বই পড়ে যেভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারেন

বই পড়া অনেকেরই প্রিয় নেশা, এই নেশাই যদি কারোর পেশা হয়ে যায়, তাহলে কী চমৎকার হবে ব্যাপারটা, তাই না?মডেল: সারা ফ্যায়রুজ। ছবি: প্রথম আলো

বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। কারণ, বই পড়ে আপনি যে জ্ঞান অর্জন করবেন, তা আপনাকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও সমৃদ্ধ করবে। এসব কথা সবারই জানা। তবে আরও খুশির খবর হচ্ছে, বর্তমান ডিজিটাল পৃথিবীতে বই পড়ে শুধু জ্ঞান অর্জনই নয়, অর্থ উপার্জনও সম্ভব। বই পড়া অনেকেরই প্রিয় নেশা। এই নেশাই যদি কারোর পেশা হয়ে যায়, তাহলে কী চমৎকার হবে ব্যাপারটা, তাই না? জেনে নেওয়া যাক বই পড়ে অর্থ উপার্জনের কয়েকটি উপায়।

বই পড়া অনেকেরই প্রিয় নেশা
ছবি: পেক্সেলস

বই-বিষয়ক ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি

ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম কিংবা টিকটক—যে মাধ্যমেই আপনি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে চান না কেন, আপনাকে এক বা একাধিক ‘নিশ’, অর্থাৎ বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে। কন্টেন্ট নির্মাতা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে অনেকে ভেবেই পান না, কী নিশ নির্বাচন করা যায়। আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন? তাহলে আপনার ঝামেলা এখানে অর্ধেকই কমে গেল। নিশ হিসেবে আপনি বইপত্রকেই বেছে নিতে পারেন অনায়াসে। নিজের সংগ্রহে থাকা প্রিয় বইগুলো নিয়েই শুরু করুন ভিডিও তৈরি। নির্দিষ্ট কোনো একটি বই সম্পর্কে তথ্য দিন। যেমন বইটি কার লেখা, কবে, কোন প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে, দাম কত ইত্যাদি। এরপর বইটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করুন, বইটি সম্পর্কে আপনার ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে কথা বলুন। এভাবেই বিভিন্ন বই নিয়ে আপনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের উপযোগী ছোট-বড় কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। শুধু যে ভিডিও মনিটাইজ করার মাধ্যমেই ভিডিও থেকে অর্থ উপার্জন করা যায়, তা নয়। পেইড প্রোমোশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও ভিডিও থেকে অর্থ উপার্জন সম্ভব।

আরও পড়ুন

অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করা। অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে আয় করার পদ্ধতিটি এ রকম—ধরুন, অনলাইনে কোনো একটি ওয়েবসাইটে একটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আপনি সেই পণ্য নিয়ে ফেসবুকে কিছু লিখলেন এবং সেই পণ্যের একটি অ্যাফিলিয়েট লিংক জেনারেট করে আপনার লেখাটির নিচেই পেস্ট করে লেখাটি পোস্ট করলেন। আপনার পোস্ট করা লিংকে ক্লিক করে যতবার কেউ পণ্যটি কিনবে, ততবার আপনি কমিশন পাবেন। বর্তমানে দেশে-বিদেশে বই বিক্রির বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে। এসব ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট খুলে আপনিও লিংক জেনারেট করা শুরু করতে পারেন। ফেসবুক তো ব্যবহার করা হয়ই। অ্যাফিলিয়েট লিংকগুলো আপনার ফেসবুকে পোস্ট করুন। বইগুলো সম্পর্কে গুছিয়ে লিখুন, যাতে বইটি কিনতে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড-ফলোয়াররা আগ্রহী হন। শুধু ফেসবুক নয়, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব—সব প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্টের সঙ্গেই অ্যাফিলিয়েট লিংক পোস্ট করা সম্ভব।

বই–বিষয়ক ব্লগ প্রকাশ করতে পারেন
ছবি: পেক্সেলস

ব্লগ লেখা

ওয়ার্ডপ্রেস বা উইবলি ব্যবহার করে আপনি বিনা মূল্যেই আপনার ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারেন এবং বই–বিষয়ক ব্লগ প্রকাশ করতে পারেন। বইয়ের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে অর্থ আয়ের একটি ভালো মাধ্যম ব্লগ সাইটগুলো। যেসব বই সম্পর্কে লিখবেন, সেসবের অ্যাফিলিয়েট লিংকগুলোও ব্লগের নিচে পেস্ট করে দেবেন। এ ছাড়া ব্লগের পাঠকসংখ্যা বাড়লে সাইটে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমেও আয় করা সম্ভব। তবে সেটি ফ্রি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন

পেইড রিভিউ লেখা

আজকাল দেশ-বিদেশের লেখকেরা রিভিউ লেখার জন্য লেখক খোঁজেন। লেখকেরা ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে অহরহ বুক রিভিউয়ার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থাও তাদের প্রকাশিত বইয়ের রিভিউ লেখানোর জন্য রিভিউয়ার নিয়োগ দেয়। কাজেই আপনার যদি পড়ার অভ্যাস থাকে এবং লেখার হাতও ভালো হয়, তাহলে বুক রিভিউয়ার হিসেবে আপনি কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতে বা ডিজাইন করতে হলে বইটি অবশ্যই ভালোভাবে আগে পড়া প্রয়োজন
ছবি: পেক্সেলস

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ

এ কাজ করতে হলে শুধু পড়ার অভ্যাস থাকলেই চলবে না, আপনার বই নকশার দক্ষতাও থাকতে হবে। বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতে বা ডিজাইন করতে হলে বইটি অবশ্যই ভালোভাবে আগে পড়া প্রয়োজন। আর অলংকরণের কাজ করতে হলে তো বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি পাতার জন্যই আলাদাভাবে ছবি আঁকতে হয়, অর্থাৎ এই পেশায় আসতে হলে ভালো আঁকতেও হবে, পড়তেও ভালোবাসতে হবে। তাই আপনার আঁকাআঁকিতে দক্ষতা থাকলে এবং বই পড়ার অভ্যাস থাকলে প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পী হিসেবে কাজ করতে পারেন।

আরও পড়ুন

পডকাস্ট

শুধু ভিডিও নয়, পডকাস্টে বিভিন্ন বই সম্পর্কে আলোচনা করে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

লেখকেরা অডিও বুক বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করেন
ছবি: পেক্সেলস

অডিও বুক তৈরি

আজকাল অডিও বুকেরও বেশ চাহিদা আছে। লেখকেরা অডিও বুক বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করেন। লেখকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অডিও বুক তৈরি করে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এ কাজের জন্য অবশ্যই আপনার একটি ভালো মানের সাউন্ড সিস্টেম প্রয়োজন হবে। আপনাকে মাইক্রোফোনের সামনে সুন্দরভাবে বইগুলো পাঠ করতে করতে রেকর্ড করতে হবে। পড়তে গেলে ভুলভাল হতেই পারে। তাই অডিও বুক তৈরি করতে হলে অডিও এডিটিংয়েও আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

বই অনুবাদ করা

আপনি যদি একাধিক ভাষায় পারদর্শী হন, তাহলে বই অনুবাদ করে বিক্রি করেও আয় করতে পারেন। আপনাকে যে শুধু কোনো প্রকাশনী থেকেই বই বের করতে হবে, তা নয়। আজকাল অ্যামাজন কেডিপির মতো প্ল্যাটফর্মে লেখকেরা স্বাধীনভাবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ই–বুক প্রকাশ করেন এবং বই বিক্রি বাবদ অর্থ আয় করেন।

প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করতে পারেন।
ছবি: পেক্সেলস

প্রুফ রিডিং

পড়ার অভ্যাস ও ভাষাগত দক্ষতা—দুটিই যদি আপনার থাকে, তাহলে প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করতে পারেন। প্রুফ রিডিং, অর্থাৎ পাণ্ডুলিপির ভুলত্রুটি সংশোধন করা হতে পারে আপনার ফুলটাইম পেশা কিংবা বাড়তি আয়ের একটি মাধ্যম। প্রুফ রিডার হিসেবে আপনি বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থায় চাকরি পেতে পারেন, ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন। আপওয়ার্ক, ফাইভারের মতো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রুফ রিডারদের চাহিদা আছে। প্রুফ রিডিং শেখা খুব একটা কঠিন নয়, তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ভাষাগত দক্ষতা খুবই জরুরি। শুদ্ধ বানান, বিরাম চিহ্নসহ ব্যাকরণগত দিকগুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

সূত্র: মিডিয়াম ডটকম

আরও পড়ুন