ঘর ও আসবাবে কেমন রং ব্যবহার করবেন

একটি পছন্দসই ভাবনাকে কেন্দ্র করে বাছাই করতে পারেন আসবাবের রং। মডেল: নাবিলা
ছবি: কবির হোসেন

আসবাবের রঙের সঙ্গে অন্দরের অনেক বিষয়ই জড়িয়ে থাকে। ঘরের আকার, ধরন ও দেয়ালের রং যেমন বিবেচনার বিষয়, তেমনি ঘরে ঠিক কেমন অনুভূতি পেতে চান, সেটিও মাথায় রাখা প্রয়োজন। অন্দরের সার্বিক রং নির্বাচনের ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকলেও অন্দরকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে চাইলে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়। একটা ঘরের জন্য একই রঙের বিভিন্ন শেডকে কাজে লাগাতে পারেন। আবার রঙের বৈপরীত্যও রাখতে পারেন। এ রকম যেকোনো একটি পছন্দসই ভাবনাকে কেন্দ্র
করে বাছাই করতে পারেন আসবাবের রং। আসবাব কেনার সময় পুরো ঘরের বর্তমান রঙের বিন্যাস খেয়াল রাখা ভালো।

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান অন্দরসজ্জাবিদ গুলশান নাসরীন চৌধুরী বলছিলেন, ছোট বা মাঝারি ঘরকে একটু বড় দেখাতে হালকা রং বেছে নিতে হবে। দেয়ালে থাকতে পারে চাঁপা সাদার ব্যবহার, আসবাব হতে পারে একটু উজ্জ্বল রঙের।

আসবাবের জন্য কাঠের রং বা তেঁতুলবীজের রং বেছে নিতে পারেন। মৌসুম বদলের সঙ্গে বদলে ফেলতে পারেন আসবাবের অন্যান্য অনুষঙ্গের রং। এই যেমন কুশনকভার, টেবিলক্লথ, বিছানার চাদর প্রভৃতির রং বদলাতে পারেন। বদলানো যায় পর্দাও। তাতে অন্দরে আসবে ভিন্ন রূপ। উৎসব-আয়োজনে এভাবেই সৃষ্টি হতে পারে বৈচিত্র্য। তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক, আসবাবের রং বাছাইয়ের আরও নানা দিক।

আয়না হতে পারে গাঢ় রঙের
ছবি: সুমন ইউসুফ

আসবাবের রঙে ছন্দ

একটা ঘরে খাট, সোফা, টেবিল, শোকেস, ওয়াল কেবিনেট—যা কিছুই থাকুক না কেন, সেগুলোর রঙের মধ্যে একটি ছন্দ, অর্থাৎ সামঞ্জস্য রাখতে হবে। একেকটি আসবাবের জন্য একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন রং বেছে নেওয়া ঠিক নয়। কোনো আসবাবের রং একটু ভিন্ন ধরনের হলে অন্যান্য আসবাবের নানা অনুষঙ্গে সেই রং যোগ করে নিতে পারেন। তাহলে ছন্দপতন হবে না। আবার বিভিন্ন ঘরের জন্য বিভিন্ন রঙের আসবাব বাছাই করলেও কিন্তু সব ক্ষেত্রে ভালো দেখায় না। সব ঘরের আসবাবের রঙের মধ্যেও একটা ছন্দ রাখা ভালো। তবে শিশুর রঙিন ঘরে বাহারি রঙের ব্যবহার হতে পারে। লাল, গোলাপি, নীল—নানা রঙের আসবাবই থাকতে পারে।

 খেয়াল রাখুন আলোর প্রতি

ঘরের ভেতর কতটা আলো আসে, সেটিও বিবেচনায় রাখুন। আজকাল অনেক ফ্ল্যাটবাড়িতেই আলো ঢোকার খুব একটা সুযোগ থাকে না। প্রায় লাগোয়া বাড়িগুলোর অন্দরের গোপনীয়তা বজায় রাখতে টেনে রাখা হয় পর্দা। এমন ক্ষেত্রে আসবাব ও দেয়ালের রং হালকা রাখাই ভালো। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ঢোকার সুযোগ থাকলে একটা দেয়াল রঙিন করে নিতে পারেন, আসবাবেও থাকতে পারে সেই রঙেরই পরশ।

আসবাবের রঙের মধ্যে একটা ছন্দ রাখা ভালো
ছবি: কবির হোসেন

যেমন অনুভব চাই

ঘরে আপনি আয়েশি অনুভব চান, নাকি প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার অনুভূতি চান—রঙের বিন্যাসের সময় সেটিও খেয়াল রাখুন। শোবার ঘরে কাঠ রঙের আসবাব রাখতে পারেন, দেয়াল হতে পারে চাঁপা সাদা; দেয়াল সি গ্রিন থাকলে আসবাব হতে পারে সাদা। শোবার ঘরের একটা দেয়ালে প্রশান্তিদায়ক ওয়ালপেপার থাকলে বিছানার চাদরের জন্য ওয়ালপেপারের রংটিকেই বেছে নিতে পারেন। তবে লাল রঙের উদ্দীপনা অবশ্য এ ঘরের জন্য নয়। আবার কফি রঙের মতো রং প্রাধান্য পেলে যেকোনো ঘরই খানিকটা অন্ধকার দেখায়। কাজের ঘরের ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ একটি বড় বিষয়। এ ঘরের দেয়াল হতে পারে সাদা; চেয়ার হতে পারে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে।

চেয়ার কালো হলেও টেবিলের রং হতে পারে সাদা কিংবা কাঠ রঙের। হালকা রঙের টেবিলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছড়িয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে। এই ঘরের এক পাশে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ডিভান রাখতে হতে পারে। এর রং হিসেবে বেছে নিতে পারেন সাদা, তবে ওপরটা হতে পারে হালকা, প্রশান্তিদায়ক সবুজ। এক পাশের দেয়ালে গাছপালা রাখতে পারেন, সবুজ প্রকৃতির দৃশ্যসংবলিত ওয়ালপেপারও আটকে দিতে পারেন এক পাশের দেয়ালে।

 ঘর যদি হয় বড়

বড় ঘরের রঙের বিন্যাস ঠিক না হলে ঘরটাকে মনে হয় ফাঁকা। তাই গাঢ় রঙের আসবাব বেছে নিন। তিনটি দেয়াল হালকা শেডের হলেও একটিতে রাখুন গাঢ় শেডের ব্যবহার। নীল, হলুদ বা বাদামির নানা শেড কাজে লাগাতে পারেন। বড় ঘরের মেঝে ফাঁকা রাখবেন না। কিছু একটা বিছিয়ে দিন।