টাকি মাছের পুরি খেয়েছেন? দেখুন পুরান ঢাকার বিল্লাল হোসেনের দেওয়া রেসিপি
বেশ কদিন ধরেই বন্ধুর মুখে টাকি মাছের পুরির প্রশংসা শুনছিলাম। শীতের সন্ধ্যায় গরম–গরম খেতে নাকি বেশ লাগে। কিন্তু শুধু পুরি খেতে মিরপুর থেকে পুরান ঢাকায় যাওয়া ঠিক হবে কি না, সেটাই ভাবছিলাম। হঠাৎ মতিঝিলে একটা কাজ পড়ে গেল। তাই কদিন আগে সন্ধ্যায় চলে গেলাম টাকিপুরির সন্ধানে।
মতিঝিলের মেট্রোরেলের স্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটারের পথ। দামাদামি করে রিকশাভাড়া নিল ৭০ টাকা। গুগল ম্যাপের যুগে আজকাল ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার দরকার পড়ে না। তবু ‘খান হোটেল’ নামটা ওয়ারীর কয়েকটা মোড়ে জিজ্ঞেস করে বোঝা গেল, টাকি মাছের পুরির জন্য এলাকায় এই হোটেল বেশ সুপরিচিত।
টিপু সুলতান রোড থেকে কয়েক কদম ভেতরে যেতে হয়। পুরো ঠিকানা—জোড়পুল লেন, টিপু সুলতান রোড, ওয়ারী, ঢাকা-১১০০। দূর থেকেই চোখে পড়ল খদ্দেরের ভিড়। হাঁকডাকে নিশ্চিত হওয়া গেল, বেশির ভাগ মানুষই টাকিপুরি কিনতে এসেছেন। চোখের সামনেই কড়াই থেকে নামছে গরম পুরি। আর প্যাকেটে বন্দী হয়ে উঠছে অপেক্ষমাণদের হাতে।
খান হোটেলের সামনে গিয়ে মালিক বিল্লাল হোসেনের খোঁজ করতেই এক কর্মচারী বললেন, ‘ওই তো, আপনার পাশেই মহাজন দাঁড়িয়ে আছেন।’
মহাজন বিল্লাল হোসেন তখন পরদিনের পুরির জন্য ময়দা ও সবজির হিসাব কষছিলেন। সালাম দিতেই একগাল হাসলেন।
জানা গেল, প্রায় ৩০ বছর আগে বাবা ইসমাইল খান এই খাবারের দোকানের গোড়াপত্তন করেন। তখন শুধু আলুপুরি ও ডালপুরি পাওয়া যেত। তবে টাকি মাছের পুরি চালু করেন বিল্লাল নিজেই।
শুরুর দিকের কথা জিজ্ঞেস করতে বললেন, ‘প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। বাসায় বাঁইচা যাওয়া কিছু টাকি মাছ একদিন দোকানে নিয়া আসি। ভাবলাম, ভাত দিয়া খাইতে তো ভালোই লাগে, পুরি বানাইলে কেমন হয়। আমার বাসার জন্য কিছু পুরি বানাই। খাইয়া দেখি, মজা লাগে। মনে হইল, এটা বিক্রি করা যায়। পরে এই পুরি বিক্রি কইরা অনেক সাড়া পাইছি। যাঁরা একবার খাইছেন, পরে আইসা তালাশ করছেন।’
টাকি মাছের দাম কম থাকায় শুরুর দিকে মাছ একটু বেশিই দেওয়া হতো পুরিতে। এখন মৌসুমভেদে এই পরিমাণ কমবেশি হয়। শীতে যেমন বেশি পাওয়া যায় বলে পুরিতেও টাকি মাছের পরিমাণ বেশি থাকে।
টাকিপুরির রেসিপি
কীভাবে বানানো হয় এই পুরি? নিঃসংকোচে রেসিপি বলে দিলেন মধ্যবয়সী বিল্লাল হোসেন। তাঁর স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে বাসাতেই টাকি মাছ সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে আলাদা করা হয়। এরপর আদা, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, গরমমসলা দিয়ে বানানো হয় কিমা। দোকানে এনে মাছের সঙ্গে আলু মিশিয়ে তৈরি হয় পুর। এই পুরের জন্যই যত খ্যাতি।
দাম কেমন
৫ টাকা দিয়ে শুরু হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছের প্রতিটি পুরি। খান হোটেলে এই পুরি পাওয়া যায় বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। সঙ্গে দেওয়া হয় শর্ষেবাটা, টক দই, তেঁতুল, কাঁচা মরিচ, ধনেবাটা ও লবণ দিয়ে বানানো চাটনি। এই চাটনি দিয়ে গরম টাকি মাছের পুরি এককথায় দারুণ।
পুরি নিয়ে মানুষের এত আগ্রহের বিষয়ে বিল্লাল হোসেন বললেন, ‘এলাকার মানুষ অনেক পছন্দ করেন। দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন। দামও একই রাখছি। কারণ, অল্প টাকায় সুস্বাদু একটা নাশতা খাওয়াইতে চাই।’
দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুরি বিক্রি হয়। তবে ছোট এই খাবার দোকানে বসে পুরি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দাঁড়িয়ে বা বাসায় এনে খেতে হবে। অবশ্য পাশেই একই নামে বিল্লালের আরেকটা হোটেল বা খাবারের দোকান আছে। সেখানে বসে খাওয়া যায়।
আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা বুট, ঘুগনি—সব মিলিয়ে দিনে ১২-১৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করেন বিল্লাল। তবে টাকি মাছের পুরিই তাঁর তুরুপের তাস।