বাড়তি আয়ের জন্য এই ৫ দক্ষতা অর্জন যখন ইউটিউবেই সম্ভব
বিশেষজ্ঞরা হয়তো আপনাকে তাঁদের অনলাইন কোর্স কিনতে বলবেন। কারণ, কোর্সগুলো কাঠামোবদ্ধ ও সহজলভ্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আজকের যুগে সিংহভাগ তথ্য বিনা মূল্যেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য এক করে কোনো কিছু শেখা এখন অসম্ভব নয়। নিচে এমন পাঁচটি স্কিল বা দক্ষতার কথা তুলে ধরা হলো, যেসব সময় ও শ্রম ব্যয় করে শিখতে পারলে আপনি একটা পূর্ণকালীন চাকরির বেতনের সমান অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
১. কপিরাইটিং
আপনি খুব ভালো ব্লগ লেখেন, ফেসবুকে হয়তো ঝরঝরে ভাষায় স্ট্যাটাস দেন, ভিডিওর জন্য স্ক্রিপ্ট লেখেন কিংবা সেলস পেজের ড্রাফটিং করেন—এসবই কিন্তু কপিরাইটিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। কপিরাইটিং মানে শুধু একটার পর একটা শব্দ গেঁথে চলা নয়, আপনাকে আপনার পাঠকের সমস্যা বুঝতে হবে, তার সমাধানও দিতে হবে। এটি মনস্তত্ত্ব ও শিল্পের এক সংমিশ্রণ।
প্রশ্ন হলো, কপিরাইটিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে অর্থ উপার্জন করবেন? ফাইভার কিংবা আপওয়ার্কের মতো ফ্রিল্যান্সিং করার ওয়েবসাইটগুলোতে হরহামেশাই কপিরাইটার খোঁজা হয়। নিজের কপিরাইটিং স্কিল আপনি নিজের ওয়েবসাইটের কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটের সেলস পেজের লেখাগুলো যদি সুন্দর হয়, তাহলে আপনার পণ্য বিক্রির সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেক। কপিরাইটিং শুধু একটি দক্ষতা নয়, একে আপনি সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। যেকোনো সম্পদের মতোই দিনে দিনে এর মূল্য বাড়ে।
২. কনটেন্ট ক্রিয়েশন
ডিজিটাল যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো কনটেন্ট। সকালে যে ব্লগ পোস্টটি পড়েছেন, সেটি থেকে শুরু করে রাতে যে ইউটিউব ভিডিওটি দেখবেন—সবই কনটেন্ট। কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন পণ্যের প্রচার, অনলাইন কোর্স বিক্রি, এমনকি কনসাল্টিং সার্ভিসও চালু করতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, আপনি বিনা মূল্যেই কনটেন্ট ক্রিয়েশন শিখতে পারবেন। ইউটিউবে এ বিষয়ে প্রচুর টিউটরিয়াল আছে।
প্রথমে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের জন্য আপনার আগ্রহ ও দক্ষতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটা উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন করুন। তারপর সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কনটেন্ট তৈরি করতে থাকুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনার কনটেন্টগুলো প্রচার করুন। একটি বড়সংখ্যক পাঠক–দর্শক তৈরি হওয়ার পর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসর্ড পোস্ট, এমনকি আপনার নিজস্ব পণ্য বিক্রির মাধ্যমেও আপনি কনটেন্ট থেকে আয় করতে পারবেন। কনটেন্ট ক্রিয়েশন আদতে একটা ‘বিজনেস মডেল’। একবার এটি আয়ত্ত করতে পারলে আপনি শুধু কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবেন না, আপনি হবেন একজন উদ্যোক্তা।
৩. ফানেলস
‘সেলস ফানেল’ হলো পণ্য বিক্রির একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেলে সম্ভাব্য ক্রেতারা আনমনে পণ্য দেখতে দেখতেই কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। অনলাইন ব্যবসা নিয়ে যদি আপনার হাবুডুবু খাওয়ার দশা হয়, তাহলে এই ‘ফানেল’ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে পারেন। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে ফানেলস পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করার অর্থ হলো আপনি নবিশ থেকে অভিজ্ঞদের কাতারে উন্নীত হলেন।
একটি সেলস ফানেল যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে একবার একজন ক্রেতা কোনো কিছু কিনলে সেখান থেকেই বারবার কিনতে আসেন এবং তাতে আয় করা সম্ভব। আপনি অনলাইন ব্যবসায় উন্নতি করতে চাইলে সেলস ফানেলে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে।
ফানেল আপনার প্রতিটি ক্রেতার ‘লাইফটাইম ভ্যালু’কে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে সহায়তা করে।
আপনার ট্র্যাফিককে (যাঁরা একটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন) সরাসরি আপনার সেলস পেজে না পাঠিয়ে তাঁদের একটি ফানেল অনুসরণ করতে দিন। প্রথমে সম্ভাব্য ক্রেতাদের ই–মেইল আইডি সংগ্রহ করার জন্য একটি লিড ম্যাগনেট (এমন একটি ফ্রি অফার, যার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাদের ফোন নম্বর, ই–মেইল আইডি ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়) তৈরি করুন। তারপর ধারাবাহিকভাবে কিছু আপসেলস, ডাউনসেলস এবং ই–মেইল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করুন। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘স্ট্র্যাটেজিক সেলিং’।
অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই সেলস ফানেল তৈরি করার জন্য লোক নিয়োগ দিতে আগ্রহী। এটি বৈধ সেবা, যার বিনিময়ে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এ কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার ডলার আয় করা সম্ভব।
৪. এসইও
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও অনেকের কাছে জাদুবিদ্যার মতো মনে হতে পারে। আদতে একটু চর্চা করলেই বিষয়টি রপ্ত করা যায়। এসইওর ভবিষ্যৎ হয়তো নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে, কিন্তু চাহিদা কখনোই কমবে না। ইউটিউবের এসইও–সংক্রান্ত কোর্স ও টিউটরিয়াল দেখে, এসইও নিয়ে লেখা বিভিন্ন ব্লগ পড়ে আপনি এসইও শেখা শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না।
এসইও শেখার পর আপনার নিজের কোনো অনলাইন ব্যবসা থাকলে নিজের ওয়েবসাইটের এসইও নিজেই করতে পারবেন। অথবা ব্যবসা হিসেবে অন্যান্য ওয়েবসাইটের জন্যও আপনি এসইও করে দিতে পারবেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সব সময়ই সার্চ র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। এসইও যদি আপনি ভালো বোঝেন, তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কনসালটেন্সি বা পরামর্শ দিতে পারবেন কিংবা পূর্ণকালীন চাকরিও করতে পারবেন।
এসইও–সংক্রান্ত পড়াশোনায় প্রথমে ভয় লাগতে পারে। নিজের একটি ব্লগ তৈরি করুন, আপনি যা শিখেছেন, সেসব সেই সাইটে পরীক্ষা করে দেখুন। এভাবে আপনি শিখতে শিখতেই নিজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারবেন। কে জানে, হয়তো আপনার ব্লগ আপনার আয়ের আরেকটা উৎস হয়ে উঠবে!
৫. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শুনলেই মনে হতে পারে, না জানি কত কঠিন কাজ! হ্যাঁ, কাজটি কঠিন বটে। তবে অনলাইনে অন্যান্য কাজ শেখার চেয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখা সহজ। আজকের ডিজিটাল পৃথিবীতে ওয়েব অ্যাপ তৈরি করা জানলে আপনি আর দশজনের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। আর হ্যাঁ, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আপনি বিনা মূল্যেই শিখতে পারবেন। একবার শিখে গেলে নিজেই নিজের অনলাইন সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে কিংবা অন্যদের গড়তে সহযোগিতা–সহায়তা করতে পারবেন। Freecodecamps কিংবা w3schools ওয়েবসাইট থেকে আপনি বিনা মূল্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন। ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে অর্থ উপার্জনের অনেক সুযোগ। ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন, যেসব কোম্পানির ওয়েবসাইটের প্রয়োজন, তাদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। ওয়েব অ্যাপ, ক্রোম এক্সটেনশন, ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন, স্ল্যাক অ্যাপ, স্যাস ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি করতে পারবেন। আর এসব কাজ আপনাকে দেবে বাড়তি টাকা। আর চাইলে পূর্ণকালীন চাকরি বা ব্যবসার সুযোগ তো অবারিত।
সূত্র: মিডিয়াম ডটকম