খরচ কমাতে বছরের শুরু থেকেই করুন এই ৫ অভ্যাস
বেশ কয়েক বছর ধরেই হয়তো খরচের লাগাম টেনে ধরার কথা ভাবছেন। কিন্তু কিছুতেই ব্যয়টাকে বাগে আনতে পারছেন না। বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদির বিল, বাজার খরচ—সব মিলিয়ে দিশাহারা হওয়ার জোগাড়। তবে দুর্দিনের কথা মাথায় রেখে সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। হুট করে যেমন আপনার আয় বেড়ে যাচ্ছে না, তেমনি হুট করে বড়সড় কোনো খাতের খরচ কমাতেও পারছেন না। কিন্তু এরপরও এমন কিছু ছোটখাটো বিষয় থাকে, বছরের শুরু থেকেই যেগুলোর সমন্বয় করে আপনি হয়ে উঠতে পারেন সাশ্রয়ী।
১. সাশ্রয় করুন বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী সামগ্রী ব্যবহার করুন। বিনা প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তো চালিয়ে রাখবেনই না; বরং প্রয়োজন না থাকলে প্লাগ থেকে খুলে রাখতে পারেন। এই যেমন প্রয়োজন ফুরালেই রাউটার বন্ধ করে প্লাগ খুলে নেওয়া ভালো। ঘুম থেকে উঠে পড়ুন ভোরবেলা। দিনের আলোয় কাজ সারুন, যাতে রাতে খুব বেশি বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন না পড়ে, কিংবা মৃদু আলোতেও কাজ চলে। রাত জেগে টেলিভিশন দেখা বা মুঠোফোন চালানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। গেজেট–নির্ভরতা কমান। বাড়িতে শিশু থাকলে তাদের বিনোদনের জন্যও সৃজনশীল আয়োজন রাখুন।
২. সুস্থ থাকুন, খরচ কমান
যে পথে রিকশায় যেতে ২০-৩০ টাকা প্রয়োজন, সেই পথটুকু হেঁটেই চলে যান। রোজ এভাবে দুই বেলায় ৪০-৬০ টাকা বাঁচলে মাসে বেশ খানিকটা সাশ্রয় হয়। রোজ হাঁটার ফলে আপনি নিজেকে ‘ফিট’ রাখতেও পারেন বিনা খরচেই। কেবল সুস্থ থাকার জন্য জিমে গিয়ে বাড়তি খরচ করার প্রয়োজনই পড়বে না, যদি আপনি দ্রুত হাঁটেন; এর সঙ্গে খানিকটা সময় ভিন্ন রকম শরীরচর্চা করলে তো আরও ভালো। সকালে হয়তো কিছু পথ হেঁটে অফিসে গেলেন, অফিস থেকে ফেরার পথেও আবার একইভাবে হাঁটলেন; যেকোনো একটি বেলায় বাড়ির কাছের পার্কে কিংবা বাড়ির ছাদে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিলেন। ব্যস, হয়ে গেল জিমের কাজ। দড়িলাফও হতে পারে দারুণ ব্যায়াম। শিশুদের নিয়ে খানিক দৌড়ঝাঁপের খেলায় মেতে উঠতে পারেন বিকেলে। নিজেদের ও শিশুদের জন্য সাইকেল কিনতে পারেন। এককালীন এই বিনিয়োগে আপনার যাতায়াতের খরচ অনেকটা কমবে। বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে গণপরিবহন ব্যবহার করুন। সুস্থতা নিশ্চিত করলে চিকিৎসক বা ওষুধের পেছনেও আপনার খরচ কমবে।
৩. হিসাব করে খরচ
প্রতি মাসে কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে, হিসাব রাখুন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে আপনি খরচের একটা ধারণা পাবেন। টুকিটাকি খরচ কমান। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় একেবারেই বাদ দিয়ে দিন। শখের খরচও কমাতে হবে। যে খরচটা না করলেও জীবন দিব্যি চলে যাচ্ছে, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনুন। কিছু টাকা জমিয়ে রাখার সংকল্প করুন। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নিতে গিয়ে অনেকে বাড়তি খরচ করে ফেলেন। তাই ভেবে দেখুন, এমন সেবা আপনি নেবেন কি না। নতুন পোশাক কিনবেন? তার আগে পুরোনো পোশাকের নকশায় ও ধরনে খানিক বদল আনতে পারেন। সৌন্দর্যচর্চার কিছু কাজ বাড়িতেই করে নিতে পারেন।
৪. খাবারদাবার
খরচ কমাতে না খেয়ে থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়; বরং জানতে হবে খাবারের পুষ্টিগুণ। সাশ্রয়ী খাবারে কীভাবে রোজকার পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়, জানতে চেষ্টা করুন। একই উপকরণ দিয়েও বাহারি পদ তৈরি করতে পারেন। সুপারশপে আরাম করে বাজার করার চাইতে একটু কষ্ট করে কাঁচাবাজারে যান। বাইরে কফি খেতে যাবেন? দরকার নেই। বাড়িতে কফি বানান ও বাইরের খোলামেলা পরিবেশে ঘুরে আসুন। রেস্তোরাঁর খরচ বাঁচান। বন্ধুদের নিয়ে বাইরে খেতে যাবেন? না, বরং বাড়িতেই তাঁদের নেমন্তন্ন করুন। কম খরচে খাওয়ানো হয়ে যাবে। নিমন্ত্রণ মানেই দশ রকম পদ, সেই ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসুন। প্রত্যেকে একেক পদ আনবেন, এমন আয়োজনও করতে পারেন। অফিসেও খাবার নিয়ে যান বাড়ি থেকেই।
৫. বিনোদন ও সামাজিকতা
বিনোদনের জন্য এমন আনন্দময় কাজ করুন, যাতে খরচ কম। বন্ধুরা মিলে বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে। এক বন্ধুর বই দশজন পড়তে পারবেন। সামনে আসছে একুশে বইমেলা। বন্ধুরা মিলে কী কী বই পড়তে চান, তার তালিকা করে ফেলুন। ভাগে ভাগে কিনে নিন বই। উৎসব-আয়োজনে কাউকে উপহার দিতে হলে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারেন কিংবা অন্যদের সঙ্গে মিলে উপহার কিনতে পারেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট