লন্ড্রিতে টাকা না দিয়ে বাসায় সহজে কম্বল-কম্ফোর্টার পরিষ্কার করবেন যেভাবে
শীত বিদায় নিচ্ছে। এবার ভারী কম্বল-কম্ফোর্টারগুলো তুলে রাখার পালা। সযত্নে তুলে রাখার আগে এসব পরিষ্কার করা কিন্তু অতি জরুরি। কেননা এত দিনের ব্যবহৃত কম্বল-কম্ফোর্টার ধুলাবালু, শরীরের ক্ষুদ্র মৃত চামড়া ও অদৃশ্য জীবাণু, পোষা প্রাণীর লোম আর গন্ধে জর্জরিত। তাই কম্বল ও কম্ফোর্টার পরিষ্কার না করে তুলে রাখা মানে ঘরে জীবাণুর চাষবাস করা। আর জীবাণু মানেই গুপ্ত ঘাতক। তবে একেকটা কম্বল ও কম্ফোর্টার লন্ড্রিতে ধুতে দিলে বেশ কিছু টাকা গুনতে হয়। তাই ঘরেই এসব পরিষ্কার করে ফেললে সে টাকাটা বেচে যাবে। জেনে নিন ঘরেই সহজে কম্বল-কম্ফোর্টার পরিষ্কার করার উপায়।
ওয়াশিং মেশিনে যেভাবে পরিষ্কার করবেন
কম্ফোর্টার: কম্ফোর্টার ওয়াশিং মেশিনে ধুলে অবশ্যই ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানিতে ধুতে হবে। সঙ্গে অন্য কোনো কাপড়, যেমন বিছানার চাদর বা বালিশের কভার না দেওয়াই ভালো। কম্ফোর্টারের কোমলতা বজায় রাখাতে ড্রায়ারে না শুকিয়ে বরং এয়ার ড্রাই করে শুকানোই ভালো।
ফ্লিস, শেরপা বা প্লাশ ম্যাটেরিয়ালের কম্বল: এসব কম্বল ধুতে বা শুকাতে কোনোভাবেই গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে বাতাসে শুকালেই দীর্ঘদিন এগুলোর কোমলতা বজায় থাকে। বিশেষজ্ঞরা এসব কম্বল পরিষ্কার ও কোমল রাখতে ফেব্রিক সফটনার ব্যবহার করতেও নিষেধ করেন।
উল ও কাশ্মীরি কম্বল: উল ও কাশ্মীরি কম্বল পরিষ্কার করার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। এসব ধোয়ার নির্দেশিকা দেখে নেওয়াও জরুরি। সাধারণত এসবে ড্রাই ক্লিন করার কথাই উল্লেখ থাকে। তবে কম সময়ের জন্য ঠান্ডা পানি ও অল্প ক্ষারধর্মী ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু ব্যবহার করে ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার করা যায়। উল ও কাশ্মীরি কম্বলগুলো ড্রায়ার মেশিনে না শুকিয়ে খোলা জায়গায় বাতাসে শুকানো ভালো।
কুরুশকাঁটায় বোনা কম্বল: বাড়ির বিভিন্ন ডেকোরেশন বা শৌখিন কাজে ব্যবহার করা এসব কম্বল ধোয়ার বেলায় সাবধানতা আবশ্যক। ওয়াশিং মেশিনে এসব কম্বল ধুতে চাইলে সুতি লন্ড্রি ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। কম্বল লন্ড্রি ব্যাগে ভরে ঠান্ডা পানিতে অল্প ক্ষারধর্মী ডিটারজেন্ট দিয়ে হালকা ওয়াশ করতে পারেন। এতে কম্বলের সুতার বুনন খুলে যায় না বা ফাঁকা হয়ে যায় না। কুরুশে বোনা কম্বল কখনোই দড়িতে ঝুলিয়ে শুকানো উচিত নয়, এতে কম্বলের গঠন নষ্ট হয়ে যায়। তাই এয়ার ড্রাই করে শুকানোই সবচেয়ে ভালো উপায়।
সুতি ও লিনেন কম্বল: উল, প্লাশ, নিট বা বোনা কম্বলের চেয়ে সুতি বা লিনেন কম্বলের বুনন একটু বেশি মজবুত। তবে প্রথম কয়েকবার ওয়াশিং মেশিনে ধুলে এসব কিছুটা সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। তাই ড্রায়ার বা ওয়াশিং মেশিন কম তাপমাত্রা ও কম গতিতে ব্যবহার করা ভালো।
ওয়াশিং মেশিন বা হাতে ধোয়া ছাড়াও যেভাবে কম্বল পরিষ্কার করা যায়
কিছুদিন ব্যবহারের পরই কম্বল, কম্ফোর্টারের সতেজভাব কমে যায়, একটু গন্ধ গন্ধ হয়। শীত ছাড়াও আজকাল এসি ঘরে কমবেশি নিয়মিতই কম্ফোর্টার ব্যবহার করা হয়। ফলে সব সময় ধোয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে কম্বল বা কম্ফোর্টারে ভিনেগার স্প্রে করে এয়ার ড্রায়ার করলেই গন্ধ দূর হয়, সতেজতা ফিরে পায়। বাড়িতে ড্রায়ার না থাকলে এক বালতি কুসুম গরম পানিতে এক চামচ ডিটারজেন্ট, এক চামচ শ্যাম্পু, অর্ধেক লেবুর রস, দুই চামচ ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। একটি ছোট পরিষ্কার তোয়ালে এই মিশ্রণে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে কম্বলের ওপর চেপে চেপে মুছে নিন। এভাবে কম্বলের দুই পাশই বারবার চেপে চেপে মুছে নিলে কম্বলের ওপরের ময়লা সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
নির্দেশিকা পড়া জরুরি কেন
কোন পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলে ভালো হবে, তা জানার জন্য অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে কম্বলের সঙ্গে থাকা ‘কেয়ার লেভেল’ পড়তে হবে। কেয়ার লেভেলে লেখা থাকে বা সংকেত দেওয়া থাকে কীভাবে কম্বল পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষত সুতি বা লিনেন ছাড়া অন্য সব সুতা দিয়ে তৈরি এবং ইলেকট্রিক কম্বল ধোয়ার বেলায় কেয়ার লেভেল পড়া আবশ্যক। এসব ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া সম্ভব হলে কীভাবে, কতক্ষণ ও কোন উপকরণ দিয়ে ধুতে হবে, সবই উল্লেখ থাকে কেয়ার লেভেলে।
দাগ দূর করার সময় যা মনে রাখবেন
কম্বলের কোনো দাগ দূর করতে রিমুভার বা ক্লিনার সরাসরি দাগেই প্রয়োগ করতে হবে। কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্রাশ দিয়ে ঘষে বা আলতো করে হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। দাগ দূরীকরণের এসব রাসায়নিকে অনেক সময় কম্বলের রং উঠে যাওয়ার বা রং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই কাপড়ের এক কোণায় আগে অল্প করে ব্যবহার করে দেখা ভালো।
কম্বল শুকানোর বেলায় সতর্কতা
ড্রায়ারে কম্বল শুকালে অবশ্যই লো থেকে মিডিয়াম তাপমাত্রায় শুকাতে হবে। হাই হিট দিলে বেশির ভাগ (উল, সিন্থেটিক, কুরুশে বোনা) কম্বল নষ্ট হয়ে বা সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। এসব কম্বল বাতাসেই শুকানো উচিত। কিছু কম্বল ড্রায়ারে শুকানোর পরও ভেজা ভাব থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে রোদ ও বাতাসে কিছুক্ষণ শুকানো দরকার। এতে কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকেও নিস্তার পাওয়া যায়।