ভাপা নাকি চিতই পিঠা, স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো
শীতকালে সবচেয়ে সহজলভ্য পিঠা হলো ভাপা আর চিতই। রাস্তার ধারের দোকানগুলো থেকেও এই দুই পিঠা কিনে খেতে পারেন। অধিক তাপে তৈরি হয় বলে এই দুই পিঠা থেকে জীবাণু সংক্রমণ হয় না বললেই চলে।
চিতই পিঠায় শুধু চালের গুঁড়ার পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। আর ভাপা পিঠায় চালের গুঁড়াসহ গুড় ও নারকেলের পুষ্টিগুণ মিলবে। তাই চিতই পিঠা অপেক্ষা ভাপা পিঠার পুষ্টিগুণ বেশি।
তবে ক্যালরি মূল্যে হিসাব করলে ভাপার চেয়ে চিতই পিঠার ক্যালরি মূল্য অনেক কম। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমের সুবিধার জন্য চিতই পিঠা খাওয়া ভালো।
শুধু স্থূলতার জন্যই নয়, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাপা পিঠা বেশি খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যাঁরা কিডনির জটিলতায় ভুগছেন, তাঁরা ভাপা পিঠা খেতে চাইলে ক্লিনিক্যাল প্যারামিটারগুলো জেনে ও বুঝে খাবেন, যেমন শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এসবের বর্তমান অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
ভাপা পিঠা
ভাপা পিঠা প্রধানত চালের গুঁড়া ও মিষ্টি গুড় দিয়ে তৈরি হয়। স্বাদ আরও বাড়াতে নারকেল কোরা ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে একটি ভাপা পিঠায় কমপক্ষে প্রায় ৬০০ ক্যালরি থাকে।
চালের গুঁড়া এ পিঠার মূল উপাদান। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ শর্করা, ২ শতাংশ প্রোটিন ও চর্বি থাকে। ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ইত্যাদি ভালো উৎস হিসেবেও আতপ বা সাদা চালের গুঁড়া কাজ করে।
ভাপা পিঠাকে মিষ্টি করার জন্য খেজুরের গুড় দেওয়া হয়। খেজুরের গুড়ে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ (আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি), যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। রক্তস্বল্পতা, বাতের ব্যথা, হজমের সমস্যা ও ঠান্ডা কাশি উপশমে সাহায্য করে। ভাপা পিঠায় ব্যবহৃত নারকেলে ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও পলিফেনলস থাকে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম শরীরে জলীয় ভারসাম্য ঠিক রাখে।
চিতই পিঠা
সাধারণত চিতই পিঠা আতপ চালের গুঁড়া থেকেই তৈরি হয়। যে কারণে এতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। চালের গুঁড়া দ্রুত হজমে সাহায্য করে এবং তাড়াতাড়ি পেট ভরায়। এ ছাড়া চালের গুঁড়া থেকে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন পাওয়া যায়। সামান্য পরিমাণে অন্যান্য উপাদানও থাকে।
চিতই পিঠার ক্যালরি মূল্য ভাপার চেয়ে কম। তবে চিতই পিঠা মিষ্টি গুড় বা চিনি সহযোগে দুধে ডুবিয়ে খেলে ক্যালরি মূল্য বেড়ে যায়। চিতই পিঠা ঝালজাতীয় বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে খাওয়া হয়, যেমন শুঁটকি, ধনেপাতা, শর্ষে ভর্তা ইত্যাদি। এতেও ক্যালরি বাড়ে।
পিঠা খাওয়ার নিয়ম
১. ভারী খাবার খাওয়ার পর পিঠা খাবেন না। পিঠাকে নাশতা হিসেবে না খেয়ে যেকোনো এক বেলার প্রধান মিল বা খাবার হিসেবে গ্রহণ করবেন। চিতই পিঠা দুপুরে বা রাতের ভাত বা রুটির পরিবর্তে দুই থেকে তিনটি খেতে পারেন। ভাপা পিঠাও কোনো বেলার মূল খাবারের পরিবর্তে এক থেকে দুটি খেতে পারেন।
২. যেহেতু পিঠা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, তাই বেশি খেয়ে ফেললে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত হাঁটবেন বা কায়িক পরিশ্রম করে নেবেন।
সাজিয়া মাহমুদ, কনসালট্যান্ট পুষ্টিবিদ, প্যানকেয়ার হাসপাতাল