ভর্তা একটা মজাদার খাবার। প্রায় সবকিছুরই ভর্তা খাওয়া যায়। ফাল্গুন মাস যায় যায় করছে। বাজারে ধীরে ধীরে কমে আসছে শীতের সবজি। শীতের সবজি এখন খেতে খুব একটা ভালোও লাগছে না। কিন্তু গরমের সবজি আবার পুরোপুরি এখনো বাজারে ওঠেনি। তাই নিরুপায় হয়ে খেতে হচ্ছে গাজর, লাউ শাক, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজিগুলোই। ‘কী করা যায়’ বলে যখন ভাবছেন তখন বলে রাখি, সবজিগুলোকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভর্তা বানিয়ে খান। দেখবেন স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে একটু ভিন্ন রকমের। আর ভর্তার সুবিধা হলো, তাতে অনেক কিছু দেওয়া যায় যাতে স্বাদ হয় একেবারে ভিন্ন রকম।
আবার ভর্তার একঘেয়েমি কাটাতেও ভাবতে হবে। সে ক্ষেত্রে টাকি বা ছোট চিংড়ির ভর্তা খাওয়া যায়, খাওয়া যায় কালিজিরার ভর্তা। তাতে সবজি ভর্তার একঘেয়েমি কিছুটা হলেও কেটে যাবে। মোট কথা, খাবারের স্বাদ এবং আগ্রহ দুটোই ঠিক রাখতে হবে। সিতারা ফিরদৌস এবং কনিকা ধর দিয়েছেন ভর্তার রেসিপি।
মিষ্টিকুমড়া-গাজরের ভর্তা
উপকরণ
মিষ্টিকুমড়া ছোট করে কাটা দেড় কাপ, গাজর ছোট করে কাটা আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৪-৫টি, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল-চামচ, রসুন ৫-৬ কোয়া, লবণ পরিমাণমতো, চারমগজ বাটা ১ টেবিল-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল-চামচ, মেথি গুঁড়া সামান্য ও মৌরি গুঁড়া আধা চা-চামচ।
প্রণালি
তেল, গুঁড়া মসলা, চারমগজ বাদে বাকি সব উপকরণ এক কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে বেটে নিয়ে চারমগজ ও গুঁড়া মসলা মিশিয়ে গরম তেলে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে পরিবেশন করুন।
লাউপাতায় চ্যাপা ভর্তা
উপকরণ
চ্যাপা শুঁটকি ৮টি, লাউপাতা ২০টি, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, রসুনের কোয়া ৪টি, কাঁচা মরিচ ১২-১৪টি, তেল ২ টেবিল-চামচ ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি
শুঁটকি পরিষ্কার করে টেলে নিতে হবে। লাউপাতা ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরান। ৮টি লাউপাতার সঙ্গে বাকি উপকরণ মিলিয়ে চুলায় ভাজা ভাজা করে নিয়ে বাটুন। বাকি লাউপাতা গরম পানিতে অল্প কিছুক্ষণ রেখে পানি থেকে উঠিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি পাতার মাঝখানে ২ টেবিল-চামচ করে শুঁটকি ভর্তা রেখে মুড়িয়ে নিন। এবার ননস্টিক ফ্রাইপ্যানের ওপর রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। অল্প জালে ১০-১২ মিনিট রান্না করতে হবে। তৈরি হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।
ডিম-বেগুনের ভর্তা
উপকরণ
বড় গোল বেগুন ২৫০ গ্রাম, ডিম ২টি, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল-চামচ, কাঁচা মরিচ টোস্ট ২-৩টি, সরিষার তেল ১ টেবিল-চামচ, লবণ পরিমাণমতো ও ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল-চামচ।
প্রণালি
বেগুন ধুয়ে সামান্য চিরে এর গায়ে সামান্য তেল লাগিয়ে পোড়াতে হবে। মাঝে মাঝে উল্টিয়ে দিন। বেগুন পোড়ানো হয়ে গেলে পানিতে রেখে খোসা ছড়িয়ে বেগুন চটকিয়ে নিন। ডিম অর্ধেক সেদ্ধ করে গরম অবস্থায় চটকিয়ে বেগুনের সঙ্গে মেলাতে হবে। এবার তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ মাখিয়ে নিন ডিম-বেগুনের মিশ্রণের সঙ্গে। সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে মেখে পরিবেশন করুন।
টমেটো-স্ট্রবেরির ভর্তা
উপকরণ
বড় আকারের টমেটো ৪টি, স্ট্রবেরি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল-চামচ, শুকনা মরিচ ভাজা ৩-৪টি, লবণ পরিমাণমতো, চিনি ২ চা-চামচ বা পরিমাণমতো ও সরিষার তেল ২ টেবিল-চামচ।
প্রণালি
টমেটোর গায়ে তেল লাগিয়ে নিন। এবার পুড়িয়ে খোসা ছাড়িয়ে টমেটো ছোট ছোট টুকরা করে নিন। স্ট্রবেরি অল্প পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন। স্ট্রবেরি ও টমেটো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ চটকিয়ে নিন ব্লেন্ড করা মিশ্রণটির সঙ্গে। এবার চিনি দিয়ে মাখিয়ে পরিবেশন করুন।
আলুর খোসা ভর্তা
উপকরণ
আলুর খোসা ২ কাপ (লাল আলু হলে ভালো হয়), মাঝারি আকারের টমেটো ২টি, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৪ থেকে ৫টি, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ টেবিল চামচ, সেদ্ধ আলু চটকানো আধা কাপ, বেরেস্তা ৩ টেবিল চামচ ও সরষের তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি
আলু ভালো করে ধুয়ে পুরু ও মোটা করে খোসা ছিলে নিন। তেল গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ লাল করে ভেজে আলুর খোসা ও টমেটো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। এবার ২ কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন। পানি শুকিয়ে গেলে ভালো করে বেটে নিতে হবে। এবার তেল গরম করে সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে ভালো করে ভেজে নিন।
ডাল ভর্তা
উপকরণ
মসুর ডাল ১ কাপ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ভাজা ৪ থেকে ৫টি, লবণ পরিমাণমতো ও সরষের তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি
ডাল ধুয়ে ১২ x ১২ ইঞ্চি মাপের পাতলা সাদা কাপড়ে রেখে সেটি ভালো করে পুঁটলি বেঁধে নিন। এবার বসা ভাত রান্না করুন। চালের পানি ফুটে উঠলে ডালের পুঁটলি চালের মধ্যে দিয়ে ভাত রান্না করতে থাকুন। ভাত হয়ে গেলে দমে রাখতে হবে। ভাতের হাঁড়ি থেকে ডালের পুঁটলি বের করে প্লেটে ডাল ঢেলে বাকি উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে ভর্তা বানাতে হবে।
টাকি মাছের ভর্তা
উপকরণ
টাকি মাছ ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, রসুন ৫ কোয়া, ধনে পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো ও সরষের তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি
প্রথমে মাছের মাথা আলাদা করুন। এবার মাছগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে অল্প লবণ ছিটিয়ে দিন। চুলায় শুকনা তাওয়ায় মাছগুলো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচে ২ পিঠ ছেঁকে নিতে হবে। মাছের কাঁটা বেছে এবার সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে ভর্তা বানাতে হবে।
কালিজিরা ভর্তা
উপকরণ
কালিজিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুন কোয়া ৫টি, শুকনা মরিচ ২টি, ধনে পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, সরষের তেল ১ টেবিল চামচ ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি
কালিজিরা টেলে গ্রাইন্ডার বা শিলপাটায় গুঁড়া করে নিন। এবার শুকনা মরিচ ও রসুন শুকনা খোলায় টেলে নিয়ে সব উপকরণ দিয়ে মেখে নিলেই তৈরি হবে কালিজিরার ভর্তা।
চিংড়ি মাছ ভর্তা
উপকরণ
চিংড়ি মাছ এক কাপ, হলুদ বাটা ১/৪ চা চামচ, কাঁচা মরিচ দুটি, কালিজিরা ১/৪ চা চামচ, পেঁয়াজ তিনটি ছোট আকারের, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, ধনে পাতা দুই টেবিল চামচ, সরিষার তেল এক টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ তিনটি, রসুন এক কোয়া।
প্রণালি
চিংড়ি মাছ, হলুদ বাটা, রসুন, শুকনা মরিচ, সামান্য পেঁয়াজ কুচি প্রথমে সয়াবিন তেলে ভেজে নিতে হবে। তারপর স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে পাটায় বেটে নিতে হবে। এখন সরিষার তেল, ধনে পাতা, পেঁয়াজ কুচি ভালোভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বরবটি ভর্তা
উপকরণ
বরবটি ৬০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, রসুন বাটা ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ১০টি (ঝাল বেশি খেতে চাইলে), হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, লবণ এক চা চামচ, সরিষার তেল দুই টেবিল চামচ, ধনে পাতা কুচি দুই টেবিল চামচ।
প্রণালি
বরবটি ধুয়ে কাঁচা মরিচসহ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একটি প্যানে তেল গরম করে নিতে হবে। গরম তেলে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লবণ ও ব্লেন্ড করা বরবটি পানি না শুকানো পর্যন্ত নাড়তে হবে। ঠান্ডা হলে পেঁয়াজ কুচি, সরিষার তেল ও ধনে পাতা দিয়ে মাখিয়ে পরিবেশন করতে হবে।