বন্ধুদের সঙ্গে হাসি, গান, আড্ডায় চলুক রান্নাও
ধরা যাক বন্ধুরা মিলে ঠিক করলেন কোনো এক বন্ধুর বাড়ি বসে আজ আড্ডা হবে, মজা হবে। জীবনে রং আনার জন্য, মনের পরিচর্যার জন্য বন্ধুদের আড্ডা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো খুবই দরকারি জিনিস—সন্দেহ নেই।
কিন্তু দেখা যায় যে বন্ধুর বাড়ি আড্ডাটা হচ্ছে সে ছাড়া আর বাকি সবাই হই হই করছে, মজা করছে, গল্প করছে আর হোস্ট বন্ধুটি বা তার স্ত্রীটি সারাক্ষণ ব্যস্ত—অতিথি আপ্যায়নে, রান্নাবান্নায়, চা–কফি বানাতে। এত সব সামলে নিমন্ত্রণকর্তা বন্ধুটির আর মজা করা হয়ে ওঠে না। এই আনন্দ থেকে তিনি বঞ্চিতই থেকে যান। সবাই যখন বন্ধু সংসর্গে দিন শেষে ফুরফুরে আর আনন্দিত মনে বাড়ি ফেরেন, তখন সেই বিশেষ বন্ধুটিকে রাজ্যের ক্লান্তি আর অবসাদ ভর করে।
এ সমস্যার তাহলে সমাধান কী?
অনেকেই হয়তো বলবেন, কারও বাড়িতে গেট টুগেদার না করে বাইরে কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসাই সমাধান। তাহলে আর কোনো ঝামেলাই নেই। কিন্তু সব সময় রেস্তোরাঁয় মিলিত হওয়া আসলে সম্ভব না। আর রেস্তোরাঁয় হাত–পা ছড়িয়ে বহুক্ষণ বা গভীর রাত পর্যন্ত মনের আনন্দে আড্ডা দেওয়াও সম্ভব না। আর তা ছাড়া এটি ব্যয়সাপেক্ষ। যদি সবাই মিলে বিল মেটাতে চান, তাতেও সবার পক্ষে রেস্তোরাঁর মান অনুযায়ী একই খরচ বহন করা সম্ভব না–ও হতে পারে। বেশি বেশি রেস্তোরাঁয় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও হানিকর বটে।
তাহলে?
বন্ধুরা প্রায়ই একত্র হয়ে গল্পগুজব বা আড্ডা দেওয়ার অভ্যাসটা ভালো। তা সে যে বয়সের বন্ধুই হোক। এতে মনের বাষ্প দূর হয়, কাজে স্পৃহা আসে, কাটে অবসাদ। কিন্তু আজকাল দেখা যায় সবাই অফিস, কর্মজীবন, সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে আলাদা করে নিয়মিত এমন গেট টুগেদার আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। একজনের ওপর বেশি চাপও পড়ে যায়। কিন্তু চাইলেই এই চাপ অনেকটা কমানো সম্ভব। তার জন্য বন্ধুদের কিছু কিছু বিষয়ে একমত হতে হবে।
মেন্যুতে এমন কিছু রাখুন, যা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতেই রান্না করা সম্ভব। বন্ধুই তো? যাদের রান্না এবং খাবারের জায়গাটা কাছাকাছি, তারা বরং বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে, হাসিতে, আড্ডায় সেরে ফেলুন রান্নাটা। হয়তো কিছু আয়োজন আগেই করে রাখতে হবে। আর মেন্যুতেও জটিল সময়সাপেক্ষ পদ বাছাই না করে মুখরোচক, স্বাস্থ্যসম্মত চটজলদি পদ রাখতে পারেন।
সব সময় বিশাল আয়োজন করতে হবে, এই আইডিয়া থেকে বেরিয়ে আসুন। এখানে মূল উপলক্ষ আড্ডা, খাওয়াদাওয়াটা গৌণ, এটা মনে রাখবেন। অনেকে প্রতিযোগিতা করে রান্নাবান্না ও আয়োজনের চেষ্টা করে থাকেন, অমুকে এত পদ খাইয়েছে, তাহলে আমার আরও বেশি করতে হবে। এটাও ঠিক নয়। যাঁরা আসছেন, তাঁরা আপনার বন্ধুই, বাইরের কেউ নয়। তাই আইটেম কম হলেও তাতে কিছু আসে–যায় না। খিচুড়ি–মাংস বা ভাত–ডিমভুনার মতো সিম্পল খাবারের আয়োজনেও যে তৃপ্তি নিয়ে মন ভরে আড্ডা দেওয়া যায়, তা কিছুদিন অভ্যাস করলেই বুঝবেন। আর বন্ধুদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয়টাই কখনো আসা উচিত নয়। কে কার চেয়ে বেশি খাওয়াতে পারেন বা শো–অফ করতে পারেন, সেটা দেখানোর জায়গা এটা নয়। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে বুঝবেন আপনাদের বন্ধুত্বে ভেজাল আছে।
অন্য বন্ধুরা সবাই মিলে যোগদান করতে পারেন এই আয়োজনে। একেকজন একেক আইটেম করে নিয়ে আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কে কোন আইটেম করবেন, আগে আলোচনা করে নিলে ভালো। কেউ মাংস আনলেন, কেউ ডেজার্ট। এতে একজনের ওপর চাপ কমে।
যাঁর বাড়িতে আড্ডা হবে, তিনি আগেই কিছু খাবার প্রিপারেশন করে রাখতে পারেন, যাতে বন্ধুরা এলে আড্ডায় যোগ দিতে অসুবিধা না হয়। যেমন দু-এক দিন আগেই কাবাব বা চপজাতীয় খাবার তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়, সময়মতো ভেজে নিলেই চলবে। সন্ধ্যায় আয়োজন হলে সকালেই সব রান্না করে ফেলা যায়, পরে শুধু গরম করে নিতে হবে। পোলাও বা খিচুড়ি রান্নার জন্য রাইস কুকারে বসিয়ে রাখলেই হলো। সময়মতো গরম-গরম খাওয়া যাবে।
যদি স্ত্রীর বন্ধুরা আসেন, তবে স্বামীর উচিত হবে এ সময় টেবিল গোছানো, খাবার পরিবেশন বা চা–কফি পরিবেশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া, যাতে স্ত্রী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পারেন। আর উল্টোটাও একইভাবে প্রযোজ্য। বাড়ির ছেলেমেয়েরাও এতে অংশ নিতে পারে। তাহলে যার যার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো সহজ হবে।
শেষ কথা
বন্ধুত্ব একটা খোলা জানালার মতো। নির্মল বাতাস আসে বন্ধুদের সাহচর্যে, মন কোমল ও সুন্দর হয়ে ওঠে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বাড়তি চাপ না নেওয়াই ভালো। রান্না করতে করতে ঘেমেনেয়ে অস্থির মন নিয়ে আড্ডা হবে কখন? যেখানে খাওয়া নয়, বন্ধুদের সঙ্গ পাওয়াই আসল কথা।