গার্মেন্টস নিয়ে পড়ালেখা যেভাবে তাঁকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করল
যেদিন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন, সেদিনই শুরু হয়েছিল সদরুজ্জামান রাসেলের নতুন জীবনের গল্প। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প ও টেক্সটাইল খাতের বড় সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অংশ হতে চেয়েছিলেন তিনি। অবশ্য তিনি যখন ভর্তি হন, তখন এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি।
পড়ালেখা শেষে নিজের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করেছেন রাসেল। একাডেমিক জীবন ও কর্মজীবনে মিল থাকায় সফলতাও এসেছে দ্রুত। রাসেলের দুটি ফ্যাক্টরিতে এখন কাজ করেন প্রায় ৬৭৫ কর্মী। রাসেল বলেন, ‘বিইউএফটির পাঠ্যক্রম, ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আধুনিক ল্যাবের সুবিধা ও ইন্ডাস্ট্রি–সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা আমাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করেছে। এখানকার পরিবেশ ও সুযোগ আমাকে শুধু একাডেমিক দক্ষতাই দেয়নি; বরং পেশাগতভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতেও সাহায্য করেছে। ফ্যাশন ডিজাইন, গার্মেন্ট কনস্ট্রাকশন, প্যাটার্ন মেকিং ও সিএডি সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ আমার ক্যারিয়ারের ভিত্তি তৈরি করেছে।’
রাসেল বর্তমানে সার্কুলার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রানওয়ে ফ্যাশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লি কুপার, বেবিহাগ, বাটার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্যও পণ্য তৈরি করে তারা। তাঁর ফ্যাক্টরির মাধ্যমে প্রতিদিন ছয় থেকে আট হাজার পিস তৈরি পোশাক উৎপাদিত হচ্ছে, মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় দেড়–দুই লাখ। রাসেল বলেন, ‘গার্মেন্টস ব্র্যান্ড তখনই সফল হয়, যখন তার পেছনে থাকে একটি দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সমন্বিত টিম। আমি সৌভাগ্যবান, আমার প্রতিষ্ঠানে এমন একটি টিম গড়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বব্যাপী তুলে ধরাই রাসেলের প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজারের মধ্যে আছে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য।’
এসবের পেছনেও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রস্তুতিটা কাজে লেগেছে বলে মনে করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক সময় গ্রুপ লিডার হিসেবে কাজ করেছি, যেখান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংঘাত সামাল দেওয়া ও দলকে অনুপ্রাণিত করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এগুলোই আমাকে বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠান চালাতে সাহায্য করছে।’
তবে অন্য খাতের মতো গার্মেন্টস খাতেও দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, মনে করেন রাসেল৷ তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্পে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, থ্রিডি ডিজাইন সফটওয়্যার ও টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যবহার দ্রুত বাড়বে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা, শ্রম খরচ ও সময় বাঁচানোর চাহিদা থেকেই এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত ঘটবে। আমি মনে করি, এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকেই কারিগরি অভিযোজন ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানও সে অনুযায়ী কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে।’
এসবের মধ্যেও নিজের প্রতিষ্ঠানকে আগামী পাঁচ বছরে একটা বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চান রাসেল। তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আমার প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, যা শুধু মানসম্পন্ন পোশাকই উৎপাদন করবে না; বরং টেকসই উৎপাদন ও নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা পূরণ করবে।’