২০২৪ সালে জীবনে উন্নতি করতে চাইলে যে ৭টি বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম মেনে চলবেন
এসেছে নতুন বছর। পুরোনো ক্যালেন্ডারের জায়গা দখল করে নিয়েছে নতুনটা। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে ‘পুরোনো’ আপনিও কি একটু ‘নতুন’ হতে পেরেছেন? বিশ্বের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ জনই নতুন বছরের জন্য আগে থেকে কিছু লক্ষ্য বা পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন। কিন্তু মাত্র ১৭ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যক্তিই বছরের প্রথম মাস পর্যন্ত সেই লক্ষ্য অর্জনে লেগে থাকেন, এরপর কোনো কারণে হাল ছেড়ে দেন। শুরুর ধাক্কা সামলে যাঁরা টিকে যান, তাঁদের বেশির ভাগই বছরের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে থমকে যান। বছরের শুরুতে পরিকল্পনা করে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার দৌড়ে অবশ্য মার্কিনরা বাকিদের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইন্টারনেটভিত্তিক বাজার গবেষণা ও তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউগভের একটি সমীক্ষা বলছে, ২০২৩ সালে বছরের শুরুতে যেসব মার্কিন নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই এ ক্ষেত্রে বেশ সফল! চাইলে আপনিও পারবেন মার্কিনদের মতো এ ক্ষেত্রে সফল হতে, পারবেন নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে, যদি মেনে চলেন এই ৭টি বিশেষ উপায়।
১. ঘুম হবে নিয়মমাফিক এবং লম্বা
নতুন বছরে সবার আগে যা করবেন, তা হলো সঠিক ও পর্যাপ্ত ঘুমের রুটিন ঠিক করে ফেলা। বছরের শুরুর দিকে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বিরাজ করে শীতকাল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা ইউরোপের দেশগুলোর মতো আমাদের বাংলাদেশও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। গবেষণা বলছে, শীতে যতটা পারা যায়, বেশি ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো। আপনিও শীতকালে যতটা পারেন বেশি ঘুমানোর চেষ্টা করুন। জার্মানির একটি গবেষণা বলছে, উত্তর গোলার্ধের মানুষ প্রতিবছরের জুন মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে গড়ে এক ঘণ্টা বেশি ঘুমান। এখন প্রশ্ন হলো, রোজকার ব্যস্ত শিডিউলে কীভাবে একটু বেশি ঘুমিয়ে নেবেন? সহজ সমাধান হলো, রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিছানায় যেতে হবে। ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে থেকে তীব্র আলোয় যাবেন না। সন্ধ্যার পর থেকে স্মার্টফোনে হাত না দিলেই সবচেয়ে ভালো হয়। স্মার্টফোনের জ্বলজ্বলে আলো আপনার চোখে ঘুম নামতে বাধা দেবে। প্রতিদিন রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে একটু বেশি ঘুমিয়ে নিলে আপনি দ্রুত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
২. শরীরের যত্ন নিন
বছরের শুরুর দিকে আমাদের দেশে শীতকাল থাকে। শীতকালে যখনতখন শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। সোজা বাংলায় যেটাকে বলে শরীর ম্যাজম্যাজ করা। এর থেকে বাঁচতে পায়ে ম্যাসাজ করা, নাচানো কিংবা আঙুল ফোটানোর মতো কাজগুলো করতে পারেন। এসব কাজ অবচেতন মনেই হয়ে থাকে। তা হলেও এসব ছোট কাজ আমাদের দেহের ক্যালরি ভেঙে মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
শীতের বিকেলে বাইরে বেরিয়ে একটু ব্যায়াম করে আসতে পারেন। এতে আপনার হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকবে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং মেদ ঝরে ওজনও কমে যাবে। পার্কে বা মাঠে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় পেছন দিকে বা উল্টো দিকে হাঁটতে পারেন। এটাও একধরনের ব্যায়াম। পেছন দিকে হাঁটলে শরীরে জমে থাকা ক্যালরি বেশি ক্ষয় হয় এবং দেহের পেছন দিকের পেশিগুলো বেশ শক্তিশালী হয়। সেই সঙ্গে হাঁটুর সন্ধির ব্যথা দূর হয়, হ্যামস্ট্রিং নমনীয় হয় এবং মস্তিষ্ক চাঙা থাকে।
ত্বকেরও বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। ময়েশ্চারাইজার লোশন বা সানস্ক্রিন মাখলে শীতে ত্বক সহজে শুষ্ক হয় না। এতে ত্বক থাকবে টান টান, আপনাকে দেখাবেও তরুণ।
৩. মনটাও সতেজ রাখুন
জীবনের ছোটখাটো উপলক্ষগুলো উপভোগ করতে শিখুন। ধরুন বিকেলে একটু হেঁটে বেড়ানো, চলার পথে হঠাৎ কোনো আগন্তুকের উপস্থিতি কিংবা গোধূলিতে এককাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দেওয়া—সবকিছুই চাইলে উপভোগ করা যায়। প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয়গুলো উপভোগ করতে পারলে আপনি হবেন আরও সুখী, আরও উদ্যমী। জীবনের মানে খুঁজে পাবেন সহজেই। নতুন কিছু ‘দক্ষতা’ আয়ত্ত করে ফেলতে পারেন। এসবই আপনার মনকে রাখবে শান্ত ও সতেজ।
৪. সম্পর্কগুলো মজবুত করুন
বন্ধু থাকা ভালো। ভালো বন্ধু আপনার জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। ব্যস্ত জীবনে ভালো ও সুস্থ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দৃঢ় রাখতেও ভূমিকা রাখতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে শেখা যায় অনেক কিছুই। বন্ধুর কোনো ভালো দিক থাকলে তা সহজেই আপনার মধ্যে বিকশিত হতে পারে। তবে ভালো কিছুই গ্রহণ করবেন। খারাপ কোনো কিছুকে কখনোই প্রশ্রয় দেবেন না। এ ছাড়া আশপাশে ভালো মানুষের উপস্থিতি আমাদের আচরণেও ভালো প্রভাব রাখে। তবে সঠিক বন্ধু নির্বাচনে ভুল করবেন না। একটা ভুল সিদ্ধান্ত আপনার সুন্দর জীবনেও ডেকে আনতে পারে বড় কোনো বিপদ।
৫. কী খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন, সেদিকে নজর দিন
ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসজুড়ে নানা ধরনের উৎসব-আয়োজন লেগেই থাকে। বিশেষ করে এটা বিয়ের মৌসুম। এসব অনুষ্ঠানে হরেক স্বাদের খাবারের আয়োজন থাকে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তা কমবেশি খেতে হয়। তবে এসব খাবার একটু ভেবেচিন্তে খেলে স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। যখনই কোনো খাবার খাবেন, তা যেন সুষম পুষ্টিযুক্ত হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। জাঙ্ক ফুড যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। জাঙ্ক ফুড আমাদের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।
খাদ্যতালিকায় শাকসবজি যেন বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাই বলে শুধু যে সবুজ রঙের শাকসবজিই খাবেন, তা নয়। শাকসবজির সঙ্গে রঙিন সব ফলমূলও তালিকায় রাখুন। এসব সুষম খাবার আপনার মস্তিষ্ক সতেজ রাখবে এবং হৃদ্রোগের হাত থেকেও রক্ষা করবে।
কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ভালো। চালিয়ে যান। গবেষণা বলছে, যাঁরা নিয়মিত কফি খান, তাঁরা ক্যানসার ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকেন। তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না যেন।
৬. ফিটনেস ধরে রাখুন
বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করলে শরীরে শক্তি পাবেন। মানসিক স্বাস্থ্যও বেশ ভালো থাকবে। দিনে গড়ে পাঁচ হাজার কদম হাঁটার অভ্যাস করুন। হেঁটেও শরীর ঠিক রাখা যায়। সুযোগ থাকলে সাইকেলও চালাতে পারেন। কিংবা ঘাম ঝরিয়েও ফিট থাকতে পারেন জিমে গিয়ে। তবে ফিট থাকার জন্য জিমে ঘাম ঝরানোর পাশাপাশি চাই পর্যাপ্ত সুষম খাবার।
৭. শখের কাজগুলোর জন্য সময় রাখুন
অবসর সময় পেলে সেটা কাজে লাগাতে পারেন শখের কাজগুলো করে। শখের চর্চা করলে ক্লান্তি বা বিরক্তি থেকে পরিত্রাণ মেলে। শীতে অবসর সময়ে সহজেই মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। আসক্তি যেন পেয়ে না বসে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। যেকোনো আসক্তিই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে বেশ বড় হুমকি।
পুরোনো শখগুলো নতুন করে চর্চা করতে শুরু করলে তা আপনার মনকে প্রশান্তি দেবে, সৃজনশীলতা বাড়াবে এবং বিরক্তি থেকে সহজেই মুক্তি দেবে। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরা সাধারণ ব্যক্তিদের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় নিজেদের শখের পেছনে ব্যয় করেন। গান শুনে, ছবি এঁকে বা লেখালেখি করে শখের সময়টা কাটানো যায়। সবচেয়ে ভালো হয় বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে ফেলা।
সূত্র: বিবিসি