প্রতিদিন ভিনেগার পানে মিলবে ৫ উপকার
বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি পানির সঙ্গে মিশিয়েও অনেকে ভিনেগার পান করেন। টকটক–নোনতা স্বাদের এই তরলে আছে উপকারী অনেক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও খনিজ লবণ। সব মিলিয়ে ভিনেগারের অনেক গুণ। বিভিন্ন ফল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই উপকারী তরল। নিয়মিত পানে প্রতিহত হয় বেশ কিছু গুরুতর রোগ।
চর্বি জমতে বাধা দেয়
খাবার খাওয়ার আগে বা খাওয়ার সময় সামান্য পরিমাণ ভিনেগার, বিশেষ করে আপেল সাইডার ভিনেগার পান করলে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের (এলডিএল) মাত্রা কমে। শরীরে অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে দেয় না এটি। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
রক্তে শর্করা বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে ভিনেগার। মেডিসিন নেটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চিনি ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভিনেগার বেশ কার্যকর।
ক্ষুধা নষ্ট করে
ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে ভিনেগারের সরাসরি যোগসূত্রের জোরালো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না মিললেও অনেকে দাবি করেন, ভিনেগার রুচি কমিয়ে এবং হজম সহজ করে ওজন কমাতে সহায়তা করে। ওয়েবমেডের গবেষণা মোতাবেক, আপনার সারা দিনের ক্ষুধা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য দিনে একবার ১ থেকে ২ চা-চামচ ভিনেগারই যথেষ্ট।
মাসিকচক্র স্বাভাবিক করে
নারীদের অনিয়মিত মাসিকচক্রের একটি সাধারণ কারণ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস। এই রোগে এলএইচ (লুটিনাইজিং হরমোন) থেকে এফএসএইচ (ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন) অনুপাত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। নিয়মিত ভিনেগার পান করতে পারলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
জীবাণু ও প্রদাহ রোধ করে
শরীরের প্রদাহ দূর করে ভিনেগার। বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। এর অম্লীয় বৈশিষ্ট্য পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া সহজ করে। হজম সহজ করে। তাই নিয়মিত ভিনেগার খেলে ত্বক ও পেটের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
যেভাবে খাবেন
ভিনেগার অত্যন্ত অম্লীয়। পিএইচ মাত্রা ২-৩। তাই সরাসরি না খেয়ে পানি, সালাদ বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায়। পানির মতো সাদা ভিনেগার এবং গাঢ় লালচে রঙের আপেল সাইডার ভিনেগার। আপেল সাইডার ভিনেগারের অম্লীয় মাত্রা সাদা ভিনেগারের চেয়ে কম। তাই উল্লিখিত উপকারগুলো পেতে প্রতিদিন ১-২ চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার খেতে পারেন। সালাদের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
আপেল সাইডার ভিনেগারের পরিবর্তে সাদা ভিনেগার খেতে চাইলে সঙ্গে পানি, অন্য ফলের জুস বা সালাদ মিশিয়ে নিন।
রাতে ঘুমানোর আগে ঠান্ডা বা গরম পানির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
শরীরের প্রদাহ, ঠান্ডা–কাশি দূর করতে মধুর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
কারা খাবেন না
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা মোতাবেক, গ্যাস্ট্রোপেরেসিস ও আলসারের সমস্যা থাকলে ভিনেগার খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া বুক জ্বালাপোড়া করলে, পেটে ফোলা ভাব হলে এবং বমি বমি ভাব হলে ভিনেগার খাওয়া যাবে না।
ভিনেগার পানে গলা জ্বললে পরে আবার ভিনেগার পানের চেষ্টা না করাই উত্তম।
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ভিনেগার পান করা যাবে না।
অন্য কোনো ওষুধ চলমান থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ভিনেগার খাওয়া যাবে না।
কিছু সাবধানতা
প্রতিদিন ২ টেবিল চামচের বেশি নয়।
পানি, সালাদ বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
ভিনেগারের অ্যাসিডিক লেভেল দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই তরলের সঙ্গে মিশালে স্ট্র দিয়ে পান করুন। সম্ভব না হলে ভিনেগার পানের পর ভালোভাবে কুলি করে নিন।
শিশুর খাবারে ভিনেগার দেওয়া যাবে না।
সূত্র: মেডিসিন নেট, হেলথ লাইন, ওয়েবমেড