আপনার শিশু কি খেলনা মুখে দিচ্ছে? জীবাণুমুক্ত করুন এভাবে
অবুঝ শিশু হাতের কাছে যা পায়, তা–ই মুখে দিতে চায়। হতে পারে সেটি তার খেলনা, বাবার কলম কিংবা কোনো তেলাপোকা! মোটামুটি ছয় মাস বয়স থেকেই অনেক শিশুর মধ্যে যেকোনো জিনিস মুখে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তারও আগে থেকে নিজের হাত মুখে পুরে দিতে পারে তারা। এটি শিশুর বিকাশের পথে স্বাভাবিক একটা ধাপ। ছয় মাস থেকে শুরু করে দু-চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা খেলনা মুখে দিতে পারে। তবে কেউ কেউ আরেকটু বেশি বয়স অবধিও খেলনা মুখে দেয়। এ বয়সে শিশুর জন্য খেলনা বাছাই করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটু সচেতন থাকতে হয়। শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি খেলনা ও খেলার জায়গার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও রাখতে হয় বাড়তি খেয়াল।
ময়লা খেলনা মুখে দিলে তা থেকে শিশুর দেহে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। তাই শিশুর খেলনাগুলো জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এই জীবাণুমুক্তকরণের বাধাধরা কোনো নিয়ম অবশ্য নেই। তবে সাধারণ কিছু দিক খেয়াল রাখলে অভিভাবকের জন্য কাজটা খুব একটা কষ্টকর কিছু নয়। এ নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়িরও কিছু নেই। টুকটাক রোগবালাই তো এমনিতেই হবে। সেটিও শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলার পথে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান।
খেলনা রাখুন পরিষ্কার
বাইরে থেকে খেলনা বা ঝুনঝুনি কিনে আনার পর সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। তাহলে বাইরের জীবাণু থেকে শিশু সুরক্ষা পাবে। খেলতে খেলতেও এসব খেলনা ময়লা হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে শিশুর খেলনাগুলো সাবান বা ডিটারজেন্টে ধুয়ে দেওয়াও ভালো। আবার ধরা যাক, পরিষ্কার খেলনাটি কোনোক্রমে ময়লা জায়গায় পড়ে গেল, তাহলেও যে খেলনাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে, তা তো বুঝতেই পারছেন। অন্য বাড়ির শিশুরাও যদি আপনার সন্তানের সঙ্গে একই খেলনা দিয়ে খেলে, তাহলে তা তাদের প্রত্যেকের বিকাশের পথেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে অন্য বাড়ির শিশুরা একই খেলনা দিয়ে খেললে অভিভাবক হিসেবে আপনার উচিত হবে পরে সেই খেলনাগুলো পরিষ্কার করে রাখা।
খেলার জায়গা হোক নির্দিষ্ট
বাড়িতে শিশুর ‘প্লে জোন’ বা নির্দিষ্ট খেলার জায়গা রাখা ভালো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সেই জায়গায় শিশুর জন্য একটা ম্যাট বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে শিশুর যেখানে–সেখানে খেলনা নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। ফলে খেলনা ময়লা কম হবে। তবে খেলার ম্যাটটাও ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
আরও যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
শিশুর হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনমাফিক সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুইয়ে দিতে হবে। নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।
শিশুকে এমন কোনো কিছু নিয়ে খেলতে দেবেন না, যা তার গলায় আটকে যেতে পারে। মার্বেল, পুঁতি, পিন–জাতীয় জিনিস, এমনকি ফলের বীজও শিশুর গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। শ্বাসনালিতে এ–জাতীয় জিনিস আটকে গেলে চোখের নিমেষেই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে তুলতুলে খেলনা না দেওয়াই ভালো। এসব খেলনার তন্তু শ্বাসনালিতে যাওয়ায় হাঁচি-কাশিজাতীয় সমস্যা বাড়তে পারে।
যে বাড়িতে এই বয়সী শিশু রয়েছে, সেই বাড়ির সব ঘরের মেঝেই জীবাণুনাশক দ্রবণ ও পানির মিশ্রণ দিয়ে রোজ অন্তত একবার মুছে নেওয়া উচিত।
শিশুর খেলনা মুখে দেওয়াটা স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সে অস্বাভাবিকভাবে এমন কোনো জিনিস খাচ্ছে কি না, যা আসলে খাদ্য নয়। শিশুকে খেলনার প্লাস্টিক, ধুলা, মাটি প্রভৃতি জিনিস ক্রমাগত খেতে দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি তার দেহের আয়রনের অভাবের একটি উপসর্গও হতে পারে।