খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাফেটেরিয়া কেন অন্য রকম
সুন্দরবনের অন্যতম বনজ সম্পদ গোলপাতা দেখতে কিন্তু মোটেও গোল না, অনেকটা নারকেল পাতার মতো। বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ আর্থিক সংকট ও সহজপ্রাপ্যতার কারণে ঘর তৈরিতে গোলপাতা ব্যবহার করতেন। তবে এখন নামী-দামি কফিশপ ও রিসোর্ট তৈরিতে গোলপাতা ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই গোলপাতা দিয়েই তৈরি হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাফেটেরিয়া।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও একটি ক্যাফেটেরিয়া ছিল। প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো। সেটা জায়গায় এখন নির্মাণ করা হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোলপাতা দিয়ে ব্যতিক্রমী এই ক্যাফেটেরিয়াটি বানানো হয়েছে। গোলপাতার ছাউনি আর দৃষ্টিনন্দন কাঠামোর ক্যাফেটেরিয়াটির উদ্বোধন হয়েছে গত ৯ জুলাই। তার পর থেকেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা খুব আগ্রহ নিয়ে এই ক্যাফের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।
নির্মাতাদের দাবি, দেশে গোলপাতা দিয়ে তৈরি এটিই সবচেয়ে বড় কাঠামো। আয়তন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট। যৌথভাবে এটির নকশা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) প্রধান অধ্যাপক শেখ সিরাজুল হাকিম ও সহকারী অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম। গোলপাতার ছাউনি ব্যবহারের ধারণাটি দিয়েছেন উপাচার্য মাহমুদ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক। সুন্দরবন নিয়ে তাঁর বেশ কিছু গবেষণা আছে।
এই ক্যাফেটেরিয়ার বেশ কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। ক্যাফেটেরিয়ার চারদিক খোলা। একে প্রথাগত ঘর বলা যাচ্ছে না, আবার কেবল ছাউনি দেওয়া চালাও বলা যায় না। সামনের ও পেছনের অংশ প্রায় একই রকম, অনেকটা ত্রিভুজ। পর্যাপ্ত আলো–বাতাস চলাচলের জন্যই খোলামেলা আবহ রাখা হয়েছে। পেছনে আছে হোগলাবন। পাশে বাঁশঝাড়। অন্য দিকে ছোট্ট পুকুর। সেখানে পদ্ম ও শাপলা ফোটানোর কাজ চলছে।
ক্যাফেটেরিয়ার ছাউনি ৩০ ফুট উঁচুতে দেওয়া হয়েছে। নির্মাতারা জানালেন, চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকবে, তখন গোলপাতার ছাউনির কারণে ইটের তৈরি পাকা ঘরবাড়ির তুলনায় এখানে তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি কম থাকবে। আবার শীতের সময় অধিকাংশ স্থানে মিষ্টি রোদের আমেজ পাওয়া যাবে। ছাউনিতে ব্যবহৃত গোলপাতা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। ফলে এর স্থায়িত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় ৪-৫ বছর বাড়বে।
ক্যাফেটেরিয়ায় একসঙ্গে দুই শতাধিক লোকের বসার ব্যবস্থা আছে। যেখানে রান্না হয়, শুধু সেখানেই দেয়াল চোখে পড়ল। সামনের অংশ শিক্ষার্থী আর পেছনের অংশ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই ক্যাফে। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে রাতের খাবার—সবই পাওয়া যায়। কথা হলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আগের ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ে এই ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান ভালো। বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজি, খিচুড়ি—সবই পাওয়া যায়। দামও শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে রাখা হয়েছে। খাওয়াদাওয়া ছাড়াও নতুন ক্যাফেটেরিয়া আমাদের একটা আড্ডার জায়গা হয়ে গেছে।’
ক্যাফেটেরিয়াটাকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা। উপাচার্য মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়ার আশপাশের পরিবেশ আরও উন্নয়নের পরিকল্পনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে যাঁরা আসেন, তাঁদের কাছেও যেন জায়গাটা জনপ্রিয়তা পায়, সেভাবেই আমরা সাজাচ্ছি।’