খাওয়াদাওয়ায় যে ৫ নিয়ম মানলে ওজন কমবেই
যদি প্রশ্ন করা হয়, ওজন কমাবেন কীভাবে? কমবেশি সবাই উত্তর দেবেন, খাবার কম খেয়ে আর ব্যায়াম করে। সত্যিই কিন্তু ওজন কমানোর জন্য আপনাকে এই ২টি মাত্র কাজই করতে হবে। তারপরও কেন অনেকের জন্য ওজন কমানো এতটা কঠিন হয়ে ওঠে, জানেন? কারণ, এই দুই অভ্যাস ধরে রাখা কঠিন। সুযোগ পেলেই হয়তো কেউ এটা-ওটা খেয়ে ফেলেন, নিজেকে সামলাতে পারেন না। মাঝরাতে হয়তো মন চায় একটা পিৎজার ফরমাশ দিতে। রোজকার শরীরচর্চায়ও আসে আলসেমি। কেউ হয়তো ঘুম ভেঙে ছুট দেন অফিসে, রাজ্যের কাজ সেরে বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে ব্যায়াম করার মতো মনের জোর থাকে না। ছুটির দিনের সঙ্গীও সেই আলসেমি। নানা বাহানায় আর ব্যায়াম করা হয়েই ওঠে না।
ব্যায়াম আর খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের কিন্তু কিছু নিয়মকানুনও আছে। একটি বিষয় এর মধ্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো, ওজন কমাতে গিয়ে কোনো বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ করা যাবে না। ধীরগতির একটি পরিকল্পনা সামনে রেখে এগোনোই ভালো। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ। কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছানোর পর তা ধরে রাখাও সহজ। খাবারের তালিকার জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। ব্যায়ামের আগে ‘ওয়ার্ম আপ’ করুন। ব্যায়াম শেষে ‘কুল ডাউন’ করুন। ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে সহজ ও হালকা ধাঁচের ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। কার্যকরভাবে ওজন কমাতে এমন কিছু পরামর্শ দিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট তাসনোভা মাহিন।
খেতে বসে মানতে হবে যে নিয়ম
খাবার শুরু করুন আঁশসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে। এই যেমন নানা ধরনের সবজি সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। সবজি ভাপিয়ে তাতে সুস্বাদু মসলা মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারেন শুরুতে। এরপর আমিষজাতীয় খাবার খেয়ে নিন। হতে পারে এটা মাছ বা মাংস দিয়ে করা কোনো পদ, ডিম বা ডালও হতে পারে। শেষে গ্রহণ করুন শর্করাজাতীয় খাবার, অর্থাৎ, ভাত বা রুটি। সঙ্গেও আবার খানিকটা সবজি যোগ করে নিন। এই ক্রম বজায় রেখে খেলে অল্পক্ষণ পরই ক্ষুধা লাগবে না। অবশ্যই খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে, ভালোভাবে চিবিয়ে। খাওয়ার জন্য ‘ফুল প্লেট’ না নিয়ে একটু ছোট মাপের থালা নিতে পারেন।
সকালের নাশতায় আমিষ ও সবজি
আমাদের দেশে সকালের নাশতা হিসেবে রুটিজাতীয় খাবার বেশি প্রচলিত। কেউ খান হাতে গড়া রুটি, কেউ বা পাউরুটি। রুটির সঙ্গে থাকে আলুভাজি; পাউরুটির সঙ্গে জ্যাম, জেলি বা মাখন। সকালে ভাতও খেয়ে নেন কেউ কেউ, সঙ্গে থাকে সামান্য তরকারি। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নাশতার এই ধারায় কিছু বদল আনতে হবে। সকালে আমিষ খাবেন অবশ্যই। মাছ–মাংসের পদ না হলেও নিদেনপক্ষে ডিম। দুধও খেতে পারেন, তবে চিনি ছাড়া। সঙ্গে অবশ্যই রাখুন সবজি। বাহারি সবজির একটা পদ করে নিলে ঝামেলা কম হবে। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও কিন্তু পর্যাপ্ত আমিষ পেতে পারেন। নানা রকম বীজ আর ডাল আমিষের ভালো উৎস। শিম বা রাজমাও খেতে পারেন, সঙ্গে থাকতে পারে ডাল চচ্চড়ি। এগুলোই পেট পুরে খান। সঙ্গে ভাত বা রুটি যা খাবেন, সেটার পরিমাণ কম রাখুন। অনেকে কিন্তু সকালে বনরুটি, কেক, বাটারবান, হানিবানের মতো ‘রেডিমেড’ নাশতা খেয়ে নেন। এই অভ্যাস বদলাতে হবে।
রোজ ভুসি খেতে পারেন
ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। তবে এটি কিন্তু দেহের জন্য ক্ষতিকর চর্বি কমাতেও কার্যকর। ওজন কমাতে রোজ একবেলা ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। ভুসি ভিজিয়ে রেখে দেবেন না। পানিতে মেশানোর সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলুন।
খাওয়ার আগেই খাওয়া, বাড়ির খাবার খাওয়া
যেকোনো বেলায় মূল খাবার শুরুর আগে একটু বেশি পরিমাণ স্যুপ খেতে পারেন, খাওয়ার মিনিট কুড়ি আগে এক গ্লাস পানিও খেতে পারেন। তাহলে শর্করাজাতীয় খাবার কম খাওয়া হবে। চেষ্টা করুন বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে। রেস্তোরাঁয় গেলে সাধারণত অতিরিক্ত তেল দেওয়া খাবার কিংবা মেয়োনেজ, পনির বা সাদা সসের মতো খাবার খাওয়া হয়। তাই কাজে যাওয়ার সময় বাড়ির খাবার নিয়ে বেরোন। হরহামেশা বন্ধুদের আড্ডায় চিনি ছাড়া এককাপ চা-ই নাহয় চলুক। নিমন্ত্রণে যাচ্ছেন? সেখানে ভালোমন্দ তো খেতেই হবে। কী আর করা! যাওয়ার আগে বাড়িতেই খানিকটা খাবার খেয়ে নিন। নিমন্ত্রণ বাড়ির ‘ভালোমন্দ’ একটু কমই খাওয়া হোক। তবে মিষ্টান্ন, মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন।
লক্ষ্য পূরণে হাল ছাড়বেন না
সারা দিনের কাজের ভেতর ক্ষুধা লাগতেই পারে। হতাশ হবেন না। ভাববেন না—‘আমাকে দিয়ে হবে না।’ সঙ্গে কিছু ফলমূল রাখুন। অল্প অল্প করে পানিও খাবেন সারা দিন। সপ্তাহে আধকিলো ওজন কমানোই কিন্তু দারুণ এক অর্জন। এর চেয়ে খুব বেশি বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন না। একটা ডায়েরিতে নিজের ওজন কমানোর ধারাটা লিখে রাখতে পারেন। নিজের সাফল্যে নিজেই উৎসাহ পাবেন। সপ্তাহে বা দুই সপ্তাহে একবার নিজের পছন্দের কোনো লোভনীয় খাবারও খেতে পারেন অল্পবিস্তর। একেবারে সব বাদ দিয়ে দেবেন না।