লাউগাছের কোনো অংশই নাকি ফেলনা নয়। সব অংশই কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে। লাউয়ের বাকল ভাজি করে খাওয়া যায়, লাউয়ের ডগা খাওয়া যায় শুঁটকি অথবা মাছ দিয়ে, নানান উপায়ে। লাউয়ের বিচি শুকিয়ে ভেজে খাওয়া যায়। লাউপাতার কত যে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার আছে, তা যাঁরা রান্না ভালো জানেন এবং খোঁজখবর রাখেন, তাঁরাই জানেন। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তাজা লাউপাতা দেখে বড় ভাই, বন্ধু শিবলী সাদিককে বললাম, ‘লাউপাতাগুলো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কীভাবে খাব বুঝতে পারছি না।’
সাদিক বলল, ‘আমার বউ দারুণ রান্না করে। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে চলেন রান্না করে ফেলি।’ ফোন দিলাম খুলনার মেয়ে রোজিনা বেগমকে। তিনি উপস্থাপক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তর ঢাকায় কর্মরত। ফোন ধরেই রোজিনা বলেন, ‘ভাইয়া, আপনার রান্নার সিরিজ “গল্পে-আড্ডায় রেসিপি” আমি নিয়মিত পড়ি। আপনি সব সময় দেখেছি শুধু সহজ রান্না খোঁজেন। রান্না কি এত সহজ! রান্না শিখতে চাইলে কেবল সহজ রেসিপি খুঁজলে চলবে না। আপনার রান্নার হাত তো ভালো, আজ আমাদের খুলনা অঞ্চলের একটা রান্না করেন। লাউপাতা দিয়ে কই পাতুড়ি।’
উপকরণ: লাউপাতা, ছয়টি কই মাছ, পেঁয়াজকুচি, আধা কাপ শর্ষের তেল, আধা চা–চামচ করে আদা ও রসুনবাটা, হলুদ, ধনে ও জিরাগুঁড়া (আধা চা চামচ), মরিচের গুঁড়া (এক চা–চামচ), কাঁচা মরিচ ফালি (৭-৮টি), লবণ ও এক টেবিল চামচ শর্ষেবাটা।
‘সবকিছু তো সাধ্যের মধ্যেই ছিল। শর্ষেবাটার কথা বলেই তো ঝামেলায় ফেললেন।’
ঢাকা থেকে রোজিনা বলেন, ‘শর্ষেবাটা তৈরি করা খুবই সহজ। শর্ষে ও একটু পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ফেলবেন। কাজটা আমার স্বামী করে দেবে। যত্ন করে রান্না করবেন। একটা ডিমভাজিও যত্ন ছাড়া মজা লাগে না। রান্না শুরু করেন। আমিও রান্না করব আপনাদের সঙ্গে। লাউপাতা ও কই মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন। মসলাগুলো যাতে ভালোভাবে মাছের ভেতর ঢুকতে পারে, তার জন্য মাছের এপিঠ–ওপিঠ—দুই পাশে একটু হালকা চিরে নিতে হবে।’
‘এখন কি কড়াই গরম করব?’
রোজিনা হেসে বলেন, ‘কড়াই গরম করবেন। তবে আধা ঘণ্টা পর।’
‘এখন কী করব তাহলে?’
‘কাঁচা মরিচ ছাড়া তেল-পেঁয়াজ এবং অন্য যত মসলা আছে, সব ভালো করে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিন। মাছগুলো এবার এই মসলা দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। আধা ঘণ্টা পরে ৬টি আস্ত লাউপাতার ভেতরে মসলাসহ কই মাছ ফালি করে কাটা কাঁচা মরিচসহ সুতা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। তারপর চুলায় কড়াই বসাবেন।’
‘তেল তো সব মসলার সঙ্গে মিশিয়েছি। কড়াইয়ে কি নতুন করে তেল দিতে হবে?’
‘কোনো তেল দিতে হবে না আর। আপনি দুই কাপ পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে লাউপাতায় বেঁধে রাখা কই মাছগুলো ফুটন্ত পানির ভেতর ছেড়ে দিন।’
‘দেশে তেলের দাম বাড়ার কারণে পানি দিয়ে রান্না করছেন নাকি?’
রোজিনা বললেন, ‘আরে না। এটা আমাদের খুলনার ঐতিহ্যবাহী একটি রান্না। এবার মিডিয়াম আঁচে ঢাকনা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট জ্বাল দিন। পানি শুকানো পর্যন্ত জাল দিতে থাকুন। মাঝে একবার কই মাছগুলো উল্টে দিতে হবে। পানি শুকানো হয়ে গেলে রান্না শেষ! এবার হালকা ঠান্ডা করে গরম ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। সুতা নিজে খুলে পরিবেশন করতে পারেন অথবা যিনি খাবেন, তিনি সুতা খুলেও খেতে পারেন।’
রান্না শেষে রোজিনা আপুকে বলি, ‘এই রান্না তো দেখি অন্য রান্নার চেয়েও সহজ।’
এমন মজার স্বাদ লিখে বর্ণনা করা যাবে না। রেসিপি দিয়ে দিলাম। নিজে রান্নার চেষ্টা করে দেখুন, তখনই বুঝতে পারবেন, এর স্বাদ অনন্য।