একই আসবাব যখন দুই–তিনটি কাজ করে
একটি আসবাবেই যদি মেটে দুটোর চাহিদা, তাহলে ঘরে বাড়তি আসবাবের পাশাপাশি বাড়তি জায়গারও আর দরকার হয় না। বাড়তি খরচের চিন্তায়ও পড়তে হবে না। জায়গা কমাতে অনেকে আবার ভারী আসবাবের বদলে হালকা–পাতলা খোঁজেন। এই দুই ধরনের আসবাব নিয়েই লিখেছেন ইসফাকুল কবির
স্বর্ণালংকার থেকে শুরু করে পোশাকে যেমন এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তেমনি আসবাবেও লেগেছে সেই ছোঁয়া। তাই ক্রেতাদের এখন বিশেষ পছন্দ আধুনিক ধারার মাল্টিপারপাস ফার্নিচার বা বহুমুখী আসবাব। বিশেষ করে ছোট ফ্ল্যাটে বাস করা পরিবারগুলো এমন আসবাব খোঁজেন, যাতে জায়গা কম আবার দেখতে আধুনিক। আপনার বাসার জন্য কেনা সোফা একই সঙ্গে মেটাবে খাটের চাহিদাও। গেস্টরুমে এই আসবাব যেমন কার্যকর, তেমনি বাঁচাবে জায়গা। বর্তমান জীবনযাপনকে মাথায় রেখেই আসবাব নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এমন নানা উদ্ভাবনী চিন্তাকে উৎসাহিত করছে।
ঘর গোছানো একটি আর্ট, তাই ছোট বা মাঝারি আকারের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির আসবাবের দিকে ঝুঁকছেন। যে ধরনের আসবাবগুলো ঘরের খুব বেশি জায়গা দখল করবে না।
শুরুতে এসব পণ্যের দাম শুনে মনে হতে পারে কিছুটা বেশি। তবে হিসাব করলে দেখা যাবে, আলাদা করে একটি ডাইনিং টেবিল ও পড়ার টেবিল কিনতে লেগে যেত ৭০ হাজার টাকা, সেটাই এখন এক আসবাবে ৪৫ থেকে ৫০ হাজারে সেরে ফেলা যাচ্ছে। আসবাব প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পারটেক্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সোহান আঁকন বলেন, ‘একাধিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পণ্যগুলোর দাম অনেকের কাছে কিছুটা বেশি মনে হয়। তাই যাঁরা একটা পণ্য কিনতে দোকানে যান, তাঁরা মাল্টিপারপাস আসবাব এড়িয়ে চলেন।’
বাজারে একাধিক প্রতিষ্ঠান এনেছে ‘মাল্টিপারপাস সোফা’। যে সোফা বসার পাশাপাশি ডাবল বেডের খাট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। অনেক ব্র্যান্ডে ডিভানকেও খাট হিসেবে ব্যবহারের সুবিধা আছে। লিভিংরুমে ব্যবহারের জন্য নিতে পারেন মডিউল সোফা, যেটি আপনার পছন্দমতো সাজাতে পারবেন। আপনার রুমের আকার অনুসারে কাস্টমাইজ করেও নেওয়া যাবে এসব আসবাব।
তিন–দুই–এক টাইপের সনাতন ধারার সোফা সেটের ধারণা এখন নেই। এক, দুই সিটেও এখন সোফা পাওয়া যায়। যাঁর বাসায় যেটুকু জায়গা বা যাঁর যে কয়টা প্রয়োজন, তা–ই কিনতে পারবেন তিনি। দেখতেও বেখাপ্পা মনে হয় না আজকাল।
এ ক্ষেত্রে হাতিলের স্টোরেজ সোফা হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। কারণ, এই সোফার ভেতরে ড্রয়ার বা বাক্স আকারে অন্য নানা জিনিসপত্র রাখার সুযোগ আছে। হাতিলে আছে ভিন্ন ধারার বাচ্চাদের পড়ার টেবিল, যা তার পড়া শেষে ঘুমানোর বেডে রূপান্তর করতে পারবেন।
বহুমুখী আসবাবের মধ্যে আরও আছে বেঞ্চ কাম মই, ড্রেসিং টেবিল কাম স্টোরেজ, দেয়ালের তাক কাম দোতলা খাট ইত্যাদি।
বাংলাদেশে হালে জনপ্রিয় হলেও বিদেশে কিন্তু গত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই তৈরি হচ্ছে মাল্টিপারপাস আসবাব।
বাংলাদেশে সাধারণ বাড়িতে আসবাবের খুব বেশি বাহুল্যই অবশ্য দেখা যেত না। বড়জোর এক বা দুটি বড় চৌকি পেতে বাড়ির মুরব্বিদের ঘুমানোর ব্যবস্থা, একটা মিটসেফ আর আলমারি। বেশির ভাগ বাড়িতে বসার জন্য পাটির চল ছিল। এটাও কিন্তু একধরনের মাল্টিপারপাস উপকরণ। যে পাটিতে খাওয়া হচ্ছে, একটু পর তাতে বসেই বাড়ির ছেলেপুলেরা লেখাপড়া করছে, সেখানেই আবার রাতে ঘুমানোর জন্য ঢালাও বিছানা পাতা হতো। অতিথি এলেও গ্রামে পাটি পেতে দেওয়ার চল ছিল।
চট্টগ্রামের একটি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতির শিক্ষক রেহনুমা খানম বলেন, ‘আর্থিক অবস্থার সঙ্গে বদলেছে মানুষের রুচি। সামর্থ্য যখন বাড়তে শুরু করে, মানুষের রুচিতেও আসে বদল। আসবাবও এর ব্যতিক্রম নয়। আগে যেমন ধনী বাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণ আসবাব দেখা যেত, এখন ধনীরা মিনিমালিস্টিক আসবাব খোঁজেন। একের ভেতর দুই কাজের আসবাবও তেমনি মানুষের প্রয়োজনের পাশাপাশি রুচির প্রকাশ।’
বর্তমানে দেশের বাজারে প্রচলিত আসবাবগুলো মূলত ইউরোপীয় ধারার। ডিজাইন খুব সাধারণ হলেও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। আধুনিক ফার্নিচারগুলোয় খুব বেশি কারুকাজের দেখা মেলে না, এগুলোর ওজন থাকে কম। তাই সহজেই স্থানান্তর করা যায়। শুধু বাসাবাড়িতেই না, করপোরেট জগতেও বেড়েছে এ ধরনের ফার্নিচারের চাহিদা।
আসবাবে বর্তমানে সাদা ও কফি কালার বেশি চলছে বলে জানালেন ঢাকার কাজীপাড়ার একাধিক ফার্নিচার বিক্রেতা।
কাদের জন্য বহুমুখী আসবাব
কিছু বিশেষ শ্রেণির মানুষকে টার্গেট করে তৈরি হয় বহুমুখী আসবাব। এর মধ্যে আছে নতুন সংসার শুরু করা দম্পতি, শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া ছোট পরিবার, ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ও সদ্য চাকরি পেয়ে নিজের বাসা গোছাতে শুরু করা ব্যাচেলর। অনেকেই ৮০০ থেকে ১ হাজার বর্গফুটের ছোট বাসায় থাকেন। এমন বাসায় থাকা পরিবারেরও দরকার হয় খাট, আলমারি, সোফা, খাবার টেবিল। তবে ছোট ঘরে এত কিছু আঁটানো কঠিন। তাই বহুমুখী আসবাব থাকলে সুবিধা।
পাতলা ও বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী আসবাব বানায় বেশ কিছু দেশীয় ব্র্যান্ড, এদের মধ্যে আছে হাতিল, আকতার, ব্রাদার্স, নাভানা, ডেলটা, নাবিলা, নিউ অথেনটিক, পারটেক্স, অটবি, নাদিয়া, ইশো, বহু, উড মার্কস, গ্রিন ফার্নিচার, উডি রিজন্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নন–ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা রকম বহুমুখী আসবাব তৈরি করে দেয়। কোনো পণ্য দেখিয়ে দিলে সেটার রেপ্লিকা বানিয়ে দেয় তারা।
দাম কেমন
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেডরুমের আসবাবের দাম ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১ লাখ টাকা।
২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় নিতে পারেন ওয়ার্ডরোব।
১০ হাজার থেকে ৫০ হাজারে কিনতে পারবেন ভালো অফিস চেয়ার।
৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় মিলবে সোফা কাম বেড।
৮০ হাজারের মধ্যে মিলবে দুই ধরনের ব্যবহারযোগ্য টেবিল।
৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারে মিলবে তাক থেকে বিছানা।
বর্তমানে ইএমআই-সুবিধা দিচ্ছে বিভিন্ন আসবাব ব্র্যান্ড। তাই খুব সহজেই ৩ থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে কোনো বাড়তি খরচ ছাড়াই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারবেন।