শিশুকে কি সাজানো উচিত
শিশুরা যাদের ভালোবাসে, তাদের মতোই হতে চায়। মায়ের স্নেহের পরশে বেড়ে উঠতে থাকা শিশু মাকে সাজতে দেখলে তাকেও সাজিয়ে দেওয়ার জন্য বায়না ধরে। পরিবারের সবাই যখন সেজেগুজে বেড়াতে যাচ্ছে, তখন শিশুরাই-বা বাদ পড়বে কেন? সাজতে তো তারও মন চায়। মা সাজছেন, বড় বোন সাজছেন, সাজতে না দিলে শিশুর মন খারাপ হতেই পারে। কখনো আবার শিশু বায়না না ধরলেও বড়রা নিজেদের ইচ্ছায় শিশুকে সাজিয়ে দেন।
প্রতিটি শিশুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে জন্মায়। তাকে সুন্দর করে তুলতে বাড়তি কিছু প্রয়োগের আসলে কোনো প্রয়োজনই নেই। ছোট্ট মুখ, ছোট্ট ঠোঁট রাঙিয়ে দিলে অন্য রকম তো দেখাবেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সাজসজ্জার সব উপকরণ শিশুর উপযোগী নয়। কিছু উপকরণ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তা ছাড়া নিত্যদিন সাজসজ্জার উপকরণ ব্যবহার করাও অনুচিত। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শাহেদুর রহমান।
পরিপাটি, সুন্দর
রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘১৩ বছর বয়স হওয়ার আগপর্যন্ত মেকআপ সামগ্রী ও রাসায়নিকযুক্ত উপকরণ এড়িয়ে চলা উচিত। সাজতে চাইলে মেকআপ ছাড়াই একটি শিশুকে সুন্দরভাবে সাজানো যায়। শিশুর চুল দিয়েই নানা রকম সাজ হতে পারে।’ শিশুর সাজের ক্ষেত্রে তার সুস্থতা এবং নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি। শিশুকে খুশি রাখতে ছোট্ট কিছু পরিবর্তনই যথেষ্ট। পরিপাটি পোশাক এবং জুতা পরিয়ে দিন তাকে। শিশুর উপযোগী ক্রিম ও লোশন লাগিয়ে দিন। একটু অন্য রকম করে চুল আঁচড়ে দিন।
চুলের সাজেও সতর্কতা
চুলের সাজে ব্যান্ড কিংবা ক্লিপের মতো ছোটখাটো অনুষঙ্গ জুড়ে দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এগুলো যাতে শিশু মুখে না দেয়। ক্লিপজাতীয় অনুষঙ্গ গলায় ঢুকে গেলে শ্বাসনালিতে আটকে যেতে পারে। তাই শিশুকে বলে রাখুন, এসব অনুষঙ্গ খুলে রাখতে হলেও যাতে সে বড়দের সাহায্য নেয়। তবে একেবারে ছোট, অবুঝ শিশুকে তার নিরাপত্তার স্বার্থেই এসব অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
কাজল ও চোখের সাজ
যুগ যুগ ধরেই শিশুর চোখে কাজল পরিয়ে দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে এ দেশে। কাজলের টিপও পরানো হয়। সাধারণত এসবে কোনো ক্ষতি হয় না বলেই জানালেন ডা. মো. শাহেদুর রহমান। তবে কারও কারও কাজলে অস্বস্তি হতে পারে বলেও জানালেন তিনি। তাদের ক্ষেত্রে কাজল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সব শিশুর ক্ষেত্রেই আইলাইনার, আইশ্যাডো এবং চোখের সাজের অন্যান্য উপকরণ এড়িয়ে চলতে হবে।
খেয়াল রাখুন
ক্রিম, লোশনসহ যেকোনো প্রসাধনসামগ্রী শিশুর উপযোগী কি না, তা আগেই দেখে নিন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত অবশ্যই শিশুবান্ধব পণ্য বেছে নিতে হবে। হাইপো অ্যালার্জিক পণ্যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম।
প্রথমবার কোনো ক্রিম, লোশন বা অন্য কোনো অনুষঙ্গ প্রয়োগ করার আগে তা ঘাড়ের পাশে সামান্য পরিমাণে লাগিয়ে দেখুন। লালচে ভাব, চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা কোনো ধরনের অস্বস্তি যদি না হয়, কেবল তাহলেই সেটি পুরো মুখে কিংবা পুরো শরীরে প্রয়োগ করুন।
নির্দিষ্ট কোনো উপকরণে অ্যালার্জি থাকলে তা এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
ঘুরেফিরে একটাই কথা। শিশুরা এমনিতেই সুন্দর। সুন্দর বর্ণিল জামা–জুতা তাদের আরও উজ্জ্বল করে তোলে। বাড়তি প্রসাধনী, গয়নাগাটি তাদের প্রয়োজন নেই। আর সাজার জন্য তো বাকি জীবনটা পড়েই আছে।