বাড়ির ছাদে যেভাবে শীতের সবজি চাষ করবেন
বাজারের আশায় বসে না থেকে অনেকেই বাড়ির ছাদে বা আশপাশে সবজির চাষ করছেন। তাতেই মিটে যাচ্ছে পরিবারের চাহিদা। অনেকে আবার স্বজনদেরও কিছুটা পাঠাচ্ছেন। চাইলে আপনিও ছাদ বা ছোট্ট বারান্দায় করতে পারেন সবজির চাষ। কীভাবে শুরু করবেন, ধারণা পাবেন দুজন শহুরে বাগানির কাছে।
কী নেই এই ছাদেপেশায় ব্যাংকার ও লেখক ফখরুল আবেদীন তাঁর ধানমন্ডির বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন হরেক রকম ফল-ফসলের ছাদবাগান।
বর্তমানে তাঁর বাগানে আছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির শাক–সবজি। শীতকালীন শাক-সবজির মধ্যে আছে লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম, শর্ষে, টমেটো, মুলা, পালংশাক, লাল শাক, ধনিয়াপাতা, গাজর, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম, শিমলা মরিচ, লেটুসপাতা, আলু, বেগুন, পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা কিছু।
শুরুতে বাগান যখন ছোট ছিল, তখন নার্সারি থেকেই সরাসরি চারা কিনে আনতেন। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেই বীজ থেকে চারা করেন। এই সময়ে বীজ থেকে করা চারার মধ্যে আছে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, গাজর, মুলা, পালংশাক, লালশাক, ধনিয়াপাতা।
সরাসরি চারা লাগিয়ে ফলাচ্ছেন ক্যাপসিকাম, শিমলা মরিচ, কাঁচামরিচ, লাউ, শিম, করলা, বেগুন ইত্যাদি। ফখরুল আবেদিন বলেন, ‘প্রতিদিন কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখি বাগানের কাজে। দারুণ সময় কাটে, সঙ্গে নিজের হাতে ফলানো সবজি খেতে পারি। এখন তো বাগানের কাজটা নেশার মতো হয়ে গেছে।’
প্রতিদিন সকালে রুটিন করে বাগানে পানি দেন। গাছের খাবার হিসাবে প্রধানত জৈবসারই ব্যবহার করেন। এর বাইরে প্রয়োজন পড়লে অল্পমাত্রায় ডিএপি, পটাশ ব্যবহার করেন। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোর বেশির ভাগ সময় ছাদেই কাটে ফখরুলের। একজন মালিও রেখেছেন, সপ্তাহে দুদিন এসে বাগানের কাজে তাঁকে সাহায্য করেন। শাক–সবজির রোগবালাই প্রসঙ্গে এই শহুরে চাষি বলেন, নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখলে রোগবালাইয়ের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।
স্বল্পমাত্রায় আক্রমণ করলে প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন। যদি আক্রমণের মাত্রা তীব্র হয় এবং বাগানের অন্যান্য গাছেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করেন। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখেন পরবর্তী ১৪ দিন কেউ যেন সেই সবজি না খায়। রাসায়নিক কীটনাশকের বিষক্রিয়া নিষ্ক্রিয় হতে এতটুকু সময় ছাড় দিতেই হয়।একসঙ্গে পাঁচ কেজি টমেটোও তুলেছেন সালমা খানম।
কানাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নারায়ণগঞ্জ সদরের লালপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। সাড়ে চার শতাংশ জায়গায় দাঁড়ানো দোতলা বাড়ির ছাদের পুরোটাই ছাদবাগান। শুরুটা করেছিলেন ২০১৬ সালে। সালমা খানম জানান, ‘হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য উপাদান দিয়ে বাগান করাই আমার মূল লক্ষ্য। চাকরি আর পরিবার সামলে সময় বাঁচিয়ে একা বাগান করি, তাই একটু ধীরগতিতেই এগোতে হচ্ছে।’
এই শিক্ষকের বাগানে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে আছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, বিট, স্কোয়াশ, আলু, পেঁয়াজ, লালশাক, মুলা, পালংশাক। ফলের মধ্যে কুল, পেঁপে ও পেয়ারা। বীজ থেকে যেমন চারা করেন, আবার সরাসরি চারাও কিনে আনেন। প্রতি মঙ্গলবার ফতুল্লা বাজারের হাটে খুব ভালো মানের সবজির বীজ ও চারা পাওয়া যায়, সেখান থেকে কেনেন বীজ ও চারা। সবজি চাষের মাটি তৈরির বেলায় সালমা খুব যত্নবান। জানালেন, একভাগ মাটি, এক ভাগ গোবর সার, একভাগ বাগানের পচা পাতা, একভাগ কিচেন কম্পোস্ট—এই অনুপাতে সবজি চাষের মাটি তৈরি করেন। এই মাটি থেকেই তার সব খাদ্য উপাদান খুঁজে পায় গাছ। গাছ বড় হতে থাকলে দু-তিনবার অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন।
তবে এই শিক্ষক জোর দিলেন তরল জৈব সারের ওপর। আলাদা পাত্রে সব সময় জৈব তরল সার তৈরি করা থাকে। একটা পাত্রে সবজির খোসা, অন্য পাত্রে ফলের খোসা, আরেক পাত্রে শর্ষের খৈল সব সময় পচানো থাকে। এগুলো গাছের প্রয়োজন বুঝে ৭-১০ দিনের মধ্যে গাছে প্রয়োগ করেন।
এ ছাড়াও প্রতিদিনের মাছ ধোয়া, চাল–ডালের ধোয়া পানি, ভাতের মাড়—কোনটাই ফেলেন না। সবই টবে দেন গাছের খাবার হিসেবে। হাড় গুঁড়া, শিং কুচি, নিমের খৈল, ভার্মি কম্পোস্ট অতি উচ্চমূল্যের সার। তাই এগুলো ছাড়া কিংবা কম প্রয়োগ করে কীভাবে বাগান করা যায়, সে চেষ্টা করেন। বাগানের পচনশীল কোনো কিছুই তাই না ফেলে সার বানিয়ে নেন। এভাবে সার তৈরি করে নিতে পারলে বাগান করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়, মনে করেন সালমা খানম।
সালমা খানমের বাগান থেকে এখন দুই–তিন কেজি বেগুনও তুলতে পারেন একসঙ্গে। টমেটো এক দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পর্যন্ত তুলেছেন। ফুলকপি গত বছর প্রায় প্রতিদিন তুলতে হয়েছে। প্রতিদিন একই সবজি খাওয়ার রুচি সবার থাকে না। তাই কাছাকাছি আত্মীয়স্বজন না থাকায় বাসার ভাড়াটে ও সহকর্মীদের উপহার পাঠান। সারা বছর ছাদবাগানের শাকসবজিতেই চলে যায় সালমার রান্নাবান্না।