ব্রিটিশ রাজবাড়ির খাবার টেবিলের এই নিয়মগুলো জানেন?
ব্রিটিশ রয়্যাল প্যালেসের ভোজসভার নিয়মকানুন কিন্তু বেশ কড়া। রাজবাড়ির কর্মীরা ছাড়াও রাজপরিবারের সদস্যদের খাবার টেবিলের আদবকায়দা শেখার জন্য রীতিমতো স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। ভোজসভার যাবতীয় তদারকির দায়িত্বে থাকেন ‘রাজ খানসামা’। ব্রিটিশ ব্লেনেম প্যালেসের প্রধান খানসামা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী গ্রান্ড হ্যারল্ড রাজকীয় খানসামাদের স্কুল পরিচালনা করেন। প্রায় সাত বছর ধরে প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্স হ্যারিকে খাবার টেবিলের রাজকীয় আদবকেতা শিখিয়েছেন তিনি। সেসব অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করেছেন এক তথ্যচিত্রে।
খাবার টেবিলে যত নিয়ম
মাপজোখে কড়াকড়ি: খাবার টেবিলের সব বাসনকোসন ঠিকঠাক দূরত্বে রাখতে হবে। টেবিল থেকে চেয়ার কতটুকু দূরত্বে থাকবে, প্লেট থেকে গ্লাসের মাঝের দূরত্ব কী হবে, সেসব টেবিল সাজানোর দায়িত্বে থাকা কর্মীরা মুখস্থ করে ফেলেন। বিভিন্ন ধরনের চামচ-ছুরি, প্লেট-গ্লাস থেকে কত ডিগ্রি কোণে, কতটুকু সামনে থাকবে—এ সবকিছু একদম জ্যামিতিকভাবে পরিমাপ করেই রাখতে হয়। এই যেমন
খাবার প্লেটের ডানে ছুরি, তারপর স্যুপের চামচ রাখতে হবে। আর এই দুয়ের মাঝে দুই মিলিমিটার পরিমাণ ফাঁকা জায়গা থাকবে।
পুডিংয়ের চামচ মেইন প্লেটের একটু ওপরে ডান দিকে থাকবে আর প্লেটের বাঁয়ে থাকবে সাইড প্লেট। ছোট ছুরির ধারালো প্রান্ত রাখতে হবে বাঁ দিকে মুখ করে।
রেড বা হোয়াইট ওয়াইন, শ্যাম্পেন আর পানির জন্য আলাদা চারটি ঝকঝকে গ্লাস নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে। কাচ ও সিলভারের পলিশ করা গ্লাস বা কাটলারিতে যেন আঙুলের ছাপ না লাগে, তাই পরিবেশনকারীদের হাতে সাদা হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হয়। সবশেষে ন্যাপকিন সুন্দর করে সাজানো থাকবে।
আরেকটি বিষয় হলো ‘বুড়ো আঙুল নীতি’। কোকারিজ থেকে কাটলারিগুলো এক বুড়ো আঙুল দূরত্বেই রাখা হয়।
অভ্যর্থনা জানানো ও বসার নিয়ম: রাজা বা রানিকে অতিরঞ্জিত সম্মান জানাতে গিয়ে আবার বিপদে পড়া যাবে না। রাজকীয় অভ্যর্থনার নিয়ম হলো, এক পা পেছনে রেখে হালকা নত হয়ে সম্মান জানানো। আভিজাত্যপূর্ণ রাজকীয় পরিবেশে হেলান দিয়ে চেয়ারে আয়েশ করে বসতে যাবেন না। পা এমনভাবে রাখা উচিত যেন হাঁটু দুটো একসঙ্গে থাকে। কেউ চাইলে পায়ের গোড়ালি হালকা বাঁকিয়েও বসতে পারেন। খাবার টেবিলে কনুই বা হাতের কবজি, এমনকি ফোন রাখাটাও বিরাট অপরাধের মধ্যে পড়ে।
চা-টা খাওয়ার রীতি: রাজকীয় ভোজে চা খেতে খেতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তারা কিন্তু সত্যিকার অর্থে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে একদম পছন্দ করেন না। চায়ের কাপে চামচ নাড়তেও নিয়ম মানতে হবে। কাপের মধ্যে চামচ দিয়ে নাড়তে হবে সামনে-পেছনে করে, ধীরে ধীরে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চা নেড়ে, শব্দ করে খাওয়া যাবে না। ছোট ছোট চুমুকে খেতে হবে। কনিষ্ঠা আঙুল বের করে রাজপরিবারের লোকেরা চায়ের কাপ ধরেন না।
স্যান্ডউইচ বা বার্গার দুই হাত দিয়ে ধরে খাওয়া যাবে না। খেতে হবে কাটা চামচ আর চাকু দিয়ে কেটে কেটে টুকরা করে।
সকালের নাশতায় পেস্ট্রিসহ আরও নানা পদ থাকতে পারে, তবে আপনি শুধু একটাই নিতে পারবেন। অবশ্যই পাশে বসা অতিথিকে আগে সেধে তারপর নিজে নেবেন।
বোতলে পানি থাকলেও সরাসরি বোতল দিয়ে খাওয়া যাবে না। পানি আগে গ্লাসে ঢেলে নিতে হবে।
খেতে খেতে আপনার ঠোঁটের লিপস্টিক হালকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ন্যাপকিন দু ভাঁজ করে আগেই হাঁটুর ওপরে নিয়ে রাখুন। প্রয়োজন হলে রুমালের কোনার অংশ দিয়ে সহজেই দাগ মুছে নিতে পারবেন।
‘লেডিস ফার্স্ট’ এই নিয়ম অনুসরণ করা হয় রাজপরিবারের ভোজেও। হ্যান্ডশেক করার সময় কোনো ব্রিটিশ লেডি যদি নিজে থেকে আগে হাত বাড়িয়ে দেন, তবেই আপনি এগিয়ে যাবেন। প্রথমেই আপনি হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেবেন না।
সূত্র: রিয়েল রয়্যালটি