আলু, হাঙর, ভুট্টা আর ফুগুর গল্প
বিভিন্ন জাতির খাদ্যবৈচিত্র্য তাদের ইতিহাস, রুচি আর সংস্কৃতির স্বাক্ষর বহন করে। পাস্তা আর পিৎজা তাদের জন্মের উৎসকে অতিক্রম করে ইতালির নাম পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বদরবারে। অন্যদিকে জগৎ–জয়ী ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ফরাসি আবিষ্কার না হয়েও ফ্রান্সের জন্য সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিটি জাতির খাদ্যের পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো আকর্ষণীয়, অনুপ্রেরণামূলক বা মর্মান্তিক গল্প। জেনে নেওয়া যাক, সে রকমই কিছু খাদ্যের উৎপত্তি আর জনপ্রিয়তার রহস্যের গল্প।
আলুর ওপর নির্ভরশীল ছিল আইরিশ জনগণ
পান্নার দ্বীপ আয়ারল্যান্ডের মাটি চাষাবাদ উপযোগী নয়। ফসলের অপর্যাপ্ত উৎপাদন সে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্তরায় ছিল। ইউরোপে আলুর আবির্ভাব আয়ারল্যান্ডের কপাল খুলে দেয়। কারণ, অন্য ফসলের তুলনায় আলু অনুর্বর মাটিতে অধিক ফলে। ১৮৪৫ সালের দুর্ভিক্ষের আগপর্যন্ত আইরিশ জনগণ পুষ্টির জন্য আলুর ওপর নির্ভরশীল ছিল। সে বছর, বিধ্বংসী ছত্রাকের আক্রমণে গোল আলুর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ইংরেজদের ঔপনিবেশিক অবহেলায় পরিস্থিতি অসহনীয় রূপ ধারণ করে। আইরিশ জনতা সেই অনাহার আর দারিদ্র্য জয় করে বেঁচে থাকার স্পৃহাকে এখনো উদ্যাপন করে ‘কোলকানন’–এর মতো আলুপ্রধান খাবার খেয়ে। সেদ্ধ আলু ভর্তা করে তার মধ্যে মাখন ঢেলে বাঁধাকপি আর পেঁয়াজপাতা মিশিয়ে বানানো হয় কোলকানন।
মানবসভ্যতায় কৃষির শ্রেষ্ঠ অবদান ভুট্টা!
উত্তর আমেরিকায় ১৪৯২ সালে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন কালক্রমে ভুট্টাকে বিশ্বজনীন পরিচিতি দেয়। কিছু লোক মনে করেন, মানবসভ্যতায় কৃষির শ্রেষ্ঠ অবদান ভুট্টা। মেক্সিকোর বাসিন্দাদের জন্য ভুট্টা আরও বড় কিছু। মেক্সিকোর আদিবাসীরা প্রায় ১০ হাজার বছর আগে ভুট্টা আবিষ্কার করে। এটা ছিল তাদের প্রধান শস্য। মায়ানরা (মেক্সিকান জাতিগোষ্ঠী) বিশ্বাস করত যে তাদের সৃষ্টিকর্তা মানবজাতিকে সাদা ভুট্টার বীজ থেকে জন্ম দিয়েছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সচ্ছলতা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় আমলের অভাব—সুখ-দুঃখের প্রতিটা অধ্যায়ে ভুট্টা মেক্সিকোর মানুষকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। তারা ভুট্টা গ্রিল করে পনির আর মরিচ মিশিয়ে খায়, যাকে বলা হয় এলোটে।
১৭৬ জন মারা গিয়েছিলেন ফুগু খেয়ে
চিকনভাবে কাটা যেকোনো কাঁচা মাছকে জাপানি ভাষায় ‘সাশিমি’ বলে। জাপানিরা সাশিমি বানিয়ে একধরনের পটকা মাছ খায়, যার নাম ফুগু। এই মাছের যকৃৎ আর চামড়া সায়ানাইডের চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি বিষাক্ত। এসব অঙ্গ না ফেলে খাওয়ার কারণে ১৯৫৮ সালে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়। জাপানের ইদো যুগে (১৬০৩ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত) ফুগু খাওয়াকে পুরুষত্বের পরিচয় মনে করা হতো। কেউ খেতে নারাজ হলে সে কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হতো। শুধু বিবাহিত পুরুষেরা ফুগু খাওয়া থেকে অব্যাহতি পেত। বর্তমানে জাপানের সরকার ফুগু খাওয়ার ঝুঁকি বিবেচনা করে ফুগু প্রস্তুতির জন্য বিশেষ লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে।