শবনম ফারিয়া যেভাবে নিজের বাড়ি সাজিয়েছেন
বাড়ির চারপাশের মুক্ত, প্রাণখোলা, খোলামেলাভাব বাড়িটির ভেতরেও প্রবেশ করেছে। প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দে সময় কাটাতে পারবেন, ছোট্ট নীড়টি সেভাবেই সাজিয়েছেন শবনম ফারিয়া।
শান্তিনগরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। কিন্তু স্নাতকোত্তরে ভর্তির পর থাকাটা কষ্টকর হয়ে উঠল। ক্যাম্পাস যে বসুন্ধরা! রাত সাড়ে ৯টায় ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাড়ে ১১টাও বেজে যায়। বেশির ভাগ শুটিংই আবার থাকে উত্তরা। শান্তিনগর–বসুন্ধরা– উত্তরা—ঢাকার এই তিন জায়গার দূরত্ব কিলোমিটারে বেশি না হলেও জ্যামের কারণে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়, কখনো কখনো সারাটা দিন রাস্তাতেই চলে যায়। এই ধকল আর নিতে পারছিলেন না। তাই বসুন্ধরায় বাড়ি ভাড়া করে থাকবেন কি না ভাবছিলেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হয়তো কঠিনই হতো, সহজ করে দিল একটা বাড়ির নিজস্ব এবং চারপাশের সৌন্দর্য।
বাড়িটার একদিকে ৩০০ ফিটের খোলা জায়গা। আরেক পাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। চারদিকে অন্য কোনো বাড়ি নেই। আলো আর বাতাস বাড়ির প্রতিটি কোনায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে যেন প্রতিযোগিতা করছে। এ রকম জায়গায় বাড়ি পেলে কে না থাকতে চাইবে!
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই নতুন বাসায় ওঠেন শবনম ফারিয়া। ১ হাজার ৫৫০ বর্গফুটের এই বাড়িতে আছে তিনটি শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর আর বারান্দা। এই বাড়িটি বেছে নেওয়ার আরেকটা কারণ এই বারান্দা। এখানে বসলে ৩০০ ফুটের দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। রাতের বেলা বারান্দার মেঝেতে লুটোপুটি খায় চাঁদের আলো। গাছ শবনম ফারিয়ার অসম্ভব প্রিয়। এমনও হয়েছে বাইরে বের হওয়ার তাড়া, তারপরও গাছে পানি দিতে গিয়ে সময়মতো বের হতে পারেননি। বারান্দা এখন ভরে গেছে গাছে। বারান্দায় গেলেই বাতাসের সঙ্গে ঝাপটা দেয় মাধবীলতার সুগন্ধ।
নতুন বাড়িতে একা থাকতে পারবেন কি না, ওঠার আগেও এ নিয়ে দ্বিধা ছিল। জানালেন, একা থাকাটা খুব কঠিন। মা আমাকে সাহস দিয়েছেন, মাঝে মাঝে এখন ঘুরে যান। ধীরে ধীরে মনের মতো করে সাজিয়েছেন নিজের ছোট নীড়। চা ছাঁকার ছাঁকনি থেকে শুরু করে বসার ঘরের চেয়ার সবই কিনেছেন সময় নিয়ে, একটা–দুটো করে। বাড়ি খোঁজা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, গোছানো পুরোটা সময় শবনম ফারিয়ার সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ। পুরোনো এবং নতুন—দুই ধরনের আসবাবই রেখেছেন শবনম ফারিয়া। তবে পুরোনো দিনের আসবাবের দিকেই তাঁর ঝোঁক। সাবেকি নকশাতেই খুঁজে পান শান্তি। আগের দিনের নকশা খোদাই করা আসবাবের সৌন্দর্যই আলাদা, বলেন শবনম ফারিয়া। গুলশানের ডিসিসি মার্কেট থেকে কিনেছেন এ ধরনের বেশ কিছু আসবাব।
বসার ঘর থেকে শুরু করি। এ ঘরের আসবাবের রঙে কালোর প্রাধান্য আছে। শবনম ফারিয়ার এটি পছন্দের রং। আরেকটি কারণ, পুরোনো দিনের আসবাবের রংও কালো। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। এ ঘরের আসবাবের নকশা অবশ্য আধুনিক। পুরোনো দিনের চেয়ার দিয়েই ঘরটি সাজানোর ইচ্ছা ছিল। দামে বনিবনা না হওয়ায় মন ঘোরাতে হয়েছে। বাড়ির দেয়ালে বা বিভিন্ন জায়গায় সাজানো আছে শোপিস আর মুখোশ। বিভিন্ন সময় যখন দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়েছেন, কিনে এনেছেন। প্রতিটি জিনিসই যেন সে দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে, কেনার সময় সেটি মাথায় রেখেছিলেন। এগুলো সব যে এই বাড়ির জন্য কেনা, তেমনটাও নয়। এমন অনেক কিছু আছে, যখন বিদ্যালয়ে পড়তেন, তখন কিনেছিলেন। জানালেন, বাক্সে ভরে বিছানার নিচে রেখে দিতাম। বাসায় ফ্রিজে লাগানোর যে ম্যাগনেটগুলো আছে, অনেকগুলোর আঠা খুলে গিয়েছিল। সেগুলো আবার ঠিকঠাক করে নিয়ে লাগিয়ে নিয়েছেন নিজের বাড়ির ফ্রিজের দরজায়।
খাবার ঘরের টেবিলের সঙ্গী দুটি চেয়ার একটি বেঞ্চ। একটি মরা গাছের কাঠ দিয়ে টেবিল এবং বেঞ্চটি বানানো হয়েছে, জানালেন শবনম ফারিয়া। কাঠের অবয়ব যেন পুরোপুরিভাবে ফুটে ওঠে, সেদিকটায় খেয়াল রেখেছেন তিনি। টেবিল এবং বেঞ্চের দুই পাশে কিছুটা এবড়োখেবড়ো ভাব আছে, যেমনটি কাঠে থাকে। খাবার ঘরে ফ্রিজের ঠিক পাশেই আছে পুরোনো ভারী নকশার আলমারি। যেখানে সাজিয়ে রাখেন বাসন, প্লেট ছাড়াও নানা ধরনের অনুষঙ্গ।
বাকি তিন ঘরের একটিকে বানিয়েছেন নিজের শোবার ঘর। বিছানাটি আধুনিক নকশার হলেও ড্রেসিং টেবিলটি একদম সেকালের জমকালো নকশার। এই আসবাবটি খুব পছন্দের একজন মানুষ উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বাকি দুটো ঘরের একটি নাটকের পোশাকে বোঝাই। আরেকটি ঘরে পড়ার টেবিল, ট্রেডমিল এবং শু র্যাক। তাতে সাজানো ১০০ জোড়া জুতা।
আসবাব দিয়ে বাড়ির আনাচকানাচ ভরে তুলতে চাননি শবনম ফারিয়া। গুরুগম্ভীর নয় বরং সব জায়গায় সহজাত একটা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। রাখতে চেয়েছেন খোলামেলাভাব। বাড়ির চারপাশের মুক্ত, প্রাণখোলা, খোলামেলাভাব বাড়িটির ভেতরেও প্রবেশ করেছে। প্রিয়জনদের নিয়ে সময় কাটিয়ে আরাম বোধ করবেন, ছোট্ট নীড়টি সেভাবেই সাজিয়েছেন শবনম ফারিয়া।