প্রতিদিন জোর করে হলেও হাসতে হবে যে কারণে
সুকুমার রায়ের সেই রামগড়ুরের ছানাদের কথা নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে, যাদের হাসতে মানা ছিল? বাস্তবে কোনো মানুষ হাসতে না পারার বাধ্যবাধকতায় বন্দী থাকেন না। কিন্তু কল্পিত সেই রামগড়ুরের ছানাদের এই হাসতে না পারার বৈশিষ্ট্যটি নিজের মধ্যে ধারণ করে ফেলেন কেউ কেউ।
আধুনিক জীবনধারায় নানামুখী চাপে আমরা জর্জরিত। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক পড়ালেখার চাপ, কর্মস্থলের চাপ, বাড়ির একঘেয়ে কাজের চাপ—তালিকাটা বিশাল। এমনকি নিজের ‘তারুণ্য’ ধরে রাখাটাও একটা চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন! চাপে চিড়েচ্যাপটা মানুষ প্রাণ খুলে হাসতে ভুলে যেতেই পারেন। এ হলো যুগের নির্মম সত্য। কিন্তু হাসি থেকেই ছড়িয়ে পড়ে প্রাণশক্তি, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। হাসলে আমাদের মনে জাগে ইতিবাচক অনুভূতি। এর প্রভাব থেকেও যায় অনেকটা সময় অবধি। মনের ভালো থাকার সঙ্গে শারীরিক সুস্থতাও নিবিড়ভাবে জড়িত। হাসি প্রসঙ্গে এমন নানা তথ্য জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।
হাসিতে সুস্থ মন, সুন্দর জীবনভাবনা
হাসিতে খুলে যায় মনের দুয়ার। সমস্যা সমাধানের নানা উপায় নিয়ে স্বচ্ছভাবে ভাবার সুযোগ হয়। জীবন সম্পর্কে সুন্দর ভাবনা জাগে মনে। সৃষ্টি হয় আশাবাদ, আসে সন্তুষ্টি। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা হয় হাসির চর্চায়। মন হয় প্রশান্ত। মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। বিরক্তি আর দুশ্চিন্তাও কম হয়। কাজের আগ্রহ ও উদ্দীপনা বাড়ে। কঠিন কাজও সহজ মনে হয়। বাড়ে কাজের গতি।
হাসিতে সুস্থ ব্যক্তি, সুস্থ সম্পর্ক
হাসলে শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বাড়তে পারে না। কর্টিসল হলো চাপের হরমোন। তাই হাসলে অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে। হাসলে শরীরেও সৃষ্টি হয় সুখানুভূতি। ভালো ঘুম হয়। যাঁরা সহজে হাসতে পারেন, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোও সহজ প্রকৃতির হয়। সামাজিক সম্পর্ক নিয়েও জটিলতায় কম পড়েন তাঁরা।
তাই হাসির খোরাক খুঁজতে
নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, শেষ কবে প্রাণ খুলে হেসেছেন আপনি? সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য প্রতিনিয়তই প্রাণ খুলে হাসা জরুরি। নইলে ভেতরে-ভেতরে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবেন, যার প্রভাব দেখা দেবে বহু বছর পর। ব্যায়ামের মতো এটিও একটি চর্চার বিষয়। জীবন আপনাকে হাসতে দিচ্ছে না? আপনি হাসির কাছে ছুটে যান। জীবনের উচ্ছ্বাস আপনাকে ছুঁয়ে যাবেই যাবে। বন্ধুদের আড্ডা, মজার গল্পের বই, সুকুমার রায়ের ছড়া, টেলিভিশন বা ইউটিউবের কমেডি শো—নানা কিছুই হতে পারে আপনার হাসির উৎস। এমন যেকোনো কাজে সম্পৃক্ত হোন, যাতে আপনি হাসতে পারেন। সৃষ্টিকূলের জন্য কিছু করুন। অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটান, ক্ষুধার্ত জীবকে খাবার দিন, তৃষ্ণার্ত জীবকে পানি দিন, আশ্রয়হীন প্রাণকে আশ্রয় দিন। হাসিমুখে, কোমলভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। এমন সব কাজ করলে আপনি মন খুলে হাসতে পারবেন।