কেমন হলো হামজা–জামালদের নতুন জার্সি, ডিজাইনার কী বললেন
এই জার্সির নকশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে বলেছেন, ‘সেরা জার্সি’। কেউ কেউ বলছেন, ‘ভালোই’। এই জার্সির ডিজাইনার তাসমিত আফিয়াত কী বললেন?
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের নতুন জার্সির রং টকটকে লাল। জাতীয় পতাকার সূর্য থেকেই যে এই রং নেওয়া হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের মানচিত্রে যেভাবে নদী বয়ে গেছে, জার্সিটির বুকের ওপর সেই মোটিফেই আঁকা হয়েছে নদী। এই নদী যেন মানুষের একতা ও ফুটবলের দলগত শক্তির প্রতীক। দুই হাতায় উঠে এসেছে জাতীয় ফুল শাপলা থেকে অনুপ্রাণিত হীরা আকৃতির জ্যামিতিক মোটিফ। জার্সির পেছনে ইংরেজি অক্ষরে ‘বাংলাদেশ’ লেখায় ফুটে উঠেছে আমাদের মানচিত্র। এককথায় ডিজাইনের মূল থিম হলো ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’। জার্সিটিতে আরও আছে বাফুফে ও বাংলাদেশি অ্যাথলেজার ওয়্যার ব্র্যান্ড ‘দৌড়’-এর লোগো।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের নতুন জার্সির (অ্যাওয়ে) নকশা করেছেন বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার তাসমিত আফিয়াত, তাঁর ডাকনাম আর্নি। ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্ট্রাইডের প্রতিষ্ঠাতা ও সৃজনশীল পরিচালক তিনি। জার্সির নকশা সম্পর্কে তাসমিত আফিয়াত বলেন, ‘জার্সিটিতে শাপলা ফুলের মোটিফকে হীরা আকৃতিতে তুলে ধরেছি। আমাদের ফুটবলাররা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেন, তাঁরা তো একেকটা হীরার টুকরা। জার্সির বুকে বাংলাদেশের মানচিত্রে নদীর গতিপথও উঠে এসেছে। সেটা অনেকটা ইংরেজি বড় হাতের “ওয়াই”-এর মতো। কোনো খেলোয়াড় যখন দুই হাত ওপরে তুলে বিজয় উদ্যাপন করেন, সেটাও দেখতে “ওয়াই”-এর মতোই লাগে। ফলে তা একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান নদীর গতিপথ আর বিজয়—দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করে।’
এই জার্সির নকশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে বলেছেন, ‘সেরা জার্সি’। কেউ কেউ বলছেন, ‘ভালোই’। ডিজাইনার আফিয়াত বলেন, ‘খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রথম তিন ঘণ্টায় সব জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন করে প্রি–অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। আমি আসলে একটা মানদণ্ড তৈরি করতে চেয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ জার্সির নকশায় অন্তত এই মানদণ্ডের সমান বা এর চেয়েও ভালো বানানোর চ্যালেঞ্জটা নেন।’
অনেকেই এই জার্সি নিয়ে ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ফেসবুকে জার্সি উন্মোচনের ভিডিওর নিচে কয়েকজন লিখেছেন, জার্সির ডিজাইন বেশি ‘সিম্পল’ হয়ে গেছে। একজন লিখেছেন, ‘জার্সির রং পুরোটাই লাল কেন? একরঙা হওয়ায় দেখতে একঘেয়ে লাগছে। বিপরীত রং বা শেড থাকলে আরও ভালো দেখাত।’ আরেকজন আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘এই যুগেও এমব্রয়ডারি করা লোগো? প্রিমিয়াম কোয়ালিটির রাবারের স্টিকার লোগো পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?’ অনেকেই বাফুফের নতুন লোগোর দাবি জানিয়েছেন। সেই নকশা কেমন হতে পারে, অনেকে সে বিষয়ে পরামর্শও দিয়েছেন।
এসব নিয়ে আফিয়াতকে প্রশ্ন করি। জবাবে তিনি বলেন, ‘কেবল লাল রঙে জার্সি বানানোর কারণ, আমরা স্টেডিয়াম থেকে বা টেলিভিশনে খেলোয়াড়দের পরনের জার্সিকে অনেকটা পাখির চোখে (বার্ডস আই ভিউয়ে) দেখি। সবুজ মাঠে যখন খেলোয়াড়েরা খেলেন, সেটাকে বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকার মতোই দেখায়। বিশ্বের সবচেয়ে ভালো নকশার জার্সিগুলো মিনিমাল ডিজাইনে করা। তবে সেই নকশার গভীরতা থাকে। আর সেটিই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। তাই কারও কারও কাছে বেশি সিম্পল লাগলেও কিছু করার নেই।’
বাফুফের ডিজাইনারদের দল বাফুফের লোগোর নকশা নিয়ে কাজ করছে বলেও জানালেন তাসমিত আফিয়াত।
জার্সিটির দাম রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। তবে দাম হাজারের মধ্যে রাখতে অনুরোধ করেছেন অনেকে। নতুন সংগ্রহে সব সাইজ (ডাবল এক্সএল, ট্রিপল এক্সএল) যাতে সহজলভ্য হয়, সে দাবিও জানিয়ে রেখেছেন কয়েকজন। ২৫ মার্চ ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপের তৃতীয় বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে হামজা–জামালরা এই জার্সিতেই দেখা দেবেন মাঠে। আপনার কেমন লাগল এই জার্সি, কমেন্ট করে জানাতে পারেন।