মিরপুরে গড়ে উঠছে লাইভ ব্রেডের দোকান
মেট্রো ট্রেনে করে ছুটছি। সঙ্গী হাজারো নগরবাসী। অফিস শেষে ফিরছেন সবাই বাড়িতে। আমার গন্তব্য কাজীপাড়ায়। উদ্দেশ্য—ঢুঁ মারব লাইভ ব্রেড বানানোর দোকানে। ঢাকায় এখন ভিন্নধর্মী খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। দোকান থেকে প্যাকেটজাত ব্রেড বা পাউরুটি তো সব সময় পাওয়া যায়। নতুন চমক হিসেবে এখন আপনার সামনেই ব্রেড বানিয়ে প্যাকেটে ভরে দেওয়া হচ্ছে, গরমাগরম। অনেক এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে গড়ে উঠেছে এই দোকানগুলো। দোকানের মধ্যেই রুটি বানানোর ওভেন থাকে। গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে সরাসরি লাইভ ব্রেড বানিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা।
কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের প্রধান সিঁড়ির পাশেই দেখা মিলল লাইভ ব্রেডের দোকান। নানা বয়সের মানুষ বেশ আগ্রহ নিয়ে কিনছেন রুটি। অধিকাংশ ক্রেতা অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। একটু পরপর মেট্রো স্টেশন থেকে যখন যাত্রীরা নামেন, দোকানের সামনে তখন রুটি কেনার ভিড়ও বেড়ে যায়। রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায় দোকানি সেলিম মিয়া আর মো.বাদশাহকে। প্যারিস পেস্ট্রি, বিসমিল্লাহ লাইভ ব্রেডসহ কয়েকটি দোকান আছে এ রকম। ‘দোকান বলাটা অবশ্য ভুল হবে, এগুলো আসলে বেকারি’—দোকান খোঁজার সময় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ এভাবেই সংশোধন করে দিলেন। তিনি সপ্তাহে দু–তিনবার লাইভ ব্রেডের দোকান থেকেই রুটি কেনেন এখন।
ছোটবেলার ব্রেড
‘সাতসকালে অফিসে বের হতে হয়, তখন হাতে সময় থাকে না যে বাড়িতে রুটি বানাব। ব্রেডের ওপরে ভরসা করেই নাশতা সারতে হয়। আগে সুপারশপ থেকে পাউরুটি কিনে সকালে নাশতা করতাম। একদিন বাড়ি ফেরার পথে লাইভ ব্রেড বানানোর দোকানটিতে চোখ আটকে যায়। ছোটবেলায় পাড়ায় এমন ব্রেডের বেকারি ছিল। মাঝখানে অনেক বছর দেখিনি। এখন এই লাইভ ব্রেডের দোকান থেকেই রাতে রুটি নিয়ে যাই বাড়িতে।’ এভাবেই দোকানে রুটি কিনতে কিনতে কথা বলছিলেন জেসমিন খান। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়ায় মেট্রো স্টেশনের আশপাশে এমন কয়েকটি লাইভ রুটি বানানোর দোকান চোখে পড়ে।
সরাসরি রুটি বানানো হচ্ছে দোকানে
মিরপুরের বিক্রেতা সেলিম মিয়াকে দোকানে বেশ ব্যস্ত দেখা গেল। একটু পরপর রাস্তার ফুটপাত ধরে যেই যাচ্ছেন, জিজ্ঞেস করছেন দাম কেমন। কয়েক মাস হয়েছে লাইভ ব্রেড তৈরির দোকানে হরেক রকমের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন সেলিম মিয়া। তিনি জানান, দোকানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ব্রেড। আমার দোকানেই রুটি বানানোর সবকিছু থাকে। ক্রেতা যখনই চান, সামনেই তৈরি করা হচ্ছে ব্রেড।
দোকানের ভেতরে উঁকি মারলে ক্রেতা দেখতে পারেন বিশাল এক ডেক ওভেন। ডেক ওভেন থেকে বের করা হচ্ছে মাত্র বানানো ধোঁয়া ওঠা ব্রেড। ব্রেড ছাড়াও নানা পদের কেক তৈরি হচ্ছে এই মেশিন দিয়েই। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল কেক, পেস্ট্রি, চিকেন প্যাটিস, পিৎজা, প্লেন কেক, আপেল বান, বাটার বান, ফ্রুট বানসহ নানা পদের ব্রেড। দোকানেই রাখা হয়েছে ময়দা, দুধ, চিনি, লবণ, মাখন আর ইস্টের মতো উপকরণগুলো। দামও হাতের নাগালে। বড় ব্রেড ১০০ টাকা, অর্ধেক ব্রেড ৫০ টাকা, বাটার বান ৩০ টাকা, আপেল বান ২০ টাকা, ফ্রুট বান ৪০ টাকা।