ছোটবেলার ঈদ বড়বেলার ঈদ

বাবা হুমায়ূন আহমেদ ও মা গুলতেকিন খানের সঙ্গে নুহাশ হুমায়ূন
ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলার ঈদের কথা মনে এলে প্রথমেই মনে পড়ে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কথা। আম্মা সকাল ছয়টার দিকে ডেকে দিতেন। এই ভোরে ওঠাটাই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, ছোটবেলা থেকেই আমি রাত জাগতাম। দেখা যেত, ভোররাতে ঘুমাতে গেছি, কিছুক্ষণ পরই আবার উঠতে হতো। আলসেমি করে বলতাম, যাই-যাচ্ছি, একটু পরে উঠি। যত অজুহাতই দিই না কেন, আম্মা ঠিকই উঠিয়ে দিত। ঘুম থেকে উঠেই একদম কুসুম গরম পানিতে গোসল। ঈদের সকালের এই গোসলের কথা মনে পড়লে এখনো গা শিরশির করে।

গোসলের পর কিন্তু ঘুম পুরোপুরি কেটে যেত। মনে হতো, একদম পরিষ্কার হয়ে গেছি, পাকপবিত্র। ইস্তিরি করা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরতাম। এরপর বাবার (হুমায়ূন আহমেদ) সঙ্গে নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজ পড়ে এসে নাশতা করতাম। ঈদের সকালে আম্মার হাতের এই নাশতাটা আমার খুবই প্রিয় ছিল। নাশতার পদের মধ্যে থাকত চালের আটার রুটি, কিমা করা মাংস, আলু দিয়ে ডাল। মাঝেমধ্যে আমাদের সঙ্গে বাবা নাশতা করত। আবার কখনো কখনো আসত না। তখন একাই নাশতা করতাম।

আরও পড়ুন

বাবা বেঁচে থাকতে ঈদ ছিল এমন একটা দিন, যখন বাবার সঙ্গেও সময় কাটানো যেত, আবার মা–বোনদের সঙ্গেও সময় কাটানো হতো। বিচ্ছিন্ন একটা পরিবারের ছেলে হিসেবে ঈদের এই সময়টা আমার কাছে তাই খুবই বিশেষ। আমার কাছে ঈদ তখন এমন একটা উৎসব, যেটা মনে করিয়ে দিত, আমার পরিবার অন্য ১০টা পরিবারের মতো না। তা–ও আমি বাবার ভালোবাসা পাচ্ছি, মায়ের ভালোবাসা পাচ্ছি, আবার বোনদেরও পাচ্ছি। এ জন্য একধরনের কৃতজ্ঞতা কাজ করত। মনে হতো, একজনের জীবনে যা যা প্রয়োজন, সবই আছে। এটা মনে করে খুব ভালো লাগত। কোনো না কোনোভাবে সবার সঙ্গেই সময়টা কাটাতে পারতাম। একসঙ্গে ছবি তুলতাম।

তিন বোন ও বাবা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ছোট্ট নুহাশ হুমায়ূন
ছবি: সংগৃহীত

ছবি তোলার সময় পাঞ্জাবি পরে তুললেও পরে পাঞ্জাবি খুলে রাখতাম। ঈদের বেশির ভাগ সময় দেখা যেত টি-শার্ট পরেই কাটাচ্ছি। আমার কাছে মনে হতো, পাঞ্জাবি যত তাড়াতাড়ি খুলে ফেলা যায়, ততই আরাম। বেশি সময় পরে থাকলে খাবারের দাগ লেগে যাবে। কারণ, ঈদের সময় সারা দিনে নানা খাবারের মধ্যে থাকতে হতো। যখন আপা, আম্মা বা কেউ ডাকত, ছবি তুলতে হবে, পাঞ্জাবিটা দ্রুত পরে নিতাম। এ নিয়েও বেশ মজা হতো।

আরও পড়ুন
বাবা হুমায়ূন আহমেদ ও ভাই নিষাদের সঙ্গে নুহাশ

ঈদে বাসায় অনেক রকম রান্না হতো। পছন্দের সব খাবার একসঙ্গে পেতাম। পাশাপাশি সন্ধ্যায় ফুচকা থাকত। সন্ধ্যার দিকে কিছুটা ঘুরতে বের হতাম। বন্ধুরা ঘুরতে আসত। আড্ডা দিয়ে সময় কাটত। সেটাও দারুণ স্মৃতি।

নুহাশ হুমায়ূন
ছবি: সংগৃহীত

তবে ভালো লাগার এই বোধটা সব সময় তো একই রকম থাকে না। বাবা মারা যাওয়ার পর এ রকম অনুভূতি আর ছিল না। কিন্তু শৈশব বলতে সবাই একসঙ্গে কাটানো দিনগুলো এখনো অমলিন। যখন বড় হতে থাকি, সেই সময়ের ঈদগুলো আমার মা ও বোনদের সঙ্গে বেশি কেটেছে। পরে বোনদের বিয়ে হয়ে গেল। তারা একেকজন একেক দেশে চলে গেল। আমার ঈদগুলোও এখন তাই একেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার হয়তো ঈদের সময় যুক্তরাষ্ট্রে বোনের বাসায় থাকব। পুরো পরিবারকে একসঙ্গে আর পাব না। ঘুরেফিরে মনে বাসা বাঁধবে সেই শৈশবের ঈদ, যে দিনগুলো সবার সঙ্গে কেটেছিল।

অনুলিখন: মনজুরুল আলম

আরও পড়ুন