জেন-জিরা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডদের মধ্যে কী খোঁজেন
জেন-জিদের অনেকেই এখন পূর্ণবয়স্ক তরুণ-তরুণী। অনেকেই পড়াশোনা শেষে যুক্ত হয়েছেন কর্মক্ষেত্রে। কেউ কেউ আবার শুরু করেছেন সংসারজীবন। তবে অনেকেই এখনো অবিবাহিত, কেউ কেউ প্রেম করছেন, কেউবা মনের মতো সঙ্গী খুঁজছেন। কেমন জীবনসঙ্গী চান তাঁরা? কজন জেন–জির সঙ্গে কথা বলে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।
এত ঝামেলার কী দরকার?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেন–জি তরুণ সম্পর্কের প্রায় এক ডজনের বেশি নতুন ধরনের কথা জানালেন। সিচুয়েশনশিপ, ব্রেড ক্রাম্বিং, বেঞ্চিং, কাফিং, গোস্টিং, জম্বিং, ড্রাই ডেটিং, ফ্লি-বেগিং, কুশনিং, রিজ, পকেটিং ছাড়াও আরও কত কি! এসব বিষয়ে জ্যেষ্ঠ জেন-জি, অর্থাৎ ২৫, ২৬, ২৭ বছর বয়সী যতজনকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবার উত্তরই এক, এত ঝামেলার কী দরকার? বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একজন বললেন, ‘সাধারণত ২২–২৩ বছরের কম বয়সীরা এ ধরনের সম্পর্কে বেশি অভ্যস্ত বা চর্চা করছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেকেই বুঝতে পারেন, যা করছেন, তা ঠিক নয়। কিন্তু বুঝতে বুঝতেই দেরি হয়ে যায়। হযবরল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও মানসিক ক্ষত থেকে যায়। সেটা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।’
সে শুনবে এবং বলবে
কথা বলা ও শোনার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা না হলেই সম্পর্কে শুরু হয় টানাপোড়েন। বেশির ভাগ সময় আরেকজন কী বলছে, তা শোনার চেয়ে নিজে কথা বলতে বেশি পছন্দ করি আমরা। দীর্ঘদিনের সম্পর্কেও দেখা যায়, একজন বলেন, অন্যজন শোনেন। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন ২৫ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুস্তাইন আহমেদ। তাঁর কথা, ‘সঙ্গীকে অবশ্যই নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে পারতে হবে। কারণ, অন্যের মস্তিষ্কে কী চলছে, তা না বললে বোঝা অসম্ভব।’
মনে একটা, মুখে আরেকটা চলবে না
‘মানুষ কি আমাকে সত্যি সত্যি গুরুত্ব দিচ্ছে?’ আজকাল সম্পর্কের শুরুতে মাথায় এই একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায়। এর কারণ অবশ্য আছে। আজকাল অনেকেই পরিচয়পর্বের সময় নানা রকম মিথ্যা বলে মন জয় করার চেষ্টা করেন। সব সময় কথা বলে, খোঁজ রেখে গুরুত্ব দেওয়ার অভিনয় করেন। সেটা দেখে অনেকেই ভেবে বসেন, মানুষটি হয়তো তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে অনেকেরই হৃদয় ভাঙে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম। তিনি বলেন, ‘কথার সঙ্গে কাজে মিল থাকতে হবে। মানুষের কাজ এবং ব্যবহার দিয়ে সহজেই মন যাচাই করা যায়।’
আমার মতো ভাবে
জারিন তাসনিম বলছিলেন, ‘একেবারে নিজের মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবু আমরা এমন কাউকে খুঁজি, যাঁর সঙ্গে আমাদের কিছু না কিছু মিলবে, বিশেষ করে চিন্তা-চেতনা। চিন্তাভাবনায় মিল না থাকলে তো বন্ধু হওয়াই বেশ কঠিন।’
সবার সঙ্গে মিশতে জানে
স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের এই যুগে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারাকে আজকাল একটা গুণ হিসেবেই দেখছেন জেন-জিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান বলেন, ‘সাবই এখন একা থাকতে চান। কিন্তু সবার সঙ্গে মিলেমিশে সম্পর্কগুলোও তো বাঁচিয়ে রাখতে হয়। তাই সঙ্গী বা জীবনসঙ্গীর মধ্যেও এই গুণ থাকা চাই।’
আমাকে বোঝে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ বছর বয়সী এক তরুণ বললেন ‘ফ্লুইড’ সম্পর্কটি নিয়ে। ফ্লুইড এমন এক সম্পর্ক, যেখানে একে–অপরের মধ্যে তেমন বোঝাপড়া না থাকলেও দুজন সম্পর্কে থাকেন। ওই তরুণ বললেন, ‘এমন সম্পর্কে থাকা দুটি মানুষ একে–অপরের ব্যক্তিগত জীবন খুব একটা ঘাঁটান না, সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথাও বলেন না। এ ধরনের সম্পর্কে বিশ্বাসের কোনো জায়গা থাকে না। সবাই সবাইকে বুঝবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবু এত লোকের ভিড়ে আমরা এমন একজনকে খুঁজি, যে আমাকে বুঝবে। এটা শুধু জেন-জি বা অন্য কোনো প্রজন্মের জন্য ধরাবাঁধা বিষয় নয়। পরস্পর বোঝাপড়া আমরা সবাই চাই। সেটার শুরু আমরা নিজেকে দিয়েই করতে পারি। অন্যে আমাকে বুঝবে কি না চিন্তা না করে, অন্যকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি।’
চাই সহজ সম্পর্ক
সম্পর্কের নানা ধরন এবং সংজ্ঞা তৈরি করেছেন জেন-জিরা। অগভীর সম্পর্ককে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করে জেন-জিদের একজন বলেন, ‘একজনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়ানোর ভীতি থেকে হালকা কিংবা গুরুত্বহীন সম্পর্কে জড়াতে চান অনেকে। যাঁরা এসব করেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিজের ব্যাপারে হতবিহ্বল থাকেন। না চাইতেও অন্যের মানসিক পীড়ার কারণ হন।’
পৃথিবী সম্পর্কে অবগত
‘জেন-জিরা দেশ-বিদেশে চলমান সবকিছু নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা এমন সঙ্গী চান, যাঁর সঙ্গে মন খুলে, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।’ এমনটাই বললেন শিক্ষার্থী রিফাত হাসান।
যেকোনো একটি বিশেষ গুণ
পড়াশোনার বাইরে বিশেষ কোনো গুণ অবশ্যই আকর্ষণীয়। জেন-জিরা বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। জেন–জিদের মধ্যে যাঁরা গান, নাচ, চিত্রাঙ্কন, মঞ্চ নাটকে অভিনয়, হস্তশিল্প, কুটিরশিল্পের মতো বিষয় চর্চা করেন, তাঁরা সঙ্গীর মধ্যেও এমন কোনো বিশেষ গুণ খোঁজেন।
আমার চেয়েও বুদ্ধিমান
সঙ্গী বা জীবনসঙ্গীর বুদ্ধি নিজের চেয়ে বেশি হলে বেশ খুশিই হন জেন-জিরা। একে–অপরের থেকে কিছু না কিছু জানতে বা শিখতে তাঁরা বেশ আগ্রহী।