বড়বেলায় কি বন্ধুত্ব হয়?
স্কুলের বন্ধুরা তো কবেই হারিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে তবু কখনো কখনো যোগাযোগ হয়। তবে ব্যস্ততা বাড়ার পর সেটিও অনেকের ঠিকঠাক মতো আর হয়ে ওঠে না। কোনো কোনো মানুষের আবার বেড়ে ওঠার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধু হয়তো অনেকেই; কিন্তু মনের মতো বন্ধু কী! অথচ বন্ধু ছাড়া জীবনটা সত্যিই সাদা–কালো। একটা সময় এসে কর্মক্ষেত্রের চাপ আর পরিবারের সব দায়িত্ব সামলানোর পর নিজেকে ‘একলা মানুষ’ হিসেবে আবিষ্কার করেন অনেকে। সব আয়োজনের মধ্যে পরিবারের প্রিয় মুখগুলো থাকা সত্ত্বেও আপনি একাকিত্বে
ভুগতে পারেন। এই একাকিত্ব স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ। অথচ আপনি এই একাকিত্ব ঘুচিয়ে নিতে পারেন বন্ধুত্বের জাদুতে। বড় বয়সেও বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায়।
নতুন বন্ধুর খোঁজে
শিক্ষাজীবন পেরোনোর পর কীভাবে বন্ধুত্ব শুরু করবেন, তা নিয়ে দ্বিধা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ইতিবাচক থাকুন। চেনাজানা মানুষ থেকে তিন বা পাঁচজনের একটি তালিকা করতে পারেন, যাঁদের আপনি পছন্দ করেন; আর বিশ্বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া সম্ভব। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার চেষ্টা করতে পারেন। অবশ্যই আলাদা আলাদাভাবে। খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন, কফির নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন, ছোট্ট উপহার পাঠাতে পারেন। হয়তো আপনি সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান। সে ক্ষেত্রে অফিসের কোনো অনুষ্ঠানে একসঙ্গে তোলা ছবি পাঠাতে পারেন তাঁকে। এমনও হতে পারে, কেউ বিড়াল বা কুকুর ভালোবাসেন; বিড়াল বা কুকুর নিয়ে মজার কোনো প্রতিবেদন পড়ে আপনার তাঁর কথা মনে পড়ল। সেই প্রতিবেদনও পাঠাতে পারেন তাঁকে। আপনার আলাপ, আপনার বার্তা কিংবা আপনার দেহভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনেই হতে পারে বন্ধুত্বের সূচনা। কথা বলুন। নিজের ভালো থাকা, মন্দ থাকা ভাগ করে নিন। আন্তরিকভাবে খোঁজ নিন অপর পক্ষেরও। অবশ্য তাঁর মনটাও বুঝতে হবে। তিনি আপনাকে বন্ধু হিসেবে নিচ্ছেন কি না, তা উপলব্ধি করুন। তিনি না চাইলে গায়ে পড়ে বন্ধুত্ব করার দরকার নেই। পার্কে হাঁটতে গিয়েও নতুন বন্ধু পেতে পারেন। প্রতিবেশীদের মধ্যেও কেউ বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। সঠিক মানুষ খুঁজে দেখুন নিজেই। বন্ধুর খোঁজে সময় দিন।
গণ্ডিবদ্ধ থাকবেন না
বন্ধুত্বের বৃক্ষকে বিস্তৃত হতে দিন। একজন মানুষ কিন্তু সব সময় বন্ধু হিসেবে আপনার সব ‘চাওয়া’ পূরণ করতে পারবেন না; বরং তিনজন বা পাঁচজন বন্ধুর কাছ থেকে আপনি পাবেন বন্ধুত্বের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। ভাবনার পাখা মেলে দিন। জীবনের কোনো অপূর্ণ স্বপ্ন শুরু হতে পারে নতুন বন্ধুত্বের মাধ্যমে। তবে সব সময় মনে রাখবেন, যাঁর সঙ্গে বসে আপনি পরনিন্দা বা পরচর্চা করবেন, তাঁর সঙ্গে আর যা-ই হোক, সত্যিকারের বন্ধুত্ব কখনোই হবে না। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিষয়ে বন্ধুর সঙ্গে মতানৈক্য থাকতেই পারে। তা নিয়ে বাগ্যুদ্ধে জড়াবেন না। আলোচনা হতে পারে। তবে তা যেন কারও ওপর জোর খাটানোর মতো বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়। বন্ধুত্বে একজন আরেকজনকে বুঝতে পারাটাই জরুরি।
বন্ধুত্বেই উজাড় হোক মন
যোগাযোগ বজায় না রাখলে বন্ধুত্বে মরচে পড়বেই। নতুন-পুরোনো সব বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য। ‘ও আগে ফোন করুক, আমি এরপর একদিন করব,’ বন্ধুত্বে এমন ভাবনার ঠাঁই নেই। ব্যস্ত থাকলেও বন্ধুর বার্তার উত্তর দিন সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। বন্ধুর জীবনের বিশেষ কোনো সময় ঘনিয়ে এলে আপনি তাঁকে আগেভাগেই শুভকামনা জানিয়ে বার্তা পাঠাতে পারেন। এ রকম বার্তা দেওয়ার অর্থই হলো, আপনি তাঁর জন্য আলাদাভাবে ভাবছেন। তবে দিন–রাত বার্তা পাঠানোও আবার ঠিক নয়; অনুমতি না নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুকে ‘ট্যাগ’ করাও ঠিক নয়। এসব কাজে তিনি বিরক্ত হতে পারেন।
অনুভব করুন বন্ধুকে
কারও কথার মাঝে কথা বলবেন না। আপনি যদি নতুন-পুরোনো যেকোনো বন্ধুর দুঃখের কথার মাঝখানে বলে বসেন, ‘আমি জানি, তোমার কেমন লাগছে’, তাহলে কিন্তু তিনি আপনার সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে স্বস্তি পাবেন না। মন দিয়ে শুনুন তাঁর কথা। এরপর সম্পূরক প্রশ্ন করুন। আপনার কথায় প্রকাশ করুন, আপনি তাঁর কথা শুনে বুঝতে পারছেন তিনি কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। যখন আপনারা যেকোনো বিষয়ে সামনাসামনি কথা বলছেন, তখন যদি আপনি বারবার মুঠোফোন দেখেন, তাহলে কিন্তু বন্ধুত্বে চির ধরতে পারে সহজেই। বরং মনোযোগ দিন বন্ধুর প্রতি। বন্ধুর ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দিন। বন্ধুর সঙ্গে কোনো পরিকল্পনা করে থাকলে সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন সব সময়। এক পক্ষের কারণে শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বাতিল করাটা বন্ধুত্বের জন্য ভীষণ নেতিবাচক।
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট