আটকে দিন। ডুবো তেলে ভাজুন, শিরায় দিয়ে তুলে নিন।
কাশ্মীরি ভাপা পিঠা
উপকরণ:
আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, পোলাওর চালের গুঁড়া ১ কাপ, তরল দুধ ১ কাপ, পাটালি গুড় ১ কাপ, মাওয়া ৩ টেবিল চামচ, পেস্তাবাদাম ২ টেবিল চামচ, কাজুবাদাম ২ টেবিল চামচ, কিশমিশ ৩ টেবিল চামচ, কাঠবাদাম ২ টেবিল চামচ ও লবণ সামান্য।
প্রণালি
চালের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য লবণ ও দুধ মেখে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। চালুনি দিয়ে চেলে নিন। ভাপা পিঠার ডাইসে সামান্য চালের গুঁড়া দিয়ে বাদাম, কিশমিশ, গুঁড়া মাওয়া দিয়ে আবার ওপরে চালের গুঁড়া দিয়ে হালকাভাবে চেপে ভাপা পিঠার পাত্রে পিঠা তৈরি করে নিন। গরম–গরম পরিবেশন করুন।
নারকেল গুড়ের মেরা পিঠা
উপকরণ:
আতপ চালের গুঁড়া ৩ কাপ, গুঁড় ২ কাপ, কোরানো নারকেল ১ কাপ ও লবণ সামান্য।
প্রণালি
আড়াই কাপের মতো পানিতে গুড় দিয়ে জ্বাল দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে নাড়ুন, কোরানো নারকেল দিন। চুলা থেকে নামিয়ে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার ভালোভাবে মথে নিন, গোল ছোট ছোট বলের মতো করে হাতের তালু দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিঠা তৈরি করুন। ভাপে ১৫-২০ মিনিট রেখে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন। মিষ্টি খেতে না চাইলে গুড় বাদ দিয়ে তৈরি করতে পারেন।