ফেরির নকশা করে চ্যাম্পিয়ন বুয়েট

প্রতিযোগিতায় ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত অংশ নিলেও এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের একটি দল।
ছবি: সংগৃহীত

ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওএফএসএ) একটি মার্কিন সংস্থা। প্রতিবছর তারা একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পথে (রুট) চলাচল উপযোগী ফেরির মৌলিক নকশা করতে হয়। সঙ্গে থাকে কিছু শর্ত। যেমন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী, বাস-ট্রাক বা অন্য কোনো পণ্য পরিবহন করতে হবে, ফেরিটি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত হতে হবে ইত্যাদি। প্রতিযোগিতায় ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত অংশ নিলেও এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের একটি দল। দলের সদস্যরা হলেন নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের মো. সাফায়েত হোসেন, মো. আবদুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান, আফিফ বিন হাবিব, মো. আতিকুর রহমান ও মো. কাউসার মাহমুদ। তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক জোবায়ের ইবনে আওয়াল।

ডব্লিওএফএসএ ডিজাইন প্রতিযোগিতাটি অনলাইননির্ভর। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে প্রতিযোগিতার ১২তম আসর অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। যাবতীয় হিসাব-নিকাশ, আঁকিবুঁকি ও ত্রিমাত্রিক নকশা মিলিয়ে ১৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয় প্রতিযোগীদের। ৭ ফেব্রুয়ারি আসে ফল—চ্যাম্পিয়ন বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’। দলের সদস্যরা জানালেন, এবারই প্রথম বাংলাদেশের কোনো দল প্রতিযোগিতায় প্রথম হলো। পুরস্কার হিসেবে তাঁরা জিতে নিয়েছেন পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ছয় লাখ টাকা)।

দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এমন সাফল্য এল বলেই হয়তো একটু বেশি খুশি দলের সদস্যরা। মো. কাউসার মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ ও বুয়েটের জন্য গৌরবের।’ অন্যবারের তুলনায় এবারের প্রস্তুতিতে বিশেষ কী ছিল—জানতে চাইলে দলের আরেক সদস্য মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত তিন আসরে আমাদের দল দ্বিতীয় হয়েছে, তৃতীয় হয়েছে, অনারেবল মেনশনও পেয়েছে। আমরা আসলে একটু একটু করে এগিয়েছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে গত আসরের অভিজ্ঞতাগুলোই কাজে দিয়েছে।’

আরও পড়ুন

এবার নাইজেরিয়ার লেগোস শহরের অভ্যন্তরীণ জলপথ ইকোরোডু-সিএমএস-এর উপযোগী বিদ্যুৎচালিত ফেরির নকশা করতে হয়েছে প্রতিযোগীদের। শর্ত ছিল, ফেরিটি দুই শ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘নাইজা স্পিরিট’ নামের ফেরি তৈরি করেন। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতল এই ক্যাটামারান ফেরিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে রিচার্জেবল ব্যাটারি। যা চার্জ হতে ২৪ মিনিট সময় লাগে। এক চার্জে চলে ৫০ কিলোমিটার। নকশায় একটি চার্জিং স্টেশন ইকোরোডু টার্মিনালে স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য রাখা রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল।

শিক্ষার্থীদের করা ফেরির নকশা
ছবি: সংগৃহীত

ইকোরোডু থেকে সিএমএসের পথে পানির গভীরতা পরিবর্তনশীল। এমন পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে চালনার জন্য হাইড্রোলিক রিট্রাক্টেবল ও টিল্টেবল প্রোপেলার যুক্ত করা হয়েছে। রয়েছে হাইড্রোকাইনেটিক টারবাইন ও রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম। এর ফলে পানি থেকে শক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপকসহ নানা ব্যবস্থা রেখেছেন টিম ব্ল্যাক পার্লের সদস্যরা। দলনেতা মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘ফেরিটি সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মোট ১০টি ট্রিপ পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রতি ট্রিপে (দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার) সময় লাগবে প্রায় ৪২ মিনিট। আমাদের নকশা বলছে, ফেরিটি তৈরি করতে আনুমানিক ১ দশমিক শূন্য ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে।’

সামনের দিনেও চ্যাম্পিয়ন মুকুট দখলে রাখার প্রত্যয় জানালেন এই তরুণ তুর্কিরা। আধুনিক জাহাজশিল্প ও মেরিটাইম সেক্টরে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে চান তাঁরা।