গবেষণা জানাচ্ছে, এই অভ্যাস যাঁদের আছে, তাঁদের আয়রোজগার বেশি
‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’—ছোটবেলা থেকে নিশ্চয়ই অনেকবার পড়েছেন, শুনেছেন। কথাটি যে পুরোপুরি সত্য, তা ফের প্রমাণ হলো নতুন এক গবেষণায়। ক্লিনিক্যাল অর্থোপেডিকস অ্যান্ড আদার রিসার্চ সাময়িকীর ২০২৪ সালের মে মাসের সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উঠে এসেছে, সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে কেবল রোগবালাই থেকে দূরে থাকা নয়, বেশি আয়রোজগারের গভীর সম্পর্ক আছে। জানুন বিস্তারিত—
এটা তো জানা কথা, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে দীর্ঘদিন সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক, টাইপ–২ ডায়াবেটিস ও কয়েক ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ায় হারও কমে যায়। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাআপনি যেসব রোগ হাজির হয়, সেসবও সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে ক্লিনিক্যাল অর্থোপেডিকস অ্যান্ড আদার রিসার্চ সাময়িকীর ২০২৪ সালের মে মাসের সংখ্যায় প্রকাশিত নিবন্ধে উঠে এসেছে, নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে বেশি আয়রোজগারের সম্পর্কটাও নিবিড়। গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষ শাখা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আর্থ্রাইটিস, মাসকুলোস্কেলেটাল অ্যান্ড স্কিন ডিজিজের একদল চিকিৎসক।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে তিনটি মূল প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে—
সক্রিয় জীবনযাপন কীভাবে আয়কে প্রভাবিত করে?
কীভাবে সক্রিয় জীবনযাপন সময়ের সঙ্গে আয়কে প্রভাবিত করে?
মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখতে ব্যায়াম সাহায্য করে কি না?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য পঞ্চাশের বেশি বয়সী ১৯ হাজার মার্কিনির ওপর একটি জরিপ পরিচালিত হয়। সক্রিয় জীবনযাপন সম্পর্কে তাঁদের প্রশ্ন করা হয় পাঁচ ধাপে। যাঁদের নামের পাশে পাঁচটির পাঁচটিতেই সবুজ টিকচিহ্ন পড়েছে, তাঁরা সবচেয়ে বেশি ‘ফিট’। আর যাঁদের নামের পাশে একটিও পড়েনি, তাঁরা সবচেয়ে ‘আনফিট’।
দেখা গেছে, প্রতিটি ধাপে পিছিয়ে পড়া বা ‘আনফিট’ ব্যক্তিদের বার্ষিক গড় আয় সমবয়সী ‘ফিট’ ব্যক্তিদের তুলনায় তিন হাজার ডলার কম ছিল। এর পেছনের কারণটা সহজ। আনফিটদের তুলনায় ফিট ব্যক্তিদের বেশি সময় ধরে কাজ করার হার ছিল বেশি। অর্থাৎ যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করে সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের পেশাজীবন আনফিটদের তুলনায় ছিল দীর্ঘ। আর সামগ্রিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তিরা কম সক্রিয়দের তুলনায় আয় বেশি করেছেন গড়ে সাড়ে ছয় হাজার ডলার।
গবেষণার তৃতীয় অংশে দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করতেন, তাঁরা ৫৫ বছর বয়সের পরও গতিশীলতা বজায় রেখেছিলেন। ফলে পেশাজীবনে সক্রিয় থাকার হারও ছিল বেশি। এমনকি যাঁরা সপ্তাহে মাত্র এক দিন ব্যায়াম করতেন, তাঁদের জীবনের গতিশীলতার গ্রাফও ঊর্ধ্বমুখী।
গবেষকেরা বলছেন, এই ফলাফল হলফ করে বলছে না যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার সঙ্গে উচ্চ উপার্জনের সরাসরি সম্পর্ক আছে। তবে তাঁরা এটা নিশ্চিত করেছেন, সক্রিয় জীবনযাপন মানে কেবল রোগবালাই থেকে দূরে থাকা নয়; আর্থিকভাবে ভালো থাকার সঙ্গেও এর সম্পর্ক নিবিড়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আর্থ্রাইটিস, মাসকুলোস্কেলেটাল অ্যান্ড স্কিন ডিজিজের ডিরেক্টর লিন্ডসে এ ক্রিসওয়েল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা উপলব্ধি করেছি, আদর্শ সক্রিয় জীবনযাপন আদতে সুস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ এক সূচক। আর অর্থনৈতিকভাবে ভালো থাকাও এই সক্রিয় জীবনযাপনের পুরস্কার। সব মিলিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম এবং কর্মচঞ্চল জীবনযাপনের উপকারিতাও এতে প্রমাণিত হয়।’
শেষ কথা হলো, স্বাস্থ্যকর এবং কর্মচঞ্চল জীবন যাপন করতে চাইলে সবার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে ঠিক করে নিন, কোন ব্যায়াম, কোন অনুশীলন আপনার জন্য প্রযোজ্য। তারপর তা নিয়মিত মেনে চলুন, পুরস্কার নিশ্চয়ই পাবেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট