সাদিয়া সাজ্জাদ আমার বন্ধু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে থিয়েটার করতাম। ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার তাঁর রান্না করা খাবার খেয়েছি। সেই স্বাদ ভোলার নয়। এখনো রান্না নিয়ে সে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালায়। একদিন ফোন করে বললাম, কাল বাদে পরশু কোরবানি ঈদ, বাসায় প্রচুর মাংস জমে যাবে। মাংস দিয়ে ভিন্ন স্বাদের একটা খাবার বলো তো, যা সহজে তৈরি করতে পারব। খুলনার মেয়ে সাদিয়া কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স কোয়ার্টার থেকে উত্তর দেয়, 'আমার এক্সপেরিমেন্টাল একটা কাবাব আছে, এটা তৈরি করতে পারো।’ ‘কাবাবের মধ্যে আবার তোমার এক্সপেরিমেন্ট! আমাকে ঝামেলায় ফেলার এত ইচ্ছা কেন বলো তো?’ জানতে চাইলাম।
সাদিয়া হাসতে হাসতে বলে, ‘উপাদান সব তোমার হাতের নাগালেই আছে। আমার এক্সপেরিমেন্টের ওপর ভরসা রাখো। আর তোমাকে যদি ভুলভাল রেসিপি দিই, তাহলে তো জানি তুমি কী করবা! ফেসবুকে ট্যাগ দিয়ে আমাকে পচাবা। সেই ঝুঁকি আমি নেব না। কাবাবটা সবাই প্রশংসা করেছে। আমার নিজেরও ভালো লেগেছে। এ জন্য তোমাকে বলছি। আগে টুকে নাও। পরে ধন্যবাদ দিয়ো।'
‘ওকে, কী কী উপাদান আগে শুনি!’
১. গরুর বা খাসির মাংসের কিমা: ৫০০ গ্রাম
২. পেঁয়াজকুচি: ২ টেবিল চামচ
৩. হলুদ, সবুজ এবং লাল ক্যাপসিকাম: প্রতিটি ক্যাপসিকামের তিন ভাগের এক ভাগ।
৪. রসুনকুচি: ৪ কোয়া
৫. আদাকুচি: আধা ইঞ্চি পরিমাণ
৬. কাঁচা মরিচকুচি: ৭টি
৭. ধনেপাতা: ২ টেবিল চামচ
৮. ভাজা শুকনা মরিচগুড়া: ১ টেবিল চামচ
৯. গোলমরিচগুঁড়া: ১ টেবিল চামচ
১০. লবণ: আধা টেবিল চামচ
১১. কয়লা: ৪ টুকরা
১২. ঘি: ১ টেবিল চামচ
হ্যাঁ, উপাদানগুলো অবশ্য একেবারে হাতের নাগালে! এমন মন্তব্য শুনে সাদিয়া বলে, ‘মসলা বাটাবাটির ঝামেলা ছাড়া শুধু কাটা মসলা দিয়ে কাবাব তৈরির কথা শুনেছ কখনো? মজার এ কাবাবটি তৈরি করা একদম সহজ । আধা ঘণ্টার মধ্যে কাবাব তৈরি করে ফেলতে পারবা । শুরু করো।’
‘৫০০ গ্রাম মাংসে একে একে সব উপকরণ মেখে নিয়ে কাবাবের আকারে গোলা করে বানিয়ে নিতে হবে।’
‘কয়লাও এসব উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলব নাকি?’ মজা করে জানতে চাইলাম। সাদিয়া কিন্তু কথাটা সিরিয়াসলি নিল! ফোনের ওপাশ থেকে চিৎকার করে বলল, ‘না। তোমাকে তো দেখছি এখন পই পই করে সব বলতে হবে। কয়লা আর ঘি মেশাতে হবে না। খেয়াল রাখবা কোনো উপকরণে যেন পানি না থাকে। বিশেষ করে পেঁয়াজকুচি আর ক্যাপসিকামকুচি খুব ভালোভাবে হাত দিয়ে চিপে রস বের করে নিতে হবে।’
‘রস বের করে নিলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে না?’
‘স্বাদের কোনো হেরফের হবে না। পেঁয়াজে যদি রস থাকে, তাহলে কাবাব ভাজার সময় ফেটে অথবা ভেঙে যাবে। এ কাবাবে আমরা কোনো ডিম বা কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার করছি না। তাই এই বিষয়টি খুব খেয়াল করতে হবে। এবার চুলায় একটি ফ্রাইং প্যানে সামান্য সয়াবিন ও শর্ষের তেল দিয়ে কাবাব ভাজতে হবে।’
‘আগুন কি পুরা মাত্রায় দিয়ে দেব?’
‘না। চুলার আঁচ হবে মাঝারি।’
‘তুমি না বললা স্মোকি কাবাব? ভাজা তো হয়ে গেল। স্মোকিং কীভাবে হবে বুঝলাম না?’
‘তোমাকে কি বলেছি আমার রেসিপি শেষ হয়ে গেছে? এখন শোনো, চুলায় তিন–চারটি কাঠের কয়লা আগুনে গরম করে একটি বাটিতে তোলো। এবার জ্বলন্ত কয়লার ওপর এক টেবিল চামচ ঘি ঢেলে দাও। ধোঁয়া বের হলে বাটিটি ভেজে রাখা কাবাবের মাঝখানে দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ১৫ মিনিটের জন্য। এমনভাবে আটকাবে যাতে ভেতরের ঘ্রাণ বাইরে বেরিয়ে না পড়ে। ভেতরে আটকে থেকে খাবারের কণার ভেতরে পৌঁছে যায়। এতে কাবাবে একটা স্মোকি গন্ধ আসবে।’
এত সহজে আলাদা স্বাদের কাটা মসলার স্মোকি কাবাব হয়ে যাবে চিন্তাও করিনি। স্মোকি সুবাস পেট, মন মাতিয়ে তোলে। এই ঈদে আপনার মেহমানদের এই কাবাবটি একবার পরিবেশন করেই দেখুন!