এই সময়ে বাড়ির ধুলাবালু কমাবেন যেভাবে

জানালার পাশে বসার সুন্দর ব্যবস্থাছবি: কবির হোসেন

ঘরের বাইরে ধুলা এড়াতে অনেকেই মাস্ক পরেন। কিন্তু নিজের ঘরের ধুলা তাড়াতে কী করছেন! প্রতিদিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্রেই থেকে যাচ্ছে ধুলার আস্তরণ। যা বাড়িয়ে দেয় ডাস্ট অ্যালার্জির মতো সমস্যা। এ সময়ের আবহাওয়ার কারণেই অনেক সময় ধুলা জমে ঘরে–বাইরে। তাই ঘর পুরোপুরি ধুলামুক্ত করতে না পারলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় আছে।

গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত জানালেন, ঘরের ধুলা আসলে অনেক জিনিসের মিশ্রণ। এর মধ্যে আছে আদ্রর্তা, সুতার আঁশ, মানব ত্বকের মৃত কোষ, প্রাণীর লোম, জীবাণু, ছত্রাক, খাদ্যকণাসহ আরও অনেক পরিত্যক্ত ক্ষুদ্র জিনিস। এর মধ্যে প্রাণীর লোম, তেলাপোকা ও জীবাণু হচ্ছে বিপজ্জনক। এগুলোর যেকোনোটির কারণে ভুগতে পারেন অ্যালার্জি সমস্যায়। তাই ধুলা এড়াতে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।

ঘরের ধুলাবালু

‘ঘরের ধুলাবালু ঝাড়তে অনেকেই পালকের তৈরি ডাস্টার ব্যবহার করেন। এসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ধুলাবালু দূর করতে নরম ও পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে হবে হালকা ভিজিয়ে নিয়ে। এতে ধুলাবালু ভেজা কাপড়ে আটকে যাবে, চারদিকে ছড়াবে না,’ মনে করেন অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত। প্রাকৃতিক কিছু জীবাণুনাশক যেমন নিমপাতার রস বা লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে ঘর পরিষ্কার করা যায়। এভাবে পরিষ্কার করলে ধুলায় থাকা জীবাণু মরে যাবে।

ক্লজেটের পরিবর্তে

ক্লজেট বা আলমারিতে থাকা তোয়ালে, বিছানার চাদরসহ অন্যান্য কাপড়ে ধুলা জমে বেশি। যা সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না। এ কারণে ক্লজেটের পরিবর্তে কনটেইনার অথবা মজবুত বাক্স রাখতে পারেন। কাপড়কে ময়লামুক্ত রাখার আদর্শ উপায় হলো চেইনের ব্যাগে রাখা। এতে করে কাপড়ের ধুলা থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকা যাবে।

বিছানার চাদরে এক সপ্তাহ পর বদলে ফেলুন
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

বিছানার চাদর বদলান

বাসা ধুলামুক্ত রাখতে এটি খুবই কার্যকর উপায়। বিছানার চাদরের তন্তু তুলনামূলক ভারী ও মোটা হয়ে থাকে। ফলে এতে বাইরের ধুলাবালি বেশি আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়া শরীরের মরা চামড়া, চুলও লেগে থাকে বিছানার চাদরে। নিয়মিত বিছানা ঝাড়া হলেও সাত দিন পরপর অবশ্যই চাদর বদলে নিতে হবে। নয়তো এই বিছানার চাদরই হয়ে যাবে ধুলার রাজ্য। বিছানার চাদরের সঙ্গে বালিশ-কোলবালিশের কাভারও বদলে নিতে হবে। সোফার কাভার বদলাতে না পারলেও কুশনের কাভার বদলানোর চেষ্টা করুন। মশারি প্রতিদিন খুলে ভাঁজ করে কাভারের ভেতরে রাখা উচিত।

সাধারণত ধুলা বেশি জমে শোবারঘরে। শোবারঘরে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। বালিশে ফোম বা তুলা ব্যবহার করলে বেশি ধুলা টানে। তাই সিনথেটিক উপাদানের বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। সম্ভব হলে বেডরুমে এয়ারকন্ডিশনার ও আদ্রর্তারোধক যন্ত্র ব্যবহার করুন। আদ্রর্তা কম থাকলে জীবাণু ও তেলাপোকার বংশবিস্তার কম হবে।

নিয়মিত পরিষ্কার করুন

কার্পেট, পাপোশ, শতরঞ্জি ও দরজা-জানালার পর্দা ধুলাবালু শোষণ করে। নিয়মিত পরিষ্কার ও ভ্যাকুয়াম করা না হলে এগুলো থেকে ধুলা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ঘরে না থাকলে সপ্তাহে অন্তত একবার পাপোশ, পর্দা ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে এই উপকরণগুলো খুব বেশি ধুলা শোষণ করতে পারবে না।

আসবাবের পরিচর্যা

ধুলামুক্ত থাকতে নিয়মিত আসবাব পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে পুরোনো এবং অব্যবহৃত আসবাব সরিয়ে ফেলুন। আসবাব কম হলে আপনার ঘর আরও প্রশস্ত দেখাবে, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করাও সহজ হবে। বেশি নকশা করা আসবাবে ধুলাবালু বেশি জমে। তাই ঘরের জন্য এমন আসবাব বাছাই করতে চেষ্টা করুন, যাতে ধুলা পড়লে সহজে মুছে ফেলা যায়। আসবাবে খাঁজ থাকলে সেখানকার ধুলা ব্রাশ দিয়ে তুলে আনার চেষ্টা করুন।

মেঝে পরিস্কার করুন নিয়মিত

মেঝের ধুলা

এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বেশি ধুলাযুক্ত বাড়ি হলে প্রয়োজনে ঘন ঘন ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, ধুলার জীবাণু বেশিক্ষণ বাতাসে থাকতে পারে না। তাই মেঝে ও দেয়াল পরিষ্কারের দিকেই আপনাকে বেশি নজর দিতে হবে।

এ ছাড়া

জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করুন, এতে বাইরে থেকে আসা ধুলা পর্দা শুষে নেবে। তাহলে পর্দাটা নিয়মিত ধুয়ে নিলেই হবে। এতে হালকা বাতাসে উড়ে গিয়ে ঘরে ধুলা ছড়াবে না। ঘরে ঢোকার পথে ভারী ডোর ম্যাট রাখতে পারেন। এগুলো বেশি পরিমাণে ধুলা শোষণ করতে পারে। বাইরের ধুলা ঘরে ঢোকার পথেও বাধা দেয়। যাঁদের ডাস্ট এলার্জি আছে, তারা এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ঘর থাকবে শতভাগ ধুলামুক্ত। রাস্তার পাশের দরজা–জানালা বন্ধ রাখলে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব। সম্ভব হলে জুতার বাক্স সদর দরজার বাইরে রাখুন। ঘরে কোনো মৃত প্রাণী বা প্রাণীর অংশ থাকলে দ্রুত বাইরে ফেলে দিন। শোবারঘরে পোষা প্রাণী না ঢোকানোই ভালো। মেঝে মোছার সময় স্যাঁতসেঁতে ও তৈলাক্ত কাপড় ব্যবহার করবেন না। ঘর পরিষ্কারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।

আরও পড়ুন