চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে যে ৩ বৈশিষ্ট্য খোঁজা উচিত
আকেনুমি অ্যাডেসিনা একজন নাইজেরীয় অর্থনীতিবিদ। তিনি আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। ৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুলের সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন তিনি। পড়ুন সেই বক্তৃতার নির্বাচিত অংশ।
আজ আমার সামনে একঝাঁক আশাজাগানিয়া তরুণকে দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবী বদলে দেওয়ার জন্য তোমরা তৈরি। বিশ্বমানের শিক্ষা তোমরা পেয়েছ। এখন পৃথিবী তোমাদের অপেক্ষায়।
জীবন তোমাদের যে পথেই নিয়ে যাক না কেন, একটা অর্থবহ জীবন যাপন করো। অন্যকে অনুপ্রাণিত করো। সাহায্য করো। অন্যের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করো। নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য বাঁচো। তাহলেই সত্যিকার অর্থে তুমি সম্পদশালী হবে। মানুষের মনে আশা জাগানোর সামর্থ্য—এই সম্পদই আদতে তোমার কাজে লাগবে।
কীভাবে সম্পদ বাড়ানো যায়, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সামলানো যায়, অর্থনীতিকে আরও অগ্রসর করা যায়, এমবিএর শিক্ষার্থী হিসেবে এসবই তোমাদের শেখানো হয়েছে। পৃথিবীটাকে সবার জন্য আরও বসবাসযোগ্য করতে তোমাদের এসব দক্ষতা কাজে লাগাও।
কর্মক্ষেত্রেও এমন একটা মানসিকতা গড়ে তোলো, যেন সবাই নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য কাজ করে। এক হয়ে কাজ করাটা ভীষণ দরকার। বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট একবার বলেছিলেন, ‘চাকরি দেওয়ার সময় চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে তিনটা বৈশিষ্ট্য খোঁজা উচিত: এক হয়ে কাজ করার মানসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও সক্রিয়তা। যদি প্রথম বৈশিষ্ট্যটি না থাকে, বাকি দুটি তোমার প্রতিষ্ঠানকে খেয়ে ফেলবে।’ সহজ করে বললে, এক হয়ে কাজ করার সক্ষমতাই যদি না থাকে, বুদ্ধিমত্তা আর সক্রিয়তা বরং সব তছনছ করে দিতে পারে।
লক্ষ্য ঠিক করো, আর সেই লক্ষ্যে অটুট থাকো। বছর চারেক আগে আমি যখন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে চাইছিলাম, আমার একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলেছিলেন, ‘এই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে। তুমি প্রথম মেয়াদে ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছ। প্রথমবারে কেউ এ কাজে কখনো সফল হয়নি।’ আরও অনেকের মন্তব্য ছিল একই রকম।
সবাই নিরুৎসাহিত করলেও আমি আর আমার দল নিশ্চিত ছিলাম যে আমরা ঠিক পথেই আছি। আমরা কাজ চালিয়ে গেছি। দুই বছর পর দেখা গেল, ব্যাংকের মূলধন ৯৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৮ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। ১৯৬৪ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় মূলধন বৃদ্ধি।
গত বছর বহুপক্ষীয় আর্থিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারি ঋণ বিবেচনায় এ বছর পেয়েছে সবচেয়ে স্বচ্ছতাসম্পন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম।
এ থেকে শিক্ষা হলো: কখনো নিজের ওপর অনাস্থা রেখো না। যদি নিজে নিজেকে বিশ্বাস না করো, কেউ করবে না। লোকে তোমাকে নিয়ে কী ভাবছে, তোমরা আইডিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে কি না, তাতে কিছু যায়–আসে না।
সফল হতে হলে বন্ধুত্ব করো, আরও মানুষকে সঙ্গে নাও। একা সফল হওয়ার চেষ্টা কোরো না। একসঙ্গে হও। আফ্রিকায় একটা প্রবাদ বলে, ‘যদি দ্রুত যেতে চাও, একা হাঁটো। যদি দূরে যেতে চাও, একসঙ্গে হাঁটো।’
আফ্রিকায় বাওবাব নামে একটা গাছ আছে। এ গাছের কাণ্ড অনেক মোটা হয়। এ গাছের নিচেই অনেক গ্রামবাসী এক হয়, প্রবীণেরা গল্প শোনায়, সভা-সমাবেশ হয়। দুই হাতে একটা বাওবাব গাছের পুরোটা জড়িয়ে ধরা অসম্ভব। কিন্তু যদি অনেকে একসঙ্গে হাতে হাত ধরে গোল হয়ে দাঁড়াও, তাহলে তুমি একটা বাওবাব গাছ জড়িয়ে ধরতে পারবে। একে বলা হয় ‘বাওবাব পন্থা’ (বাওবাব অ্যাপ্রোচ)।
আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে আমি এই বাওবাব পন্থাই সাফল্যের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে আসছি। সমষ্টিগত সাফল্যের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাই বলি, কখনো একা কাজ কোরো না।
চলার পথে টের পাবে, তোমার হাতের সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্রটির নাম কলম। যখন নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছাবে, মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য, ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য তোমার কলমটা ব্যবহার কোরো।
সামনে বিশাল জীবন পড়ে আছে।
পরিপূর্ণতা নিয়ে বাঁচো।
সঠিক কাজ করে বাঁচো।
সূত্র: বিজনেসডে ডটএনজি