সাথী খান। ঢাকায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। রান্না করাটা তাঁর কাছে শখের চেয়েও বেশি কিছু। ‘আম্মুস রেসিপি’ নামে হোম মেড ফুড পেজের কর্ণধার তিনি। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন ওনার রান্না করা খাবার খেয়ে ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তাই সাথীকে ফোন করে বললাম, কাঁঠালের বিচি দিয়ে সবজির রেসিপি লেখার পর অনেকে কাঁঠালবিচি দিয়ে শুঁটকি রেসিপি চাইছে। নিজেরও খুব খেতে ইচ্ছা করছে। কী করা যায় বলুন তো?
সাথী স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, একদম সহজ। তিন মিনিটে আপনাকে রেসিপি বলে দেব। আপনি আধা ঘণ্টায় রান্না করে ফেলতে পারবেন। আমি বললাম, ‘শুঁটকি রান্নার কথা শুনলেই মনে হয় ঝামেলা। আসলেই ঝামেলা, নাকি মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন!’ অভয় দিয়ে সাথী বললেন, ‘আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে রান্না শুরু করে দিন তো।’ রান্না যে শুরু করব, কী কী উপাদান লাগবে, তা আগে বলুন। বাসায় আছে কি না দেখি। উপাদান শুনে নিজেই অবাক হলাম। এত কম উপাদানেই রান্না হয়ে যায়!
প্রয়োজন ক্রমানুসারে উপকরণ: শর্ষের তেল, লবণ, লইট্টা শুঁটকি, পেঁয়াজ ও রসুনকুচি, হলুদ ও মরিচগুঁড়া। ৩–৪টা কাঁচা মরিচ ও কাঁঠালের বিচি।
‘আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে। আপনি ঝটপট শুরু করে দিন। যতটুকু কাঁঠালবিচি নেবেন, তার অর্ধেক পরিমাণ নেবেন শুঁটকি। কাঁঠালবিচি ও শুঁটকি অনেকটা সমান সাইজ করে কাটবেন। কেবল নিজের জন্য রান্না করলে ২০–২৫টি কাঁঠালের বিচি খোসা ছাড়িয়ে ঠান্ডা পানিতে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পাঁচ-ছয়টি লইট্টা অথবা যেকোনো বড় মাছের শুঁটকি সামান্য লবণ দিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কাঁঠালবিচির সমপরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুন কেটে নিন। আপনার রান্নার জন্য লাগবে বড় সাইজের ৩–৪টা রসুন। আর দুইটা বড় পেঁয়াজ।’
‘এইবার চুলায় কড়াই বসান। তেল গরম হলে সামান্য লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখা শুঁটকি পানি ছাড়িয়ে বাদামি রঙের করে ভেজে নিন। শুঁটকিগুলো যেন ভেঙে না যায়, তাই তেল থেকে তুলে অন্য আরেকটা পাত্রে রাখুন। এবার একই তেলে পেঁয়াজ ও রসুনকুচি দিয়ে দুই মিনিটের মতো ঢেকে রাখুন। তারপর দিয়ে দিন এক চা–চামচ হলুদ আর ২ চা–চামচ মরিচ। কড়াইয়ে লেগে যাওয়ার উপক্রম হলে এক কাপ গরম পানি দিন। ভালো করে মসলা কষিয়ে নিন।’
‘মসলা ভালো করে কষানো হয়েছে কি না, বুঝব কীভাবে?’
‘যখন দেখবেন তেল ওপরে ভেসে উঠেছে, বুঝবেন মসলা কষানো হয়েছে। এবার ভিজিয়ে রাখা কাঁঠালবিচিগুলো দিয়ে দিন। সামান্য নাড়াচাড়া করে ঢেকে রাখুন ৫ মিনিট। এবার ভেজে রাখা শুঁটকিগুলো দিয়ে আরেকটু নাড়াচাড়া করুন, যেন মসলাগুলো শুঁটকিতে লাগে। একটু একটু করে আরও দুই কাপ পানি দিন। কাঁঠালবিচি সেদ্ধ হয়েছে কি না, পরীক্ষা করে দেখুন। এবার চারটি কাঁচা মরিচ ফালি করে কেটে ঢেকে রাখুন। তাতে কাঁচা মরিচের ঘ্রাণটা ঢুকে পড়বে রান্নার ভেতর। আর কেউ চাইলে কাঁচা মরিচ নিয়ে ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে খেতে পারবে। মাখা মাখা হয়ে গেলে নামিয়ে নেবেন।’
রান্না শেষে সাতীকে ফোন করে আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘এত সহজে রান্না হয়ে গেল? রান্না যে করলাম বুঝতেই পারলাম না তো!’
‘জি জনাব, আপনাকে আগেই বলেছি, এই রান্নাটা একদম সহজ।’
এখানে বলে রাখি, যেহেতু এখন কাঁঠালের সময়, অনেক বিচি একসঙ্গে জমা হয়ে যায়। তাই বলছি, কাঁঠালের বিচি হালকা সেদ্ধ করে জিপার প্যাকেটে করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলে ১২ মাস কাঁঠালবিচির স্বাদ নিতে পারবেন।