কুষ্টিয়ার পোড়া পাউরুটি আর মালাই চা খেতে এত ভিড় কেন?
চারকোনা একটা বনরুটি, ওপরে মধু ব্রাশ করে চুলায় পোড়াতেই বদলে যাচ্ছে ঘ্রাণ আর স্বাদ। ওপরটা শক্ত, ভেতরটা নরম তুলতুলে। মালাই চায়ে চুবিয়ে এই পোড়া পাউরুটি খেতে অনেকেই ছুটছেন মিরপুরের লাভ রোডে।
সাধারণ সময়ে তো বটেই, এমনকি ইফতারের পরও এই দোকানে লম্বা লাইন দিয়ে নিতে হয় খাবার। লাইনে দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা কখনো কখনো এক শও ছাড়িয়ে যায়। তবে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত পোড়া রুটি ছাড়াও এখানে আরও আছে মালাই দেওয়া চা। বাইরের দিকটা সামান্য কড়কড়ে, আর ভেতরে নরম পোড়া রুটি গরম মালাই চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার স্বাদটা দারুণ! এই মালাই চা আর পোড়া রুটির যুগলবন্দী যেন ঢাকাবাসীর নতুন ক্রেজ।
ব্যস্ত নগরজীবনে যেখানে দুই মিনিটে চা চাই, সেখানে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে চা পাওয়াটা একটু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে যাঁরা এই চা আর পোড়া রুটি একবার খেয়েছেন, তাঁরা বারবার এখানে আসছেন। এমনই একজন মোহাম্মদপুর থেকে আসা সানজিদ ইবনে সাঈদ বললেন, ‘এই লাইন, এই অপেক্ষাই তো মজার অংশ!’
বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার সব ভাইরাল খাবারের স্বাদ নেওয়ার শখ সানজিদের। সন্ধ্যায় তাই ইফতার শেষ করেই ছুটে এসেছেন। সানজিদ বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মালাই চা আর পোড়া রুটির গল্প ফেসবুকে দেখে চলে এলাম আজ।’
এদিকে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেই বন্ধুদের নিয়ে পোড়া রুটি আর মালাই চা খেতে এসেছেন ফয়সাল। বলছিলেন, এই চা আর রুটি খেতেই এবার ঢাকায় তাঁর আসা। মালাই চা আর পোড়া রুটি অসাধারণ লেগেছে তাঁর কাছে।
মিরপুরের এই মালাই চা আর পোড়া রুটি শুধু এখন আর খাবারই নয়, এটি যেন শহরের এক গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার মধ্যে এক ধরনের সামাজিক সংযোগ তৈরি হচ্ছে। অচেনা মানুষেরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গল্পও করছেন কেউ কেউ। আবার কুষ্টিয়ার এই রুটির স্বাদ নিতে নিতে কারও আবার মনে পরে যাচ্ছে নিজেদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা। চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া আমাদের শহরের সংস্কৃতি। মালাই চা আর পোড়া রুটি সেই আড্ডায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
যে উদ্যোক্তার হাত ধরে ভাইরাল হলো কুষ্টিয়ার পোড়া রুটি
মো. শাহেদ শেখের হাত ধরেই মিরপুরে গত বছরের নভেম্বর ‘মুহূর্ত’ নামের এই দোকানের যাত্রা শুরু হয়। বন্ধু মোবাশ্বের মাহির কাছ থেকে চায়ের দোকান দেওয়ার আইডিয়া পান। সঙ্গে পরিবেশন করেন কুষ্টিয়ার পোড়া রুটি। এখন দিনে ১৫০ থেকে ২০০ জন চা–প্রেমীকে পোড়া রুটির সঙ্গে চায়ের স্বাদ দিতে পারছেন তাঁর দোকান থেকে। নারকেলের খোলে বিশেষ ধরনের কাপে পরিবেশন করা হচ্ছে চা। মালাই চায়ের দাম ৫০ টাকা, পোড়া রুটির দাম ২০ টাকা। এখানে মালাই চা ছাড়া আরও পাবেন রসমালাই চা ও দুধ চা। শাহেদ বলছিলেন, ‘অন্য সব স্ট্রিট ফুডের মতোই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। আমরা কুষ্টিয়ার পোড়া রুটিকে চায়ের সঙ্গে ভিন্নমাত্রা দিতে পরিবেশন শুরু করি। কুষ্টিয়ার পোড়া রুটির ঐতিহ্যকে ঢাকার মানুষ যে এভাবে গ্রহণ করবে, তা কল্পনাও করিনি। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর থেকে যেন ঢাকাবাসীর জন্য খাবারের নতুন তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে এই দোকান।’
রুটির মতো এখানে চায়েরও আছে আলাদা বিশেষত্ব। এই চা ঠিক সাধারণ দুধ চায়ের মতো নয়। পুরু স্তরের মালাই, সামান্য মিষ্টি স্বাদ, মুখে নিলে মনে হয় এটা ঠিক চা নয়, অন্য কোনো বিশেষ পানীয়। মোহাম্মদপুর থেকে আসা গালিব সুলতান ওমর বলেন, ‘এই দোকানের গল্প অনেক শুনেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই, এখানে সেই অভিজ্ঞতা পাচ্ছি। এখন দেওয়া হচ্ছে ৫২ নম্বর সিরিয়ালের চা। আমাদের সিরিয়াল ৫৯, এরই মধ্যে ৩০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করছি।’
যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে মিরপুর ১০ এলাকায় চলে যাবেন। সরাসরি মেট্রো দিয়েও চলে আসতে পারেন। সেখান থেকে হাঁটা পথে ৫ মিনিট দূরত্বে মিরপুর ২ এলাকার লাভ রোড। সেই রোডের কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে মিরপুর ১–এর দিকে এগিয়ে গেলেই একটি ক্লাবঘর পাবেন। সেই ক্লাবঘরের পাশের বটগাছের নিচে পাবেন ‘মুহূর্ত’ নামের দোকানটি। এখানেই জমছে শহরের নতুন ভাইরাল চা আর পোড়া রুটির গল্প।