নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংগঠনে যোগ দিতে চেয়েছেন ভিনদেশিরাও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন টিএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন কলার ঝুপড়ি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনি শান্তিনিকেতন। ক্লাস শেষে এখানেই জমে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। রবি বা বৃহস্পতিবারে হয়ে ওঠে আরও জমজমাট। কারণ, সপ্তাহের এই দুই দিনেই ‘ধ্রুপদ আড্ডা’ দিতে জড়ো হন একদল শিক্ষার্থী। গিটার কিংবা ‘কাঠের বেঞ্চ’ বাজিয়ে চলে গান। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অন্যরাও। ক্যাম্পাসের সবাই জানেন, তাঁরা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের ক্লাব ‘ধ্রুপদ’-এর সদস্য।
গানপ্রেমী, গানের প্রতি আগ্রহীদের জন্য ‘মিউজিক স্কুল’ও করেছে ধ্রুপদ। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু গিটার শেখানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের তালিমও দেওয়া হবে, জানালেন ধ্রুপদের সভাপতি তানভীর আহমেদ। ‘স্পটলাইট সেশন’ নামের আরও একটি কার্যক্রম আছে। মূলত ‘আন্ডাররেটেড’, অর্থাৎ অল্প পরিচিত ভালো গানগুলোই এই আয়োজনে গাওয়া হয়। এ ছাড়া স্ট্রিট শো, দাতব্য অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন করেন ক্লাবের সদস্যরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ও ধ্রুপদের সভাপতি তানভীর আহমেদ বলেন, ‘ক্লাবে নতুনত্ব আনার প্রয়াস থেকেই নতুন নতুন ধারণা (আইডিয়া) নিয়ে কাজ করা। স্পটলাইট সেশন আমাদের জনপ্রিয় একটি উদ্যোগ। স্ট্রিট শো সবার জন্য উন্মুক্ত, যে-কেউ গাইতে পারে। মানবতার স্বার্থে চ্যারিটি শোগুলো করি আমরা। এসবের মধ্য দিয়ে ক্লাবের একজন সদস্য নতুন কিছু শিখতে পারে, নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে। পারস্পরিক সংযোগ ও যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে পারে।’
যেভাবে শুরু
পাঁচ বছর আগেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীতকেন্দ্রিক কোনো ক্লাব, সংগঠন বা দল ছিল না। শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গানবাজনা করতেন, আড্ডা দিতেন। যেখানে সবাই অংশ নিতে পারত না। এ রকমই এক আড্ডা থেকে একদল শিক্ষার্থী ভাবতে শুরু করেন, ক্যাম্পাসে যাঁরা গান করতে বা শিখতে চান, অথবা নিছক শুনতে চান, তাঁদের সবাইকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে পারলে কেমন হয়? ধ্রুপদের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার রহমানই উদ্যোগটা নেন। গান করতে চান, গানের সঙ্গে থাকতে চান—এমন মানুষদের খুঁজতে শুরু করেন। মোট নয়জনকে পাওয়া যায়। তাঁদের একজন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্ময় দে। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ‘শূন্যতার শোকসভা’ নামের এক মিউজিক শোর মাধ্যমে ধ্রুপদ আত্মপ্রকাশ করে।
শুরু থেকেই সংগঠনটিকে নানা প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে। গানের চর্চার জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা ছিল না, এখনো নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তহবিল না পাওয়া, মুক্তমঞ্চের অভাব ইত্যাদি সমস্যা তাঁদের ভুগিয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি ক্লাবের কার্যক্রম। বেড়েছে সদস্যসংখ্যা। ধ্রুপদের দলে এখন প্রায় ১৪০ জন সংগীত অনুরাগী আছেন, যাঁরা একসঙ্গে গান, শেখেন, শেখান।
সীমানা পেরিয়ে
ইতিমধ্যে অনেকটা পরিচিতি পেয়েছে ধ্রুপদ। ক্যাম্পাসে তো বটেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্লাবটি কতটা জনপ্রিয়, ইঙ্গিত পাওয়া যায় ক্লাবের সভাপতি তানভীর আহমেদের কথা থেকে, ‘আমাদের গানের ভিডিও যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও মানুষ দেখছে, তার প্রমাণ পেয়েছি সদস্য সংগ্রহের সময়। এবার সদস্য ভর্তি কার্যক্রম যখন চালু করি, কলকাতা থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন যুক্ত হতে চেয়েছেন। পরে তাঁদের জানিয়েছি, আমরা বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ছোট্ট একটি ক্লাব। দেশের বাইরে থেকে সদস্য নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।’
অবশ্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে থাকতে চায় না এই গানপ্রেমীদের দল। জানালেন, সমগ্র বাংলাদেশ, এমনকি দেশের বাইরেও পৌঁছে যেতে চান তাঁরা।