যেভাবে এল ফ্যান
বৈদ্যুতিক পাখার আবির্ভাবের আগে, মানুষ নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করত। প্রাচীন মিসরে বড় বড় তালপাতা হাতে চালিত পাখা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। চীনে হান রাজবংশের (২০৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-২২০ খ্রিষ্টাব্দ) সময়ে মানুষের প্রচেষ্টায় যান্ত্রিক ঘূর্ণমান পাখার খোঁজ পাওয়া যায়। সতেরো ও আঠারো শতাব্দীতে উষ্ণ জলবায়ুর বিভিন্ন দেশে বাতাস সঞ্চালনের জন্য বিভিন্ন ভবনে হাতপাখা ও পানিচালিত বায়ু চলাচল ব্যবস্থার ব্যবহার দেখা যায়। ১৮৪৯ সালে উইলিয়াম ব্রানটন সাউথ ওয়েলসে বাষ্পচালিত ফ্যান তৈরি করেন। ১৮৫১ সালে তা প্রদর্শন করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বৈদ্যুতিক পাখার বিকাশ দেখা যায়।
বৈদ্যুতিক পাখার জন্ম
বৈদ্যুতিক পাখার আবিষ্কার ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের সঙ্গে ফ্যানের আবিষ্কার দেখা যায়। ১৮৮২ সালে ক্রোকার অ্যান্ড কার্টিস ইলেকট্রিক মোটর কোম্পানির একজন মার্কিন প্রকৌশলী শুইলার স্ক্যাটস হুইলার প্রথম বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি করেন। হুইলারের নকশায় দুটি ধাতব ব্লেড ছিল, যা একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই ফ্যান ঘরের ভেতরে বায়ু সঞ্চালনে বিপ্লব এনেছিল। তাঁর আবিষ্কার ছিল যান্ত্রিকভাবে শীতল বাতাসের খোঁজে প্রথম পদক্ষেপ।
১৮৮৬ সালে জার্মান-মার্কিন প্রকৌশলী ফিলিপ ডাইহল একটি বৈদ্যুতিক পাখাকে একটি সিলিং কাঠামোতে যুক্ত করে সিলিং ফ্যান তৈরি করেন। ডাইহলের পাখায় স্বয়ংসম্পূর্ণ মোটর ছিল। ১৮৮০ দশকের শেষের দিকে ডাইহলের কোম্পানি সিলিং ফ্যান উৎপাদন শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। বেশ কয়েকটি কোম্পানি ব্যাপকভাবে ফ্যান উৎপাদন শুরু করে। জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি ও ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক করপোরেশন প্রথম বৃহৎ পরিসরে বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি শুরু করে। ওই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যান একটি সাধারণ গৃহস্থালি ও অফিসের যন্ত্র হয়ে ওঠে।
১৮৯০ সালে জন ওয়েসলি এমারসন এমারসন ইলেকট্রিক প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান ফ্যান প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯০৯ সালে জাপানের কেডিকে গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে বৈদ্যুতিক ফ্যান উদ্ভাবন করে। ১৯২০ ও ১৯৩০ দশকে ফ্যানের বিভিন্ন নকশা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা যায়। ১৯৪০ দশকে ভারতের ক্রম্পটন গ্রিভস বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যান প্রস্তুতকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৯৮০ দশকে প্যানাসনিক ও মিৎসুবিশির মতো জাপানি প্রতিষ্ঠান ফ্যানের বাজারে প্রবেশ করে কমপ্যাক্ট ও উন্নত মডেল প্রবর্তন করে। রিমোট–নিয়ন্ত্রিত ফ্যান ও আয়নাইজিং প্রযুক্তির মতো উদ্ভাবন দেখা যায় তখন। ১৯৯০ দশকে ডাইসন ও হানিওয়েলের মতো ব্র্যান্ড ফ্যান প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে ডাইসন ব্লেডলেস ফ্যান তৈরি করে চমক দেয়। এখন বাজারে ডাইসন, শাওমি ও ফিলিপসের মতো কোম্পানির ফ্যানে ওয়াই-ফাই ও ভয়েস-নিয়ন্ত্রিত দেখা যায়। এসব ফ্যান স্মার্টফোন ও স্মার্ট হোম অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ফ্যান
উনিশ শতকের শেষের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যুৎ চালু হয়। ১৯০০ সালের দিকে ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক পাখা আসে। তখন ব্রিটিশরা সরকারি ভবন, রেলস্টেশনে তা ব্যবহার শুরু করে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্যান আমদানি করা হতো। জেনারেল ইলেকট্রিক ও ওয়েস্টিংহাউসের মতো কোম্পানি ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও ধনী ভারতীয় পরিবারে ফ্যান সরবরাহ করত। ১৯২০ ও ১৯৩০ দশকে ভারতীয় উপমহাদেশে রেলস্টেশন, হোটেল ও সরকারি অফিসে সিলিং ফ্যান দেখা যায়। কলকাতা, বোম্বে ও ঢাকার মতো প্রধান শহরের ব্রিটিশ অফিসে ফ্যান দেখা যায়।
সূত্র: উইকিপিডিয়া ও ফ্যান মিউজিয়াম